মেহেরপুরে বানর যখন ডাক্তার!

মেহেরপুর অফিস: অবুঝ পশু বানর যখন ডাক্তার; তখন রোগ নির্ণয় কতোটুকু সঠিক? তা আর কেউ না জানলেও জানে ডাক্তার বানরের প্রভু নিজেই। সুযোগ বুঝে ডাক্তার বানরের প্রভু (মালিক) সরল মহিলা ও শিশুদের নিকট থেকে ব্যবস্থাপত্র দেয়াসহ ঝোলায় রাখা তাবিজ-কবজ দিয়ে কি পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেবে তা একমাত্র ভুক্তভোগীরা কিছুটা হলেই বলতে পারবেন। একবিংশ শতাব্দীর এ বিজ্ঞানের যুগে এখনও মানুষকে কীভাবে ঠকাবে প্রতারকচক্র তা বুঝে ওঠা দায়।

বানরের মালিককে প্রশ্ন করা শুরু করা হলো- তোমার বানর খেলা দেখাবে বুঝি? না ভাই। সে রোগ নির্ণয় করে। বিনিময়ে ১০ টাকা করে নেয়। যদি সে রোগ নির্ণয় করতে রাজি থাকে তবেই টাকা ধরে; অন্যথায় ধরে না। আচ্ছা! তোমার বানর কোন মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছে? তা ডাক্তারি যখন পাস করেছে তখন রাস্তায় কেন? সরকারি চাকরি কিংবা ক্লিনিক খুলে বসে থাকলে তো বহু টাকা রোজগার হতো? ভাই লজ্জা দেবেন না। বানর পশু হলেও সে সব কিছু বোঝে। আসুন দেখুন! সে যার চিকিৎসা করে টাকা নিতে চাইবে; আমি বেকলই তার টাকা ধরি। অন্যথায় টাকা ধরি না। আর তার (বানরের) ইচ্ছার বিরুদ্ধে টাকা ধরলে বানর আমাকে কামড়ে দেবে। আমার জামা-কাপড় ছিঁড়ে দেবে।

গত সপ্তায় মেহেরপুর শহরের বাসস্ট্যান্ডপাড়ার জনবসতি গলির মধ্যে ডাক্তার বানর ও তার মালিক ঢুকে মানুষের রোগ নির্ণয় করে টাকা নেবে। এমন পরিস্থিতিতে ওইপাড়ার ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র হিরা ১০ টাকা নিয়ে বানরের সামনে ধরলো। বানর টাকা নেবে না বলে জানালো। বানরের মালিক বলে উঠলো- দেখুন ভাই, আমার বানর টাকা নেবে না। তবে তার (হিরার) রোগ বলে দেবে আমার বানর। শুরু হলো বানরের দ্বারা রোগ নির্ণয় ও পরামর্শ দেয়া। মালিক বানরকে বললো- এ মনির চিকিৎসা করবে? বানর হাত উঁচালো। হ্যাঁ! বানর তোমার চিকিৎসা করবে। এ মনি তোমার হাত মাটিতে রাখো। বানরকে উদ্দেশ্য করে মালিক বললো- হাত দেখো। বলো এর কি রোগ আছে? বানর দেখালো মাথায়। বানর মালিক বললো- তোমার মাথা ঘোরে? শিশু হিরা বললো, হ্যাঁ। এ মনির চিকিৎসা দিতে পারবে? বানরের ইশারা- না। কি করতে হবে? বড় ডাক্তার দেখাতে হবে। হ্যাঁ ভাই হিরাকে বড় ডাক্তার দেখাতে হবে।

এরপর ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মিম বানরের সামনে ১০ টাকা ধরলো। এবারও বানর টাকা নিলো না। আবারো বলে উঠলো- না ভাই আমার বানর সবার কাছ থেকে টাকা নেয় না। সে ধনীদের নিকট থেকে টাকা নেয়। গরিবদের নিকট থেকে টাকা নেয় না। তাদের দোয়া আমার বানরের জন্য যথেষ্ট। বানর মালিক মীমকে বললো- এ মনি তোমার অভিভাবকদের ডাক। মিমের দাদি এলে বানরের মালিক তার চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে নিলো। বানর দ্বারা রোগ নির্ণয় শুরু হল। বানরের ইশারায় পাতলা ছিপছিপে মিমকে বড় ডাক্তারের কাছে নিতে হবে বলে জানান বানরের মালিক। বানর আরো জানালো, তার মা-বাবাকে নামাজ পড়ে মেয়ের জন্য দোয়া করতে হবে।

শিক্ষিত কিছু মানুষ দেখে ডাক্তার বানরের মালিক এমরান হোসেন (৩২) বানর সবার নিকট থেকে টাকা নেয় না এমন অভিনয় করে স্থান ছাড়লো। কিছুক্ষণ পরে স্থানীয় বউ-ঝিরা জানালেন, আগের দিন রোগ দেখার নামে ১০ টাকা করে ফিস নেয়াসহ কি কি রোগ হয়েছে আর তা সারতে বানরের মালিক বউ-ঝিদের নিকট থেকে একশ থেকে পাঁচশ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। বউ-ঝিদের দিয়ে গেছে কিছু তাবিজ-কবজ। বিশ্বাস করে ওই তাবিজ-কবজ কেউ হাতে, কেউ গলায় আর কেউ মাজায় ঝুলিয়েছেন।

একবিংশ শতাব্দীর এই বিজ্ঞানের যুগে মানুষকে নানাভাবে ঠকিয়ে প্রতারকচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে পর্যপ্ত টাকা। কেউ জিন সেজে কোটিপতি আর মিল-কলকারখানার মালিক বানিয়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে সরল সোজা মানুষকে পথে বসাচ্ছে। কেউ বিভিন্ন কোম্পানি মোবাইলফোনে লটারিতে কোটি টাকা বেধেছে বলে ধোকা দিচ্ছে। ওই টাকা পেতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রয়োজনীয় ফিসের নামে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরলসোজা মানুষ ভেবে দেখেননা- জিন কেন আমাকে সোনা-দানা দেবে? কেন কোটিপতি বানাবে আর মিল-কলকারখানা করে দেবে? আর মোবাইল কোম্পানি কেন লটারির মাধ্যমে আপনাকে কোটি কোটি টাকা দেবে? এমন প্রশ্ন কেবল শিক্ষিত আর সচেতন মহলের?

ডাক্তার বানরের মালিক ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর গ্রামের মিন্টু মিয়ার ছেলে। তিনি জানালেন প্রাইমারির গণ্ডি পেরোনোর পর আর লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি। বাপ-দাদারা এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি নিজেও ১৭/১৮ বছর ধরে এ বানর নিয়ে মানুষের রোগ নির্ণয় ও রোগ সারাতে তাবিজ-কবজ দিয়ে রোজগার করে। তার বানরের বয়স কতো জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান- বাবার আমলের বানর। তাই তার অভিজ্ঞতা অনেক।