জাতীয় তথ্য বাতায়নে চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ প্রশাসকসহ বর্তমান বেশির ভাগ কর্মকর্তার নাম নেই!

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় তথ্য বাতায়নে চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধি ও জেলা পর্যায়ে যেসকল সরকারি কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের বেশির ভাগেরই নাম তথ্য বাতায়নের তালিকায় নেই। তবে জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইনসহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নাম জাতীয় তথ্য বাতায়নে সঠিক রয়েছে। তথ্য বাতায়নে নাম রয়েছে পূর্বের বেশির ভাগ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের।

আবার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের নাম পর্যন্ত তালিকায় নেই। একজন ইউপি চেয়ারম্যানের নাম রয়েছে যিনি বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আর নেই। আবার যিনি দায়িত্ব পালন করছেন এরকম চারজন ইউপি চেয়ারম্যানের নামও তালিকাই নেই। ফলে এ সকল ভুলে ভরা তথ্য জেলার মানুষকে যেমন বিভ্রান্ত করছে তেমনি দেশে বিদেশে চুয়াডাঙ্গার তথ্য বাতায়ন সম্পর্কে মানুষ ভুল তথ্য পাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। তাই জেলা প্রশাসকের কাছে অবিলম্বে জাতীয় তথ্য বাতায়নে সঠিক নাম, ছবি ও মোবাইল নং সন্নিবেশিত করার দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।

জাতীয় তথ্য বাতায়ন থেকে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ প্রশাসকের নাম নেই। অথচ গত ৩০ জুন থেকে জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুর রহমান মনজু। তেমনি আবার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নাম রয়েছে মোহাম্মদ আকবর হুসাইনের। অথচ তিনি ৩ বছর আগে চুয়াডাঙ্গা থেকে বদলি হয়ে গেছেন। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হামিম হাসান।

চুয়াডাঙ্গা চার উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের নাম বর্তমানে নতুন করে সংযোজন না করায় পূর্বের নির্বাচিতদের নাম ও ঠিকানা রয়েছে। তবে তাদের কোনো ছবি নেই সেখানে। সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আসাদুল হক বিশ্বাস ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোহিনুর বেগম পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় তাদের নামটি পূর্বে থেকে রয়েছে। অথচ আরেক ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক হযরতের নামও নেই, তেমনি নেই ছবি। একই অবস্থা আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলা পরিষদের।

সরকারি অফিসগুলোতে যেসকল কর্মকর্তা বদলি হয়ে দীর্ঘদিন আগে চলে গেছেন এরকম কর্মকর্তার নামও তালিকা রয়েছে। আবার যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের নাম আসেনি। যেমন সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম গত ৪ মে চুয়াডাঙ্গায় যোগদান করেন। অথচ সিভিল সার্জন হিসেবে এখনও নাম রয়েছে সাময়িক বরখাস্তকৃত সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমানের। জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক এবিএম রবিউল ইসলাম। অথচ তার নাম তালিকায় নেই। তেমনি উপকরকমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে শহিদুল ইসলাম দীর্ঘ দু বছর আগে বদলি হলেও নাম ওঠেনি নতুন কর্মকর্তা খোরশেদ আলমের। সরকারি শিশু পরিবারের কর্মকর্তা সাহানারা বেগম ১ বছর আগে চাকরি থেকে অবসর নিলেও বর্তমানে তার নামটি রয়েছে। জেলার ত্রাণ কর্মকর্তা হিসেবে ম্যাজিস্ট্রেট সুহেল মাহমুদ অন্যত্র বদলি হলেও তার নামটি এখনও রয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে নাম রয়েছে আতাউর রহমানের। অথচ দীর্ঘ ১ বছর আগে চুয়াডাঙ্গায় যোগ দেন মোক্তার হোসেন সরকার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হরিবুলা সরকার বরিশালে বদলি হলেও তার নামটি এখনও রয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রফিজ উদ্দিন বদলি হয়ে নেত্রকোনা জেলায় গেলেও নতুন কর্মকর্তার নামটি সংযোজন করা হয়নি। জেলা মৎস্য কর্মকতা বজলুর রশিদ বদলি হয়েছেন। তার জায়গায় নতুন এসেছেন জেলা কর্মকর্তা। অথচ তার নামটি তথ্য বাতায়নে ওঠেনি। পুলিশ সুপার কার্যালয়ের তথ্য কর্মকর্তা পরিদর্শক এসএম ইকবাল আহমেদ ৩ মাস আগে বদলি হয়ে ঝিনাইদহ জেলায় চলে গেলেও তার নামটি এখনো রয়েছে। জেলা কারাগারের সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. আনোয়ারুজ্জামান। অথচ নাম রয়েছে ১ বছর আগে বদলি হওয়া মো. গোলাম হোসেনের। একই অবস্থা আরো বেশ কিছু সরকারি দপ্তরের।

এনজিও কার্যক্রম চুয়াডাঙ্গা শতাধিক থাকলেও নাম রয়েছে মাত্র চারটির। এছাড়া সিপি বাংলাদেশ, সাংবাদিকদের তালিকা, সংবাদপত্রের সঠিক তালিকা, সাংস্কৃতিককর্মীদের নামের তালিকা ও রাজনৈতিক দলের নামসহ অনেক কিছুই অনুপস্থিত রয়েছে।

জাতীয় তথ্য বাতায়নে জীবননগরের হাসাদহ ও রায়পুর এবং আলমডাঙ্গার আইলহাস ইউনিয়ন পরিষদের নাম নেই। তেমনি চেয়ারম্যান না থাকলেও নাগদাহ ইউপির চেয়ারম্যান হিসেবে অ্যাড. আব্দুল মালেকের নাম রয়েছে। অথচ নাগদাহ ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দারুস সালাম।

এ ব্যাপারে চানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু বলেন, প্রশাসক হিসেবে নাম নেই, বিষয়টি এই প্রথম শুনলাম। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মল্লিক সাঈদ মাহবুব বলেন, জাতীয় তথ্য বাতায়নে কর্মকর্তাদের নাম স্ব স্ব বিভাগ পরিবর্তন করতে পারে। তারা যদি না করেন তবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু সরকারি অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে নাম ও ছবি দিতে বলা হয়েছে। কিছু পরিবর্তনও হয়েছে।