ঝিনাইদহের মহেশপুরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী আজ

 

কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: আজ ২৮ অক্টোবর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী। নিজ গ্রামের সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান কলে ক্যাম্পাসে দিনটি পালন করা হচ্ছে।

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খোদ্দখালিশপুর গ্রামে তার জন্মস্থান। ১৯৮১ সালে তৎকালীন সরকার ২৮ ডিসেম্বর শহীদ পরিবারের জন্য একটি বাড়ি তৈরি করে দিলেও বর্তমান বাড়িটি সংস্কারের অভাবে এখন লোনা লেগে খসে পড়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাদের ভাগ্যের ঘটেনি তেমন কোনো পরিবর্তন। গ্রামটি বেহাল দশা, রাস্তাঘাট, বিদ্যুত ও বীর শ্রেষ্ঠর নামে স্কুল, কলেজের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। ২০০৭ সালে ৯ মার্চ তার নামে প্রতিষ্ঠিত স্মৃতি জাদুঘর ও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হলেও দেয়া হয়নি প্রয়োজনীয় লোকবল। খোদ্দখালিশপুর গ্রামটি হামিদনগর করায় শহীদ পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি থাকলেও আজো তা সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়নি।

ঝিনাইদহ সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে মহেশপুর উপজেলার খোদ্দখালিশপুর গ্রাম। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের নিজ গ্রাম। তিনি পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার চাপড়া থানার ডুমুরিয়া গ্রামে ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আক্কাচ আলী মণ্ডল এবং মাতার নাম কায়ছুন নেছা। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর তাদের পরিবার যশোরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার খোদ্দখালিশপুরে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন। পরে তিনি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের দক্ষিণ-পূর্বে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নামক স্থানে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। ২৮ অক্টোবর রাতে মৌলভীবাজার ধলাইয়ের সম্মুখযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা প্রদর্শন করে এলজি চালনারত শত্রুপক্ষের দু সৈন্যকে ঘায়েল করেন। কিন্তু তিনি নিজেও শত্রুর গুলিতে শাহাদত বরণ করেন। পরবর্তীতে এই বীর সৈনিকের মরদেহ ধলাই থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্গত আমবাসা গ্রামে একটি মসজিদের পাশে দাফন করা হয়। শহীদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে ২০০৬ সালে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের নামে কলেজ ও প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমান সরকারের আমলে কলেজ ও স্কুলটি সরকারিকরণ করা হলেও তার বেহালদশা। হামিদুর রহমানের মায়ের জীবনের শেষ ইচ্ছানুযায়ী কলেজ কাম্পাসে তার সমাধিস্থল করা হয়। মুক্তিমুদ্ধের বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মামনা বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

দীর্ঘ ৩৬ বছর পর এই বীর সৈনিকের দেহাবশেষ ভারত থেকে ২০০৭ সালের ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে এনে ঢাকার শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্তানে সমাহিত করা হয়। বীরশ্রেষ্ঠের ছোট ভাই ফজলুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বসবাসের বাড়িটি নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রামে বিদ্যুত নেই, রাস্তাঘাটের বেহাল দশা।

এ ব্যাপারে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছিমা খাতুন জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সরকারি ও বেসরকারিভাবে কলেজ ক্যাম্পাসে তার শাহাদতবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে।

Leave a comment