অনিশ্চিত পরিস্থিতি অর্থনীতির অগ্রযাত্রায় অন্তরায়

 

দিন যতো যাচ্ছে দেশের অর্থনীতিতে যেন আস্থার সংকট ততোটাই বাড়ছে। দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। দেশি বিনিয়োগের অবস্থাও তাথৈবচ। শিল্পখাতে যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কমে গেছে। ফলে কমে গেছে ঋণের চাহিদা। ব্যাংকগুলোতে বেড়েছে অলস টাকার পরিমাণ। এর পাশাপাশি কমছে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধির হার। রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার বিষয়টিও হুমকির মুখে। কেন? নানামুখি জবাব।

 

সার্বিক অর্থনীতিতে আস্থার সংকটের আড়ালে যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে গেলেও দূর হয়নি অনিশ্চয়তা। এর প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় বিদ্যমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কতোদিন স্থায়ী হবে তা নিয়ে উদ্যোক্তাদের মনে সংশয় থাকা স্বাভাবিক। রাজনীতির সাথে অর্থনীতির নিবিড় সম্পর্ক। রাজনীতিতে স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা না থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ তথা সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। পড়ছে। তবে বিনিয়োগে স্থবিরতার কারণ আরো আছে। গ্যাস-বিদ্যুত সংকটের এখনও সমাধান হয়নি। অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করেও উৎপাদনে আসতে পারছেন না গ্যাস-বিদ্যুত সংকটের কারণে। ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছে। সম্প্রতি সরকারি ব্যাংকের ঋণের সুদ কিছুটা কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা এর কতোটা সুফল পাবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ তাদের ঋণের সিংহভাগই বেসরকারি ব্যাংকের। কাজেই বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বেসরকারি ব্যাংকের ঋণের সুদও কমাতে হবে। অনুন্নত যোগাযোগ অবকাঠামোর কারণেও নিরুৎসাহিত হচ্ছে বিনিয়োগ। এমন তথ্যও রয়েছে, বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসা বিদেশি প্রতিনিধি দল তীব্র যানজটের মুখে পড়ে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে দেশে ফিরে গেছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ নানা কারণেই দেশে যে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিঘ্নিত তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও অর্থনৈতিক স্থবিরতার বিষয়টি তো আর অস্বীকার করা যায় না!

 

শুধু বড় বড় শহর উপশহরে নয়, জেলা উপজেলা পর্যায়েও শিল্প উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করা দরকার। আস্থা অর্জনে দরকার শিল্প প্রতিষ্ঠার অনুকূল পরিরবেশ। শিল্প না গড়লে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে কীভাবে? বেকারত্ব বাড়ছে। বাড়ছে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে না পারার ঝুঁকিও। বিনিয়োগে স্থবিরতার কারণে দেশের অগ্রগতি যে ব্যাহত হচ্ছে তা উপলব্ধি করে সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা দূর করার বিশেষ উদ্যোগ দরকার। অর্থনীতিতে আস্থা ফিরে পেতে চাইলে রাজনীতির অনিশ্চয়তাও দূর করতে হবে। অনিশ্চিত পরিস্থিতি অর্থনীতির অগ্রযাত্রায় অন্তরায়।