গুলি করে মোষ হত্যা অসহায়ত্বেরই নগ্ন প্রকাশ

 

বিগড়ে যাওয়া একটি মোষ নিয়েই নাকানি-চুবানি। বনের বাঘ জনপদে ঢুকলে আমাদের দশা কী হবে? ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। নিত্যদিন হরহামেশায় গ্রামবাংলার দামাল ছেলেরা তাড়িয়ে ধরে বাঘডাশাসহ বিলুপ্ত প্রায় অসংখ্য প্রাণী হত্যা করছে। শেষ পর্যন্ত একটি মোষ পুলিশকে গুলি করে হত্যা করতে হলো। এর মধ্যদিয়ে যে বিষয়টি ফুটে উঠলো- তা হলো আমরা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে শুধু অপ্রস্তুতই নয়, নিজেদের রক্ষা করার মতো ন্যূনতম সতর্ক নই। সতর্ক হলে প্রস্তুতি থাকতো, প্রস্তুতি থাকলে পুলিশ-জনতার অসহায়ত্ব চেহারা ফুটে উঠতো না। গুলি করে মারতে হতো না বিগড়ে যাওয়া মোষ। গুলি করে মোষ হত্যা অসহায়ত্বেরই নগ্ন প্রকাশ।

‌বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার প্রয়োগ নেই। আইনের যথাযথ প্রয়োগ থাকলে নিশ্চয় বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী হত্যার মহোৎসব হতো না। বন্যপ্রাণীর উৎপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হত্যার সুযোগ দেশে প্রচলিত আইনে নেই। তা হলে উপায়? প্রতিবেশী দেশ ভারতে বন্যপ্রাণীর উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে তথা মানুষকে রক্ষা করতে বাড়তি প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের নেই। বাড়তি প্রস্তুতি থাকলে বিগড়ে যাওয়া মোষ দূরের কথা, বনের বাঘও যদি জনপদে ঢুকে পড়ে তাকেও রুখতে গুলি ছুড়তে হবে না। বাড়তি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বনসংরক্ষণ ও উপজেলা পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগের হাতে ঘুমপাড়ানি গুলির ব্যবস্থা থাকা দরকার। দরকার পুলিশের হাতেও ঘুমপাড়ানি গুলি বন্দুক রাখা। তা না হলে আইন প্রয়োগকারীর হাতেই বন্যপ্রাণী হত্যার মতো অপরাধ মেনে নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না। যেমন, মেহেরপুর জেলা সদরের আমঝুপি রাজনগরের মাঠে মোষ হত্যাকাণ্ডকে বাস্তবতার আলোকে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে অন্যায় বলা বাচুলতা।

মেহেরপুর গাংনী থানাপাড়ার এক কৃষকের একটি মোষ হঠাৎ করেই বিগড়ে যায়। মানুষ দেখলেই তেড়ে মারতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত মেহেরপুর জেলা সদরের আমঝুপি রাজনগরের মাঠে পুলিশসদস্যসহ কয়েকজনকে আহত করে। উপায় না পেয়ে মোষটিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিগড়ে যাওয়া মোষ নিয়ে পুলিশ-জনতার নাজেহাল দশা, বন্যপ্রাণীর উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে বাড়তি প্রস্তুতিরই তাগিদ। সরকারের নীতি নির্ধারক মহলকে বিষয়টি উপলব্ধি করে দ্রুত বাস্তবমুখি পদক্ষেপ প্রয়োজন। বাড়তি প্রস্তুতি গ্রহণে গড়িমসি ডেকে আনবে বড় ধরনের বিপত্তি।