পা দিয়ে লিখে জীবন জয়ের স্বপ্ন পাপিয়ার

মহাসিন আলী/মাজেদুল হক মানিক: দু হাত অকেজো। সব কাজ চলে পা দিয়ে। দরিদ্রতা গোটা পরিবারকে গ্রাস করলেও প্রতিবন্ধী পাপিয়ার ইচ্ছা শক্তিকে দমাতে পারেনি। পা দিয়ে লিখে মেহেরপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা দিচ্ছে সে। হাত কাজ না করলেও পা দিয়ে লিখে লেখাপড়া শিখে জীবন জয় করতে চায় জেলার সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের এই শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়েটি।

মেহেরপুর জেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ঝাউবাড়িয়া গ্রামে পাপিয়ার বাড়ি। তার পিতা দিনমজুল পিয়ারুল ইসলাম। তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে পাপিয়া ছোট। তার বড় ভাই আরিফুল ডিগ্রি প্রথম বর্ষ, পাপিয়া ও তার বোন পপি ঝাউবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। বাবার সামান্য আয় দিয়ে সংসারই চলে না। বড় ভাই একটি মুদির দোকানের কর্মচারী। ওই অর্থ দিয়ে দু বোনের লেখাপাড়ার খরচে চলে। জন্ম থেকে পাপিয়ার দু হাত অকেজো। হাত দিয়ে কোনো কাজ করতে পারে না সে। লেখাপড়া, খাবারসহ সব কাজই চলে পা দিয়ে। জেএসসি পরীক্ষায় সকল ছাত্রছাত্রী স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষা দিলেও তাকে লিখতে হচ্ছে পা দিয়ে। পিএসসি পরীক্ষায় এ গ্রেড পেয়ে পাস করে সে। বড় হয়ে সে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক হতে চাই। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চাই অন্য প্রতিবন্ধীদের দিকে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাবার দারিদ্রতা। জেএসসি পীরক্ষার পর দু বোনের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছে তাদের পরিবার। এমনটিই জানালেন পাপিয়ার পিতা পিয়ারুল ইসলাম ও মা আরিফা খাতুন।

পায়ে লিখে পরীক্ষা এবং লেখাপাড়ার বিষয়টি এলাকায় বেশ আলোচিত। তবুও প্রতিবন্ধিতার সনদ মেলেনি পাপিয়ার। তার ভাই আরিফুল ইসলাম জানান, ২০০৮ সালে প্রতিবন্ধীর সার্টিফিকেট চেয়ে সমাজ সেবা অধিদপ্তরে আবেদন করেও কোনো সাড়া মেলেনি। বর্তমানে বই-খাতা কিনে দেয়ার মতো অর্থ এখন তাদের পরিবারের নেই। ফলে যে কোনো সময় তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এদিকে পাপিয়ার অদম্য ইচ্ছা পূরণে তার সহপাঠীরা বইসহ পোশাক পরানো, নোট সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। সহপাঠীদের বিশ্বাস পাপিয়া একদিন অনেক বড় হবে। মানুষ গড়ার কারিগর হবে। পাপিয়া প্রতিবন্ধী হলেও তার মেধা প্রখর। কিন্তু পরিবার অসচ্ছল হওয়ায় বিদ্যালয়ের বেতন, পরীক্ষার ফিস ও সেশন চার্জ মওকুফ করা হয়েছে বলে জানান ঝাউবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিয়ারুল ইসলাম। বোর্ড থেকে প্রতিবন্ধীদের জন্য পরীক্ষায় অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিবন্ধী পাপিয়া লেখা শেষ করে তার আগেই খাতা জমা দিয়ে দিচ্ছে বলে জানান মেহেরপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রসচিব মাসুদা খানম।