আজ পবিত্র আশুরা

স্টাফ রিপোর্টার: আজ দশই মহররম পবিত্র আশুরা। আরবি সনের প্রথম মাস মহররমের দশ তারিখকেই আশুরা বলা হয় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।
আশুরা অর্থই দশ। আশুরা দিবস শুধু মুসলমানদের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। অন্যান্য আসমানি ধর্মগ্রন্থের অনুসারীদের কাছেও এ দিনটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। হাদিস গ্রন্থ ও প্রাচীন ইতিহাস অনুসারে মহররমের দশ তারিখে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঐশী ঘটনা ঘটেছে বলেই প্রধানত ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের কাছে আশুরার ধর্মীয় গুরুত্ব খুব বেশি। এ দিনটির পবিত্রতা ও গুরুত্ব প্রধানত এ কারণেই যে, বেহেশত থেকে পৃথিবীতে অস্থায়ীভাবে নির্বাসনে আসার পর এ দিনে হজরত আদম ও মা হাওয়া আলাইহিমুস সালামের তওবা আল্লাহপাক ক্ষমা করে দেন। এছাড়া প্রলয়ংকরী তুফান থেকে হজরত নূহের কিশতির নাজাত লাভ, নমরূদের আগুন থেকে হজরত ইব্রাহিমের মুক্তি, ফেরাউনের কবল থেকে হজরত মূসা ও বনি ইসরাইলের নাজাতসহ হজরত আইয়ুব, হজরত দাউদ, হজরত সুলায়মান ও হজরত ঈসা প্রমুখ উলুল আজম আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম আল্লাহপাকের বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করেন। এছাড়া এ দিবসে কিয়ামত হবে বলেও বর্ণনায় রয়েছে।

হাদিসে এসেছে হিজরতের পর রাসূলপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে লক্ষ্য করলেন সেখানকার ইহুদি জনগণ আশুরা দিবসে রোজাপালন ও ইবাদত বন্দেগি করছেন। বিষয়টিকে নবীজি খুবই পছন্দ করলেন এবং মুসলমানদের নফল হিসেবে তা পালনের উপদেশ দিলেন।

তবে মুসলিম উম্মাহর কাছে মহররম মাসের গুরুত্ব আরও শতগুণে বৃদ্ধি পায় হিজরি একষট্টি সনে বর্তমান ইরাকের কুফার নিকটবর্তী কারবালা প্রান্তরে নবীজির প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র এবং মা ফাতেমা ও হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমের পুত্র হজরত ইমাম হোসাইন ও তার বাহাত্তর জন সঙ্গী-সাথীর নির্মম শাহাদতবরণের পর। নবীজির ওফাত গ্রহণ ও খোলাফায়ে রাশেদার যুগ শেষ হওয়ার পর মুসলিম সমাজ বিভ্রান্ত ও বিপথগামী হয়ে পড়ে এবং নবীজির হাতে পরাজিত কাফের, মুশরেক ও মুনাফেক শক্তি নানা ছলচাতুরি ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নেয় ও গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে ন্যায়-ইনসাফপূর্ণ শান্তি ও সমৃদ্ধির ইসলামী সমাজকে পুনরায় জাহিলিয়াতের লুটপাট, বর্বরতা, সন্ত্রাস-যুদ্ধ ও দুর্নীতি-অনাচারের দিকে নিয়ে যায়। ইসলামের সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে তখন দুরাচারী এজিদের বংশীয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এমন অবস্থায় হজরত ইমাম হোসাইন সত্য ও ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। অবশেষে ৬১ হিজরি সনের দশই মহররম তথা আশুরার দিনে কারবালা প্রান্তরে নিজের পরিবার-পরিজন, সন্তান এবং সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে এক অসম যুদ্ধে এজিদ ও ইবনে জিয়াদের হাজার হাজার সৈন্যের হাতে শাহাদতবরণ করেন। ইমাম হোসাইন তার সন্তান ও সঙ্গীদের নিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও প্রতিবাদে যে মহান আদর্শ স্থাপন করেন তা ইসলামী উম্মাহর মাঝে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়। এরই ফলে উমাইয়াদের রাজতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে একে একে বিদ্রোহ দেখা দেয় এবং ওদের পতন ঘটে। কারবালায় ইমাম হোসাইন (রা.)-এর আদর্শ শ শ বছর যাবত ন্যায়-ইনসাফকামীদের অনুপ্রেরণা হয়ে এসেছে। আজ আশুরার এ পবিত্র দিনে আমরা কারবালার শহীদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।