বন্ধ করতে হবে মানবপাচারের চোরাপথ

থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দেশে জলপথে অব্যাহতভাবে মানব পাচারের ঘটনায় প্রমাণিত হচ্ছে পাচারকারী সিন্ডিকেট এখন আরো সংঘবদ্ধ এবং সে তুলনায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল অথবা অকার্যকর। পাচার হওয়া বহু বাংলাদেশি থাইল্যান্ডের গহিন বনে শ্রমদাস হিসেবে যে ব্যবহৃত হচ্ছে, এ খবরটিও জাতির জন্য লজ্জার ও অবমাননার। গহিন বনে শ্রমদাসদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার কতোজন রয়েছে তা নিশ্চিত করে জানা না গেলেও সম্প্রতি পাচারের সময় সাগরে ফেলে হত্যা এবং কৌশলে পালিয়ে বাড়ি ফেরাদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গার বেশ কয়েকজন রয়েছে। বিদেশে বন্দি ও প্রতারিত হয়ে ক্রীতাদাসদের সুহালে দেশে ফেরানো জরুরি।

এতোদিন মনে করা হতো, সমুদ্রপথে বিদেশ গমনে ব্যয় কম তাই এ ফাঁদে পা দিচ্ছে অসচেতন মানুষ। ‘কক্সবাজার থেকে থাইল্যান্ড, দাস পাচারের নতুন রুট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিবিসি বলছে, কক্সবাজারে চাকরির লোভ দেখিয়ে ঢাকা থেকেও কাউকে কাউকে উপকূলীয় এলাকায় নিয়ে অজ্ঞান করে নৌযানে তোলা হচ্ছে। এ অপহৃতরা থাইল্যান্ডে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। খবরটি এ অর্থেও ভয়ঙ্কর যে কাজের সন্ধানে বিদেশগামী ব্যক্তি শুধু নয়, যে কেউ যেকোনো সময় পাচারচক্রের শিকার হতে পারে নিজের অজান্তে। একজন মানুষ কতোটুকু অসহায় হলে ভিটেমাটি বিক্রি বা ধারদেনা করে প্রাণ হাতে নিয়ে রাতের অন্ধকারে সাগরে ভাসতে পারে? দারিদ্র্য মানুষকে বেপরোয়া করে, অভাব অপরাধী করে তোলে। তাই কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। দারিদ্র্য বিমোচনে নেয়া সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগগুলোর সুষম বণ্টনও এখানে অপরিহার্য। দল বা স্বজনপ্রীতির রাজনীতির নোংরা সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে প্রকৃত অর্থে যোগ্য ব্যক্তির হাতে সহায়তা পৌঁছে দিতে হবে। দুবেলা দুমুঠো ভাতও যদি জোটে, মানুষ অবৈধ পথে প্রলুব্ধ হবে না।

 

অবস্থাদৃষ্টে বলা যায়, পাচারের রুটটি এখন আরো বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে এবং এর কারণও আছে। বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও নৌবাহিনীর অভিযানে মাঝে মধ্যে ট্রলারসহ লোকজন আটক হলেও মূল দালালচক্রের কেউ ধরা পড়ছে না। এ পাচারচক্রের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে জনসচেতনতা বৃদ্ধির। বাড়াতে হবে কর্মসংস্থানও। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমেই সাফল্যের এ স্তরে উত্তরণ সম্ভব। মানব পাচার বন্ধে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারিভাবে বিদেশে শ্রম বিক্রির পথ নিরাপদ তথা সুগম করতে হবে। বিদেশে পাড়ি জমাতে আগ্রহীদেরও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন অপরিহার্য।