প্রতিবন্ধী ছেলেকে ভিক্ষুক বানাতে চান না পিতা

মুজিবনগরের প্রতিবন্ধী ফিরোজের জ্বালানি তেলে গতি পাচ্ছে ব্যস্ত মানুষ

 

মহাসিন আলী: নিজের চলার গতিতে প্রতিবন্ধকতা। নিজের গতি বৃদ্ধি করতে পারেনি বলে বসে থাকেনি কিশোর ফিরোজ হোসেন (১৭)। অদম্য ইচ্ছে শক্তির ওপর ভর করেই সে সমাজের ব্যস্ত মানুষের চলার গতি বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে চলেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী ফিরোজ হোসেন রাস্তার ধারে বসেছে জ্বালানি তেল নিয়ে। সপ্তার সাত দিনই মেহেরপুর-মুজিবনগর ব্যস্ত সড়কের পাশে মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী বাজারে বসে সে। প্রকাশ্যে ওভাবে দাহ্য পদার্থ বিক্রির বৈধতা? এ প্রশ্ন কখনোই করেনি কেউ, সে নিজেও বৈধতার যুক্তি খোঁজেনি, ভিক্ষাবৃত্তির চেয়ে রাস্তার পাশে বসে তেল বিক্রি করে পেট চালানো অনেক সম্মানের। সে সম্মান নিয়েই বাঁচতে চায় ফিরোজ।

মুজিবনগর যাওয়ার পথে মোটরসাইকেলে তেল নিতে মোনাখালী বাজারে থেমে এদিক ওদিক তাকাতে চোখ পড়লো তেলের দোকান। টেবিলের ওপর তেলভর্তি বোতল সাজানো। নিচে চেয়ারে বসে আছে এক কিশোর। কাছে গিয়ে তেল চাইতে লাঠিতে ভর দিয়ে এক লিটারের তেলের বোতল হাতে এগিয়ে এলো প্রতিবন্ধী কিশোরটি। ট্যাঙ্কিতে সুন্দর করে তেল ভরে দিলো সে। একশ টাকার নোট দিতে সে বাকি ৩/৪ টাকা ফেরত দিতে উদ্যত হলো। প্রতিবন্ধী ভেবে ওই টাকাটা ফেরত নিতে ইচ্ছা হলো না। এ ধরনের কাজ করতে দেখা গেলো অনেক তেল ক্রেতাকে।

কিশোরের নাম জিজ্ঞাসা করতে সে বাধাবাধা কণ্ঠে বললো- ফিরোজ। এতে আরো জানা গেলো, তার কথা বলতেও অসুবিধা হয়। প্রতিবন্ধী বলে কি সে ভিক্ষা করে খাবে? এমন ইচ্ছা তার যেমন নেই; তেমনি নেই তার দরিদ্র পিতাসহ পরিবারের কারো। তাই তো জ্বালানি তেলের বোতল সাজিয়ে বসেছে সে।

সাংবাদিকের উপস্থিতির কথা জেনে বাড়ি থেকে ছুটে এলেন ফিরোজের দরিদ্র পিতা খোকন। তিনি জানালেন, তার ৩ ছেলের মধ্যে বড় ফিরোজ হোসেন। জন্ম থেকে সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। ভালো করে কথা বলতে পারে না সে। তারপরও সে অনেক বুদ্ধিমান। লিখতে না পারলেও পরিচিতজনদের তেল ধারে দিয়েও ঠিকমতো টাকা নিতে পারে। ৩ বছর সে এখানে বসে তেল বিক্রি করছে। কোনো দিন ভুল হতে দেখিনি। হয়তো প্রতিবন্ধী হিসেবে কেউ তাকে ঠকায় না। আবার আশপাশে অনেকে থাকেন। তারা তাকে দেখে রাখেন।

পিতা খোকন আরো বললেন, তার বাড়ি মোনাখালী গ্রামেই। নিজের জমি-জায়গা নেই। তাই অন্যের জমিতে কাজ করে খাই। অনেক কষ্ট করে ৫ হাজার টাকা জোগাড় করে প্রতিবন্ধী ছেলে ফিরোজকে তেলের দোকান করে দিয়েছি। প্রতিদিন ভোরে তার দোকান সাজিয়ে দিয়ে যাই। আবার রাত ৮টার দিকে বাড়ি নিয়ে যাই। তিনি আরো জানান, পুঁজি বেশি থাকলে বেশি বেশি তেল রাখতে পারতো। ফিরোজ বেবি ট্যাক্সি, মাইক্রোবাসের তেলও দিতে পারতো। এতে তার লাভ আরো বেশি হতো। বর্তমান অবস্থায় দিনে তার একশ থেকে দেড়শ টাকা আয় হয়। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রতিবন্ধী হিসেবে ফিরোজ মাসে ৩শ টাকা করে প্রতিবদ্ধী ভাতা পায়। যা একজন মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য।