উৎসমুখ পলিতে ভরাট বুকে বাঁধ কোমর : ঝরনাধারায় বেঁচে থাকলেও হত্যার মহোৎসব

মাথাভাঙ্গা নদীর দিকে প্রশাসনের নজর কম : অসচেতনতার পাশাপাশি অসাধু মৎস্যশিকারীদের অপতৎপরতা

 

তাছির আহমেদ: মাথাভাঙ্গার উৎসমুখ পলিতে ভরাট। নিজের বুকের ঝরনাধারায় বেঁচে আছে মাথাভাঙ্গা। ধুঁকে ধুঁকে স্রোতধারা চললেও আমাদেরই কিছু ব্যক্তি তা রুদ্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। বাঁশের বাঁধ, অসংখ্য কোমর স্বাভাবিক গতিকে শুধু রুখছেই না, নদীটিকে মেরে ফেলতে বসেছে। যেন গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা। অথচ এসব হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তরফে তেমন পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না। বর্ষা মরসুম থেকে আবারও মাথাভাঙ্গা নদীর বুকে বাঁশের বাঁধ, কোমর দেয়ার দৃশ্য দেখে এলাকার সচেতন সমাজ এরকমই মন্তব্য করে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

মাথাভাঙ্গা নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরার রেওয়াজ বহুদিনের। তবে গত কয়েক বছর প্রশাসনের কড়া নজরদারির ফলে এ নদী থেকে নদী ভরাটের অন্যতম বাহক এ বাঁশের বাঁধ এখন লোকচক্ষুর আড়ালে। তারপরও এর বুকে চুয়াডাঙ্গার ইসলামপাড়ার কোলঘেঁষে গজানো হয়েছে ১টি বাঁধ। দামুড়হুদার এদিকে বর্ষার শেষেই একটি বাঁধ গজিয়ে বীরদর্পে দাঁড়িয়ে আছে এ উপজেলার পাটাচোরা স্কুলের নিচে। দামুড়হুদার বুকে একমাত্র অবস্থানের এ বাঁধটি ক্ষমতাধর গোষ্ঠীরা এমন স্থানে স্থাপন করে রেখেছে, যাতে কারো নজর সহজে না পড়ে।

নানা প্রতিবন্ধকতায় আজ মৃতপ্রায় চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী এ মাথাভাঙ্গা। চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীর গতি যেমন বিচিত্র, তেমনি রয়েছে এর তাৎপর্য। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া যায়, ১৮৭০ সালে এশিয়াটিক সোসাইটিকের কার্য বিবরণীতে ড. থমাস ওল্ড হ্যাম উল্লেখ করেন কীভাবে মাথাভাঙ্গা আবির্ভাব হয়। ভগিরথি ও ভৈরবের মধ্যবর্তী জায়গা কালক্রমে নদীবাহিত বালি-পলিমাটিতে ভরাট হওয়ার ফলে স্রোতের গতিমাত্রা কমে গিয়ে পদ্মা পূর্ব দিকে সরে যাওয়ার কারণে মাথাভাঙ্গার আবির্ভাব হয়। এ অঞ্চলের ভূমি দক্ষিণে নিচু হওয়ার কারণে এ নদীর তীর ঘেঁষে জনপদ গড়ে ওঠে। চুয়াডাঙ্গা জেলার এ মাথাভাঙ্গা নদী এখন পদ্মার দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা হলেও এর জন্মলগ্নে মাথাভাঙ্গাই ছিলো পদ্মার প্রধান শাখা।

এ মাথাভাঙ্গা কুষ্টিয়া হয়ে চুয়াডাঙ্গার বুক চিরে দামুড়হুদার দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে ভারতের নদীয়া জেলায় ঢুকেছে। দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পয়েন্টে ১৯৭১ সালেও মাথাভাঙ্গায় পানি প্রবাহের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিলো ১২ হাজার ৯শ কিউসেক। সেই উত্তাল মাথাভাঙ্গা এখন বহে ধীরে। মাথাভাঙ্গার দু পাড়ে বিভিন্ন ফসল ফলানো হচ্ছে, আর এক শ্রেণির সুবিধাভোগী স্বার্থান্বেষীরা এর বুকে কোমর-বাঁধ-জোংড়া দিয়ে মাছ ধরে তাকে মৃত্যুর দুয়ারে এগিয়ে দিচ্ছে।

দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. আইয়ুব আলীর নিকট গতকাল দুপুরে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মাথাভাঙ্গা নদীতে আবারও বাঁধ দেয়া হয়েছে, তা আমার জানা নেই, তবে কেউ যদি বাঁধ দিয়ে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a comment