দামুড়হুদায় বেগুনক্ষেতে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে না পেরে চাষিরা দিশেহারা

 তাছির আহমেদ: চলতি মরসুমে ১ বিঘা জমিতে বেগুনচাষ করেছিলাম। পরপর দু দিন দু হাটে দু মণ বেগুন তোলার পর পরের হাটের জন্য বেগুনক্ষেতে গিয়ে দেখি নিজেদের তরকারি খাওয়ার বেগুন নেই। যা পেয়েছি তাতে শুধুই পোকা। ক্ষেতজুড়ে বেগুনগাছে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে ওষুধ দিতে দিতে নাজেহাল। এ পোকা দমনের জন্য দিনে দু’বার ওষুধ দিয়েও কাজ হয়নি। কতো খাবি খা। শেষমেশ দিশেহারা হয়ে ক্ষেতে আর কোনো ওষুধ দিই না। এ চাষ করতে গিয়ে খরচ ২৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ টাকা ওঠা তো দূরের কথা, খরচের অর্ধেক উঠবে কি-না সন্দেহ। এ গ্রামের চাষিদের চাষ দেখভালের কাজে নিয়োজিত কৃষি স্যারের খোঁজ নেয়া আমাদেরই দরকার। কারণ পায়ে ধুলো-কাঁদা লেগে যাওয়ার ভয়ে আমাদের স্যার পাকায় পাকায় আসেন আর পাকায় পাকায় যান। এ কথাগুলো এক নাগাড়ে বললেন দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়াধীন কুমারী দোহা গ্রামের ছলেমান আলীর ছেলে ক্ষতিগ্রস্ত বেগুনচাষি আব্দুল কুদ্দুস। এ সময় তিনি আরো বলেন, এ পোকা দমনের জন্য দোকানিরা নিপ্রোটিন নামক এক বোতল ওষুধ ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকাও দাম নিয়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন কীটনাশক দোকানিদের পরামর্শে ওষুধ কিনে থাকি এবং ওনারা যেভাবে বলেন সেভাবেই ক্ষেতে ব্যবহার করি। তারপরও কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ক্ষেতে ওষুধ দেয়াই বন্ধ করে দিয়েছি।

জয়রামপুর মল্লিকপাড়ার রবিউল হোসেনের ছেলে মুনতাজ, একই পাড়ার সামসুল ও শহিদুল এবং বারুই পাড়ার ওহিদ বক্স নামের বেগুনচাষিগণ গতকাল দুপুরে বলেন, কীটনাশক দোকানিদের পরামর্শে নিপ্রোটিন, সেভেন ও ভলিওম নামক যতো রকম বালাইনাশক আছে, সব দিয়েও কাজ হয়নি। খালিখালি এক গাদা টাকার শ্রাদ্ধ। আবার কীটনাশক ওষুধ কোম্পানির লোকেরা তাদের কোম্পানির তৈরি ওষুধ হাতে নিয়ে খুব-ভালো বলে একদম গ্রামে যেয়ে টাকা নিয়ে ওষুধ দিয়ে এসেছেন। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। বর্গা জমি নেয়া বাদে এক বিঘার বেগুনচাষে ২৪/২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। কপাল ভালো হলে এ খরচের টাকা বাদ দিয়ে কিছুটা লাভ হয়। গত দু দিন থেকে আবহাওয়া একটু ঠাণ্ডা হওয়ায় পোকার উপদ্রব কিছুটা কমতে শুরু করেছে।

কলোনিপাড়ার জান মোহাম্মদের ছেলে জামু বলেন, আমি ৩ বিঘা জমিতে বেগুন লাগিয়ে খরচ হয়েছে ৬২ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত বেগুন বিক্রি করেছি ১৬ হাজার টাকার। জমি থেকে বেগুন এখনও মাস দেড়েক ওঠানো যাবে।

উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌর এলাকায় চলতি মরসুমে বেগুনের আবাদ হয়েছে ৪৭০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২৫ হেক্টর, একই লক্ষ্যমাত্রা গতবারও ছিলো। হিসেবে দেখা গেছে, সব থেকে বেশি বেগুনের আবাদ হয় হাউলী ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নে গতবারের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১০০ হেক্টর। চলতি মরসুমের এ অবধি হাউলী ইউনিয়নের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ হেক্টর। কৃষকদের সুবিধার্থে এ ইউনিয়কে ৩টি ব্লকে বিভক্ত করা হয়েছে। তা যথাক্রমে হাউলী, জয়রামপুর ও লোকনাথপুর। জয়রামপুর ব্লকের লক্ষ্যমাত্রা সব থেকে বেশি। তবে গতবারের থেকে ১০ হেক্টর কমে এসে এবার দাঁড়িয়েছে ৫০ হেক্টরে। গ্রামজুড়ে বেগুনচাষে ক্ষতিগ্রস্ত কুমারী দোহা গ্রামটি জয়রামপুর ব্লকের অধীন এবং তা দেখভালের দায়িত্বে নিযুক্ত আছেন দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম।

বেগুনগাছের কচি ডগা আর কচি বেগুন আক্রমণকারী পোকার নাম কি এবং এর থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায়? এ বিষয়টি নিয়ে দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, সাধারণত এলাকার চাষিরা একে বেগুন পোকা বলে। মূলত মথের ক্রীড়া বেগুন গাছের কচি ডগা খেয়ে ফেলে এবং কচি বেগুনগুলোতে ছোট ছোট ছিদ্র করে ভেতরে ঢোকে। আবহাওয়ার কারণে এদের বিস্তার বৃদ্ধি পায়। কীটনাশক ওষুধ দ্বারা এদের পুরো বংশ ধ্বংস করা সম্ভব নয়। এ পোকা নিধনে সব থেকে বেশি কার্যকর হবে এক বিঘা জমির বেগুনক্ষেতে ১০/১২টি ফেরম্যান সেক্স ট্রাফ ব্যবহার করলে। এটি একটি পোকা মারা ফাঁদ, যা পোকার বংশকে ধ্বংস করতে অত্যন্ত কার্যকর। এর ব্যবহার বিধি- ১টি কাঁচের বোয়োমের নিচে সাবান পানি রেখে, বোয়োমের মধ্যে রাখতে হয় মাত্র ২৫ টাকা দামের (এক ধরনের সুগন্ধ) ওষুধ। এরপর আক্রান্ত বেগুনক্ষেতে বোয়োমটি ঝুলিয়ে রাখলে বোয়োমের দু পাশে থাকা ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসা ওষুধের ঘ্রাণে ছুটে যায় মথেরা বা বেগুন পোকারা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মথগুলো এ সাবান পানিতে পড়ে মারা যায়।