ব্র্যাক ব্যাংকের সেই চোর এই চুরিতেও

স্টাফ রিপোর্টার: জয়পুরহাটে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে চুরি যাওয়া অর্থের এক-চতুর্থাংশসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। যাদের একজন ছয় বছর আগে একই ব্যাংকের ঢাকার ধানমণ্ডি শাখায় ভল্ট লুটের মামলার আসামি। এই ব্যক্তির নাম রাজা মিয়া (৪৫)। ২০০৮ সালে শুক্রাবাদে বেসরকারি এই ব্যাংকটির শাখার লকার ভেঙে স্বর্ণালঙ্কার লুটের মামলায় তিনি দেড় বছর কারাগারে ছিলেন।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে জয়পুরহাটে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা থেকে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা চুরির পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলছিল। সেই অভিযানেই ঢাকার সবুজবাগ, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও মুন্সীগঞ্জ থেকে রাজাসহ সাতজনকে গ্রেফতার এবং ৫৬ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয় বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে র‌্যাব। অন্যরা হলেন- বাদল মল্লিক ওরফে বাবলা (৪৯), মঞ্জুরুল হাছান শামীম (৩২), অনুপ চন্দ্র পণ্ডিত (২১), প্লাবন চন্দ্র পণ্ডিত (২৫), স্বপন দেবনাথ (৪০), এম কে কুদ্দুসুর রহমান বুলু (৫২)।
র‌্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, জয়পুরহাটে ব্যাংকে চুরিতে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন নয়জন। তবে গ্রেফতার অনুপ ও প্লাবন সরাসরি চুরিতে অংশ নেননি। মামা স্বপন দেবনাথ এই দুই ভাগ্নের কাছে চুরির অর্থ রেখেছিলেন বলে মুফতি মাহমুদ জানান। সরাসরি চুরিতে অংশ নেওয়া চারজন পলাতক রয়েছেন, তারা হলেন- নওশের, ইসলাম, ইকবাল ও তাজ আহমেদ। মুফতি মাহমুদ বলেন, “রাজা মিয়া ২০০৮ সালের ৪ জানুয়ারি ব্র্যাক ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখার ভল্ট থেকে ২৫০ ভরি স্বর্ণালংকার লুটের সাথে জড়িত ছিলো। সে জয়পুরহাটে ব্যাংক লুটের ঘটনারও মূল পরিকল্পনাকারী।” র‌্যাবের সহকারী পরিচালক মাকসুদুল আলম বলেন, সোনা লুটের ঘটনায় রাজা দেড় বছর কারাগারে ছিলেন। সেখানে অন্য একটি চুরির ঘটনায় কারাগারে থাকা শামীমের সাথে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ভবিষ্যতে তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়। জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাজা জয়পুরহাটে চুরির ছক সাজায় বলে র‌্যাব জানিয়েছে।
মাকসুদুল আলম বলেন, অগাস্টের প্রথম দিকে রাজাকে ফোন করে বলে ‘একটা বড় কাজ আছে, করবি?’ রাজা রাজি হয়ে যায়। এরপর থেকে তারা নিজেদের লোকদের সংগঠিত করতে থাকে। আটক স্বপন দেবনাথ ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে আনসার সদস্য হিসেবে কাজ করতেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। র‌্যাব জানিয়েছে, পরিকল্পনা থাকলেও গত ১৮, ১৯, ২১ সেপ্টেম্বর হরতাল থাকায় তা বাদ দিয়েছিলো রাজারা। তবে সেই সময় তারা ব্যাংকের পাশের বাসায় রাজার মিয়ার নেতৃত্বে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে দেয়ালের সিমেন্ট ঘষে ইট-সুরকির আস্তরণ বের করতে থাকে। র‌্যাবের বক্তব্য অনুযায়ী, চুরি করতে চারজন ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে ব্যাংকে ঢুকেছিলো। তারা হলেন- রাজা, ইসলাম, তাজ ও নওশের। বাকিরা পাশের একটি বাসায় থেকে যোগাযোগ রাখছিলো। র‌্যাব কর্মকর্তা মাকসুদুল বলেন, তাজ ও নওশের ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে সিসি ক্যামেরা নষ্ট করে দেয়। এরপর ইসলাম ও রাজা সেখানে ঢুকে। এই চারজন ব্যাংক থেকে টাকা বের করে আনে। জয়পুরহাট শহরের প্রধান সড়কে একটি দ্বিতল ভবনে থাকা ওই ব্যাংকে চুরির আগে ভবনের বিদ্যুত সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছিলো। মাকসুদুল জানান, এই চোরের দল ১০০ বা ৫০ টাকার কোনও নোটের বান্ডিল নেয়নি, শুধু ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের বান্ডিল নিয়েছিলো।

ব্র্যাক ব্যাংকের দাবি, তাদের শাখা থেকে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা চুরি হয়েছে। তবে গ্রেফতার আসামিরা বলছে, তারা সেদিন ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা নিয়েছিল। লুট হওয়া টাকা থেকে রাজা ৩১ লাখ, শামীম ৩৩ লাখ, ইসলাম সাড়ে ১২ লাখ, তাজ মাহমুদ ৮ লাখ, বুলু ও ইকবাল ৩৩ লাখ, স্বপন ১৮ লাখ, নওশের ১৪ লাখ ও বাদল ৯ লাখ টাকা ভাগ পায় বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ।  র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ‘হেড অব রিস্ক ম্যানেজমেন্ট’ সৈয়দ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, এটা সত্য। তবে ব্যাংকের নিরাপত্তার কোনও ঘাটতি ছিলো না। চুরি যাওয়া বাকি অর্থও র‌্যাব উদ্ধার করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।