জামায়াতের আমির নিজামীর ফাঁসি

স্টাফ রিপোর্টার: উনিশশ একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে দেশত্যাগে বাধ্য করার দায়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ দিয়েছে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একাত্তরের আল বদর বাহিনীর প্রধান নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগের মধ্যে আটটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার দুইটি গ্রামে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রায় ৪৫০ জনকে হত্যা ও ৩০-৪০ নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ; পাবনার করমজা গ্রামে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটের অভিযোগ; একই জেলার ধুলাউড়া গ্রামে ৩০ জনকে হত্যায় নেতৃত্ব ও সম্পৃক্ততার অভিযোগ ও বুদ্ধিজীবী নিধনের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল সর্বসম্মতিক্রমে নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেয়। গতকাল বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় দেয়। চার অভিযোগে তাকে পৃথকভাবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। অর্থাত্ তিনি চারটি মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ করেছেন।

এছাড়া পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক কছিমুদ্দিনসহ ১০ জনকে হত্যা, মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণের ষড়যন্ত্র, সোহরাব আলী নামক এক ব্যক্তিকে নির্যাতন ও হত্যা এবং নাখালপাড়ার পুরোনো এমপি হোস্টেলে আটক রুমী, বদি, জালালদের হত্যার জন্য পাকিস্তানি সেনাদের প্ররোচনার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে প্রত্যেক অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়েছে, নিজামীর বিরুদ্ধে প্রমাণিত সকল অভিযোগে পৃথকভাবে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। তবে চারটি মৃত্যুদণ্ডের একটি কার্যকর হলে স্বাভাবিকভাবে সব শাস্তি একীভূত হয়ে যাবে। অন্যদিকে, বাকি আটটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে এসব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। এতে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাক্ষী এবং ক্ষতিগ্রস্তরাও। দেশের বিভিন্ন জেলায় রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মিছিল করার ঘটনা ঘটেছে। তবে এ রায় ন্যায়ভ্রষ্ট দাবি করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এছাড়া রায়ের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবারসহ তিন দিনের হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী।

রায় ঘোষণার কিছুক্ষণ আগে ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় আনা হয় নিজামীকে। সংক্ষিপ্ত রায় পড়ার পুরো সময়টা নিজামীকে শান্ত দেখা গেছে। তিনি রায় ঘোষণার সময় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জানুয়ারি আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ২০৪ পৃষ্ঠার রায়ে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণও দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে বলা হয়, নিজামীকে বাংলাদেশের মন্ত্রী করাটা ছিলো মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গালে চড় দেয়ার শামিল। অন্যদিকে রাজনৈতিক অবস্থান বা পরিচয়ের কারণে কেউ দায়মুক্তি পেতে পারে না। অপর এক পর্যবেক্ষণে আল বদর সম্পর্কে বলা হয়েছে, এরা শুধু অ্যাকশন স্কোয়াড হিসেবে কাজ করেনি বরং সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবেও কাজ করেছে।

গতকাল মতিউর রহমান নিজামীর রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনালসহ সুপ্রিম কোর্টের আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যাপক জোরদার করা হয়। সকাল ১১টার আগ মুহূর্তে মতিউর রহমান নিজামীকে কাঠগড়ায় আনা হয়। এরপর ১১টা ৫ মিনিটে জনাকীর্ণ এজলাসে আসন গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল-১’র বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।

সকাল ১১টা ১০ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতি আনোয়ারুল হক। তিনি নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা অভিযোগগুলো পড়ে শোনান। এরপর সাক্ষ্য-প্রমাণ ও রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। সবশেষে দোষী সাব্যস্তকরণ ও সাজার আদেশ ঘোষণা করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। রায় পড়া শেষ হয় ১২টা ২০ মিনিটে।

রায়ের আদেশে যা বলা হয়: রায়ের আদেশে বলা হয়, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামের মৃত লুত্ফর রহমানের ছেলে অভিযুক্ত মতিউর রহমান নিজামীর আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের দু, চার, ছয় ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩, এর ২০ (২) ধারায় তাকে প্রত্যেক অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। একই আইনে তার বিরুদ্ধে আনা এক, তিন, সাত ও আট নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে প্রত্যেক অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হচ্ছে। তবে পাঁচ, নয়, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, এবং ১৫ নম্বর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আনা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে চারটি অভিযোগ ছিলো উসকানির। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩, এর ২১ ধারার অধীনে আসামি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। রায়ের কপি রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিকে প্রদান করতে বলা হয়। এছাড়া ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে রায়ের কপি প্রদান করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়।

যে চার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড: নিজামীর বিরুদ্ধে আনা দুই নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১০ মে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ঐ সভায় ছিলেন নিজামী। সভার পরিকল্পনা অনুসারে ১৪ মে দু’টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪৫০ জনকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। এছাড়া প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ করে রাজাকাররা। এই অভিযোগের বিষয়ে বিচারপূর্বক সিদ্ধান্তে বলা হয়, চারজন রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্যে ৯ নম্বর সাক্ষী আইনুল হক রূপসী স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তিনি ১০ মে নিজামীকে স্কুলের সভায় দেখেছিলেন। ১৮ নম্বর সাক্ষীও নিজামীকে দেখছিলেন। চারজন সাক্ষী কাঠগড়ায় নিজামীকে শনাক্ত করেছেন। চারজনের সাক্ষ্য আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করেছে। আসামিপক্ষ তাদের জেরা করেছে। কিন্তু তাদের সাক্ষ্য অসত্য বলে প্রমাণ করতে পারেনি। সকল সাক্ষ্য-প্রমাণে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে তত্কালীন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা মতিউর রহমান নিজামী বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) এ ও (জি), ৪ (১), ৪(২) ধারায় মানবতাবিরুদ্ধে অপরাধ এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য।

চার নম্বর অভিযোগ হলো পাবনার করমজা গ্রামে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটের ঘটনায় নিজামীর সম্পৃক্ততা। এই অভিযোগের বিচারপূর্বক সিদ্ধান্তে বলা হয়, অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে। যাদের বেশিরভাগই চাক্ষুস সাক্ষী। আসামিপক্ষ চারজনকেই জেরা করেছে। তবে তাদের সাক্ষ্যে কোনো বৈপরীত্য দেখাতে পারেনি। সকল সাক্ষ্য-প্রমাণে মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) এ ও (জি), ৪ (১), ৪(২) ধারায় মানবতাবিরুদ্ধে অপরাধ এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য।

নিজামীর বিরুদ্ধে ছয় নম্বর অভিযোগ হলো, একাত্তরের ২৭ নভেম্বর ধুলাউড়া গ্রামে ৩০ জনকে হত্যায় নেতৃত্ব ও সম্পৃক্ততা। রায়ে বলা হয়, এই অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ তিনজন সাক্ষীকে হাজির করেছে। এদের মধ্যে  রাষ্ট্রপক্ষের ষষ্ঠ সাক্ষী মো. শাহজাহান আলী একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। তার সাক্ষ্য অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে। এছাড়া ১৭ নম্বর সাক্ষীও একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের সাক্ষ্যে নিজামীর অপরাধ সংগঠনে সম্পৃক্ততা, সংশ্লিষ্টতা ও সহযোগিতার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) এ ও (জি), ৪ (১), ৪(২) ধারায় মানবতাবিরুদ্ধে অপরাধ এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য।

১৬ নম্বর অভিযোগ হলো বুদ্ধিজীবী হত্যা। এই অভিযোগের বিচারপূর্বক সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে নৃশংসতা চলাকালে মতিউর রহমান নিজামী ইসলামী ছাত্রসংঘ ও স্বাধীনতা বিরোধী সহযোগী বাহিনী আল বদরের সভাপতি ছিলেন। কিন্তু যখন দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় আসন্ন হয়ে ওঠে তখন ছাত্রসংঘ ও আল বদরের সদস্য দেশের বুদ্ধিজীবী নিধনের ষড়যন্ত্র করে। নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে নিধন ট্রাইব্যুনালস আইনের ৩ (২) এ ও (জি), ৪ (১), ৪(২) ধারায় মানবতাবিরুদ্ধে অপরাধ এবং ২০ (২) ধারা অনুসারে গণহত্যা।

রাষ্ট্রপক্ষের সকল সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা যায় ১৯৬৬ সাল থেকে নিজামী ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন। এই ছাত্র সংঘই মুক্তিযুদ্ধের সময় আল বদর বাহিনীতে রূপান্তরিত হয়। ফলে নিজামী আল বদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। বুদ্ধিজীবী হত্যায় আল বদর সদস্যদের সহযোগিতা, অনুমোদন, নৈতিক সমর্থন ও তার কর্মের বিষয়ে নিজামী সম্পূর্ণরূপে সচেতন ছিলেন। আল বদর নেতা হওয়ার জন্য অধস্তনদের উপর নিজামীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিলো। আল বদর সদস্যদের অপরাধ থেকে নিবৃত্ত না করায় তাদের অপরাধের দায় কোনোভাবেই নিজামী অস্বীকার করতে পারেন না। এছাড়া বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী, আজহারুল হক ও হুমায়ূন কবিরের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা সাক্ষ্যের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে। আল বদরের ঊর্ধ্বতন নেতা হওয়ায় ৪(২) ধারায় তিনি অপরাধী। এসব তথ্য প্রমাণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

গতকাল ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যে ব্যক্তি সক্রিয়ভাবে বিরোধিতা করেছিলেন তিনি পরবর্তী সময়ে স্বাধীন দেশের মন্ত্রী এটি বিশ্বাস করা কঠিন। এ ঘটনা স্পষ্টতই মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের চড় মারার শামিল। একইসঙ্গে জাতির জন্য লজ্জার এবং অবমাননাকর। অপর এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রাষ্ট্রপক্ষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে এমন কোনো তথ্য প্রমাণ মেলেনি। এটা সত্য যে মতিউর রহমান নিজামী জামায়াতের আমীর। কিন্তু একজন রাজনীতিকের অপরাধের জন্য বিচার হলে সেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হবে এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। অপরাধী রাজনীতিক হলে আইন তাকে দায়মুক্তি দেয় না বা দিতে পারে না। এ কারণে আসামি দাবি করতে পারেন না যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তার বিচার হচ্ছে।

পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, কুখ্যাত ইসলামী ছাত্রসঙ্ঘ একটি সাম্প্রদায়িক ও অপরাধী সংগঠন হিসেবে কাজ করেছিলো। যারা পাকিস্তানি দখলদারদের পরিকল্পনা ও নকশা অনুযায়ী অগণিত নিরস্ত্র বাঙালি ও বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছিলো। একইসঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ধর্মের অপব্যবহার করেছে বলেও রায়ে বলা হয়েছে।

এক নজরে নিজামীর মামলা: তিন দফা অপেক্ষমান রাখার পর গতকাল নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় যুক্তিতর্ক শেষে গত ২৪ মার্চ নিজামীর মামলাটি রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ট্রাইব্যুনাল-১ এর তত্কালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ গত বছরের ১৩ নভেম্বর নিজামীর মামলার কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণা অপেক্ষমান রেখেছিলেন। বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের চাকরির বয়সসীমা পূর্ণ হওয়ায় তিনি গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অবসর নেন। সেই থেকে চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য ছিলো। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর ১০ মার্চ থেকে এ মামলায় নতুন করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন। এরপর তিন কার্য দিবসে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে, গত ১৩ মার্চ থেকে পাঁচ কার্যদিবসে নিজামীর পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ও মিজানুল ইসলাম।

এরপর গত ২৪ জুন রায় ঘোষণার ধার্যকৃত দিনে অসুস্থতার কারণে নিজামীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা যায়নি। পরে স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন চেয়ে নিজামীর মামলার রায় ঘোষণা আবারো অপেক্ষমান রাখেন ট্রাইব্যুনাল।

২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামীকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতারের পর একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উপস্থাপন করে ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষ। ২৮ ডিসেম্বর আদালত অভিযোগ আমলে নেয়। অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি শেষে ২০১২ সালের ২৮ মে নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল-১ এ তার বিচার শুরু হয়। ওই বছরের ২৬ আগস্ট এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খানসহ এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন মোট ২৬ জন। আর নিজামীর পক্ষে তার ছেলে মো. নাজিবুর রহমানসহ মোট চারজন সাফাই সাক্ষ্য দেন।