প্রতিবাদে সকল-ক্লাস পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট সদস্য ড. একেএম শফিকুল ইসলামকে কুপিয়ে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শনিবার বিকেল ৩টার দিকে র্যাব ৫’র সদর দপ্তরের অদূরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা বিহাসের গেটে দুর্বৃত্তরা এ খুনের ঘটনা ঘটায়। নিহত শফিউল ইসলামের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায়। তার একমাত্র ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে পড়াশোনা করেন বলে জানা গেছে। এদিকে এ খুনের ঘটনায় প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল-ক্লাস পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ২ ঘণ্টা প্রধান ফটকে সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
পারিবারিক ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ শেষ করে বিহাসের নিজ বাসভবনে মোটরসাইকেলযোগে ফিরছিলেন অধ্যাপক ইসলাম। তিনি বিহাসের প্রধান ফটকের পাশে পৌঁছুলে কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। এ অবস্থায় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় ওই এলাকাটি মোটামুটি ফাঁকা ছিলো। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করায়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নেয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
রামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মমতাজ জানান, শফিউল ইসলামের মাথা, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গভীর জখম ছিলো। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক জানান, সাড়ে তিনটার দিকে আহত অধ্যাপককে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। এরপর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)-এ নেয়া নয়। কিন্তু সাধ্যমতো চেষ্টা করেও কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি। সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি মারা যান।
এদিকে ঘটনার খবর শুনে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মিজানউদ্দিন, প্রো-ভিসি চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় ভিসি অধ্যাপক মিজানউদ্দিন জানান, তারা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে যা যা করা প্রয়োজন তা করবেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. কামরুল হাসান মজুমদার বলেন, নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ রোববার শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে দিনব্যাপি কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করা হবে।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক থেকে শফিউল ইসলামের বাড়ির দূরুত্ব্ব প্রায় ১শ গজ। গতকাল শনিবার বাইরে থেকে সেখানে ফেরার পথে বাড়ির সামনে নির্জন জায়গায় কে বা কারা তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে রেখে যায়। পরে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার পিঠে কয়েকটি গুরুতর জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি চাপাতি ও তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে। খুনের কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে ছিনতাই ও পারিবারিক সম্পত্তির বিষয়টিকে সামনে রেখে পুলিশ এগোচ্ছে।
ওসি আরও জানান, তিনি একজন বাউলভক্ত ছিলেন। পারিবারিক কিছু ঝামেলাও রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। কারা তার ওপর হামলা চালিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। ব্যক্তি জীবনে তার ৩ স্ত্রী। প্রথমজন মারা গেছেন, তৃতীয়জনের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়েছে এবং দ্বিতীয় জনের এখনও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।