শরতে মেহেরপুরে শিউলী ফুলের আকাল!

মহাসিন আলী: শরতের সাথে শিউলী ফুলের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। শিউলী ফুল ছাড়া শরৎকাল যেন কল্পনা করা যায় না। শরৎকাল যেমন বাঙালির জন্য গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ফুল আর ওষুধিগুনে শিউলী গাছ গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতির বিবর্তনে শরতের আগামন যেমন ঘটা করে জানান দেয় না। তেমনি নানা কারণে মেহেরপুর এলাকা থেকে শিউলী ফুলের গাছও হারিয়ে যাচ্ছে।

ছিপছিপে বৃষ্টির পরে আকাশে শাদা মেঘ ভাসবে; তার ফাঁকে জোৎসাভরা চাঁদ উঁকি দেবে তবেই তো শরৎকাল মনে হবে। শিউলী ফুলে গন্ধে পরিবেশ মাতিয়ে তুলবে তবেই তো শরৎকাল মনে হবে। ডোবা নালায় শাপলা ফুটবে, গাছে তাল পাকবে, মাঠে ও নদীর ধারে কাঁশফুলে ভরে যাবে; তবেই তো শরৎকাল বোঝা যাবে।

আগের মতো ডোবা-নালায় শাপলা ফোঁটে না। ডোবা-লানা পরিষ্কার করে সেখানে মানুষ মাছ চাষ করছে। তাল গাছকে লাভজনক মনে না করায় কেউ তাল গাছের চারা রোপণ করেন না। বরং তাল গাছ কেটে ফেলেন। এরপরও কিছু তাল গাছ থাকলে আগেভাগেই তালশাঁসের জন্য ফলকর হিসেবে গাছ বিক্রি করে দেয়া হয়। এদিকে খড় কেটে আবাদি জমি করায় এখন আর খুব বেশি কাঁশফুল দেখা যায় না।

ছোট্ট শিশু স্বর্ণ (৬) ঘরের বারান্দায় বসে আপন মনে শিউলী ফুল দিয়ে মালা গেঁথে চলেছে। তাকে জিজ্ঞাসা করতে সে বললো- মায়ের কাছে শুনেছি শিউলী ফুল দিয়ে মালা গেঁথে গলায় পরা যায়। তাই আমি ফুল কুড়িয়ে মালা গাঁথছি। তার হাতে শিউলী ফুল দেখে শেষের দিকে হলেও শরৎকালের কথা আরো একবার মনে হলো। অনেক দিন পরে একটি শিউলী ফুলের গাছ চোখে পড়লো। মেহেরপুর মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে বড় একটা শিউলী গাছ। হয়তো সরকারি জমিতে গাছটি তাই কেটে ফেলা সম্ভব হয়নি। ওই গাছটি ছাড়া মেহেরপুরে তেমন আর চোখে পড়ে না কোনো শিউলী গাছ।

শহরের কাজি অফিসপাড়ার ষাটোর্ধ্ব জমির শেখ বললেন, এক সময় প্রায় বাড়িতে শিউলী ফুল গাছ ছিলো। শিউলী ফুল ফুটলে চার দিকে সুগন্ধে ভরে যেতো। শরৎকালের কথা মনে করে দিতো। তখনকার দিনে এতো ডাক্তার ছিলো না। সর্দি-কাশি হলে মায়েরা শিউলী ফুলের পাতা বেটে রস খাইয়ে দিতো। এতেই সর্দি-কাশি সেরে যেতো। এখন অনেক ডাক্তার-কবিরাজ হয়েছে। তাই আর শিউলী গাছ প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু এ গাছের অনেক ওষুধি গুন রয়েছে।

শহরের ঘোষপাড়ার মধ্য বয়সী খোকন শেখ বলেন, দু দশ আগে দেশে ফুল চাষ ছিলো না। এখন দেশের অনেক এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন দিবসের অনুষ্ঠানে মানুষ আপন জনদের গাঁদা, গোলাপ, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ফুলের তোড়া, ডালি কিংবা মালা দিয়ে ভাব বিনিময় করেন। দু যুগ আগেও আমরা শিউলী ফুলের মালা দিয়ে আপন জনদের সাথে ভাব বিনিময় করেছি। এখন আর শিউলী খুব একটা দেখা মেলে না। এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক বেশি নেই। এখনও হিন্দু বাড়িতে খোঁজ নিলে দু-একটা শিউলী ফুল গাছের দেখা মিলতে পারে।

শহরের মল্লিক পুকুর পাড়ের পপি নার্সারির সত্বাধিকারী আব্দুস সাত্তার বলেন, বৃক্ষ মেলাসহ সারা বছর নার্সারিতে ওষুধি গাছ হিসেবে শিউলী ফুলের চারা রাখি। দুর্ভাগ্য কেউ শিউলী ফুলের চারা কিনতেই চায় না।