হামলাকারীদের উচিত শাস্তি হতে হবে : দোষীদের কেউ কোনোভাবেই ছাড় পাবে না

দেশে ফিরে প্রথমেই চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব পরিদর্শন : হামলার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়ে হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার এমপি বললেন

 

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি দেশের মাটিতে পা দিয়ে বাড়ি ফেরার আগেই চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব পরিদর্শন করে প্রেসক্লাবে হামলা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিন্দনীয় এ হামলাকারীদের উচিত শিক্ষা হতে হবে। চুয়াডাঙ্গায় সাংবাদিকরা নির্বিঘ্নে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করবে। কেউ কোনোভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে পুলিশকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। দলীয় কেউ তেমন কোনো কিছু করলে তাকে ছাড় দেয়ার প্রশ্নই আসে না, তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গতকাল শুক্রবার সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন তার সফর সঙ্গীদের সাথে নিয়ে গেদে সীমান্ত হয়ে দর্শনার জয়নগর চেকপোস্টে পৌঁছান। তাকে স্বাগত জানানোর জন্য পূর্ব থেকেই দলীয় নেতাকর্মী, পুলিশ, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ অসংখ্য মানুষ সীমান্তে অপেক্ষা করতে থাকেন। তিনি দেশে ফিরে সীমান্তের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিজিবির সম্মেলনকক্ষে উপস্থিত সকলের সাথে কুশল বিনিময়ের সাথে সাথে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হন। গাড়িবহর সাড়ে ‌১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে পৌঁছায়। হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ স্বাগত জানান। হামলায় প্রেসক্লাবের ক্ষতবিক্ষত চেহারা পরিদর্শন শেষে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের নিকট থেকে ঘটনার বর্ণনা শোনেন। সাথে ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল মালেকসহ অনেকে। হামলার শিকার সাংবাদিকদের মধ্যে ফাইজার চৌধুরী রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন। প্রেসক্লাব সভাপতি মাহতাব উদ্দীনের সভপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রেসক্লাব সেক্রেটারি সরদার আল আমিন বক্তব্য দিতে গিয়ে হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সাংবাদিকেরা যখন আপনার পূর্ব প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে নিষ্ঠার সাথে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, তখন প্রেসক্লাবে হামলা সেই প্রতিশ্রুতির ওপর প্রত্যক্ষ আঘাত।

প্রেসক্লাব সেক্রেটারি বলেন, দেশে ফিরে বাড়ি পৌঁছুনোর পূর্বেই প্রেসক্লাব পরিদর্শন করে হুইপ শুধু প্রজ্ঞাশীলতারই প্রমাণ দিলেন না, অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পালন করে সাংবাদিকদের কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করলেন। অস্ত্র হাতে নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় কেন ভীতিকর মিছিল, কেন প্রেসক্লাবে হামলা? এসব প্রশ্নের জবাব সাংবাদিকেরা খুঁজে পাননি। মামলা হয়েছে। ৬ জন গ্রেফতার হয়েছে। যুবলীগের তরফে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। পরবর্তী করণীয় বিষয়ে আপনার দিকনিদের্শনার প্রতীক্ষায় সাংবাদিকসমাজ। চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সকল সাংবাদিক হামলার পুনরাবৃত্তি চান না, চান পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুষ্ঠু পরিবেবশ, নিরাপত্তা।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাতীয় সংসদের হুইপ প্রেসক্লাবে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে হামলার ঘটনা এই প্রথম। দৃশ্য দেখে হামলাকারীদের ধিক্কার জানানোর ভাষা হারিয়ে গেছে। কয়েকদিন সময় পেলে কেন এবং কারা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তা জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারবো। অবশ্যই হামলাকারীদের উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া দরকার। যেহেতু ওই মিছিলে দলীয় স্লোগানও ছিলো, সেহেতু সাংগঠনিকভাবেও ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি উঠে আসে। সার্বিক দিক খতিয়ে দেখে অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ ছাড় পাবে না।

তিনি চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সাংবাদিকদের নিরাপত্তার প্রশ্নে পুলিশের দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাজনীতিক ও সাংবাদিক সম্পূরক। একে অপরকে বাদ দিয়ে নয়। সাংবাদিকেরাই রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন। যারা সাংবাদিকের বা সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে তাদেরকে সুস্থ ধারার মানুষ বলা যায় না। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রশ্নে পুলিশে কর্মরতদের যেমন দায়িত্বীশলতার পরিচয় দিতে হবে, তেমনই আমরাও সজাগ এবং আন্তরিক দৃষ্টিতে দেখবো। ভবিষ্যতে প্রেসক্লাবে তো নয়-ই কোনো সাংবাদিকের সাথে কেউ সম্মানহানি বা অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা যাতে না ঘটাতে পারে সেদিকেও বিশেষ নজর রাখার চেষ্টা করবো।

হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার গত ২২ অক্টোবর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ভারতের উদ্দেশে রওনা হন। তিনি যখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছিলেন তখন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে ঘটে নগ্ন বর্বরোচিত হামলা। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বিপরীতের ওয়াপদার ভেতর থেকে বের হওয়া ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মিছিলটি কবরী রোড হয়ে শহীদ হাসান চত্বর পেরিয়ে কোর্ট মোড়ের দিকে রওনা হয়। এ সময় সড়কের বেশ কয়েকটি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়। প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন চলাকাল মিছিল থেকে হামলা চালিয়ে ৫টি মোটরসাইকেল, ক্লাবের পার্টিশন গ্লাস, চেয়ার ও টেবিল ভাঙচুর করা হয়। তারা ৪ সাংবাদিককে প্রাণনাশের অপচেষ্টা চালায়। প্রেসক্লাবে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌর মেয়রসহ অনেকেই প্রেসক্লাবে ছুটে আসেন। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক আইনে সোপর্দ করার দাবি জানান। প্রেসক্লাব তাৎক্ষণিক প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। শহীদ হাসান চত্বরে কলম-ক্যামেরা, ল্যাপটপ রাস্তায় রেখে প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরদিন থানায় গণজিডি করে সাংবাদিকরা অবস্থান ধর্মঘটে বসেন। এর পরদিন মানববন্ধন ও মৌনমিছিল নিয়ে পুলিশ সুপারের দফতরে গিয়ে আসামিদের গ্রেফতারের দাবিসহ ঘটনার সময় কতর্ব্যরত পুলিশের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে বিভাগীয় শাস্তিরও দাবি তোলা হয়। নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। মিছিলের স্থির ছবি ও ফুটেজ দেখে আসামিদের গ্রেফতারের তাগিদ দেয়া হয়। হামলাকারীদের গ্রেফতার অভিযানে নামে পুলিশ। যুবলীগের তরফে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়। মিছিল থেকে কারা হামলা চালিয়ে প্রেসক্লাব ভাঙচুর করেছে তা শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সেরকম কোনো বিবৃতি অবশ্য পাওয়া যায়নি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতারকৃত শান্তি ও আলিফকে গতকাল শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিজ্ঞ আদালত দুজনকেই জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার দর্শনার জয়নগর সীমান্ত পথে দেশে ফিরেছেন। এ সময় জয়নগর সীমান্তে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনায় ফুলেল শুভেচ্ছা দেন দলের নেতাকর্মীরা। পরে বিজিবির আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ প্রশাসক দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা আ.লীগ নেতা মোশাররফ হোসেন মিয়া, সাবেক জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তূজা, জেলা আ.লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক খুস্তার জামিল, দর্শনা পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, আ.লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম, সরোয়ার হোসেন, আমজাদ হোসেন, মোজাহারুল ইসলাম, হাতেম মণ্ডল, মুন্সি সিরাজুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী, মুকুল মিয়াজি, আবুল কালাম, ইদ্রিস আলী, আতিয়ার রহমান হাবু, ওমর আলী, জেলা যুবলীগ আহ্বায়ক আরেফিন আলম রঞ্জু প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত ২২ অক্টোবর হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার দর্শনার জয়নগর চেকপোস্ট সীমান্ত পথে ভারতে যান চিকিৎসার জন্য।