আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিক সামগ্রীর বাজার দখল
মেহেরপুর অফিস: আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিক সামগ্রী বাজার দখল করায় বাঁশের তৈরি সামগ্রীর কদর কমেছে। ফলে এক সময়ের চাহিদা সম্পন্ন বাঁশের সামগ্রী তৈরির কারিগর দাস সম্প্রদায়ের জীবনে প্রভাব ফেলেছে। তাদের রোজগারে ভাটা পড়েছে। বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মেহেরপুরের দাস সম্প্রদায়ের মানুষেরা। অভাবের তাড়নায় স্কুলেও পাঠাতে পারছেন না সন্তানদের।
মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠে বামনপাড়ায় বসবাস করছে প্রায় ৫০ ঘর দাস সম্প্রদায়ের মানুষ। এখনও তারা ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার পেশা। ৫০টি পরিবারের অন্তত ৩শ মানুষ বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছেন। তারা নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় বাঁশ দিয়ে তৈরি করেন ব্যবসার ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত নানান সামগ্রী। এছাড়াও পান ও আম-লিচু বাজারজাতসহ নানা ধরনের ঝুঁড়িও তৈরি করেন তারা।
গত বছরে প্রতিটি ঝুঁড়ি ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে তিন থেকে চার হাজার ঝুঁড়ি বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন তা কমে এসেছে দু থেকে তিনশ ঝুঁড়িতে। এক সময় ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত ঝুঁড়ি ও গৃহস্থালী সামগ্রীর কদর ছিলো মানুষের কাছে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিক স্থান দখল করায় এবং ভারত থেকে আমদানি করা প্লাস্টিক ক্যারেটের ভিড়ে সে কদরে ভাটা পড়েছে। ফলে আয় রোজগারও কমে গেছে। বামনপাড়ার অরুন দাশ আরো জানান, সারা বছরে দু থেকে তিন মাস ঝুঁড়ি-ডালি তৈরির কাজ করলেও বেচাকেনা ভালো হতো। তা দিয়ে সঞ্চয় হওয়া টাকায় প্রায় সারা বছরের খোরাক হয়ে যেতো। ক্যারেটের কারণে চাহিদা না থাকায় ঝুঁড়ি-ডালির উৎপাদনও কমে গেছে। ঝুঁড়ি-ডালির দামও কমে গেছে। বর্তমান বাজারে প্রতিটি ঝুঁড়ি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকায়। ঝুঁড়ি বিক্রি করে এখন আর সংসার চলছে না।
ওই পাড়ার সীমান্ত দাশ জানান, বাঁশের কাজ করে এ বছরের প্রথম থেকে আর্থিক সংকটে পড়েছি। যে কারণে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। বন্ধ হয়ে গেছে আমাদের সম্প্রদায়ের অনেকের লেখাপড়া।
গৃহবধূ আরতী দাস জানান, সংসারে অভাব অনটন থাকায় পুরুষের পাশাপাশি মেয়েরাও বাঁশ শিল্পের কাজে সহায়তা করছেন। তবে বাঁশের দাম বেশি; ঝুঁড়ির দাম কম এবং মুজুরিও ঠিকমতো না পাওয়ায় চরম হতাশায় দিন গুনছেন তারা।
মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা সাংবাদিকদের জানান, এক সময় মেহেরপুরের দাস সম্প্রদায়ের মানুষ এ শিল্প থেকে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে এ শিল্পের চাহিদা কমে যাওয়ায় দাস সম্প্রদায়ের লোকজন হতাশায় ভুগছেন। সরকারি সহায়তা পাওয়া গেলে তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেন তিনি।