ঈদ বিনোদনে মুখরিত ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্স

মহাসিন আলী/শেখ শফি: ঈদুল আজহার পর ঈদ বিনোদনের জন্য ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্সে হাজার মানুষের ঢল নেমেছে। ঈদোত্তর বিনোদনের জন্য মেহেরপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরদের ভিড় জমছে মুজিবনগরে কমপ্লেক্সে। বিনোদন পিপাসুদের ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই থাকছে না বিশাল কমপ্লেক্স চত্বরে। বিনোদন পিপাসুদের আগমনে সংযোগ সড়কগুলোতে ছোট-বড় পরিবহনের ভিড়ে দীর্ঘ যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে। শীতের সময়সহ সারা বছর কম-বেশি লোক সমাগম এখানে হয়ে থাকে। ঈদের পরদিন থেকে ঈদ-বিনোদনে সমাগম হয় অনেক বেশি। আর এ লোক সমাগম চলবে এক সপ্তাহ।

Mujibnagar Eid Pic-5

বিনোদন পিয়াসীদের আকর্ষণের অন্যতম জায়গা মেহেরপুরের ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্স। ঈদুল আজহার ছুটিতে একদিনের জন্য হলেও বিনোদনের প্রত্যাশায় বাস-ট্রাক, মোটরসাইকেল, নসিমন, করিমন, আলগামন, আলমসাধুযোগে মুজিবনগরে যাচ্ছে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোররা। স্থানীয় দর্শনার্থী ছাড়াও চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর ও মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ বিনোদনের জন্য ছুটে যাচ্ছে মুজিবনগরে। মাইক, ব্যান্ড ও ভেপু বাজিয়ে নেচে-গেয়ে চলছে তাদের বিনোদনপর্ব। মুজিবনগরের বিশাল আম্রকানন ঘিরে গড়ে ওঠা কমপ্লেক্সে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরভিত্তিক বাংলাদেশের মানচিত্র, স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন মূরাল, সরকারি শিশু পরিবার, ছয়স্তর বিশিষ্ট গোলাপ বাগান, শাপলা চত্বরসহ বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে ঘুরে দেখছে দর্শনার্থীরা। এছাড়া নিকট থেকে সীমান্তে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া দেখছেন তারা। শিশু কিশোররা দর্শন করছে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা মনোরমা পার্ক ও চিড়িয়াখানা। ঈদোত্তর বিনোদনে মুজিবনগরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ আগত বিনোদন পিপাসুরা।

ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ থেকে আগত যুবক হাসান জানান, ঈদের পরে বিনোদনের জন্য তাদের এখানে আসা। ১৫ জন বন্ধু সকাল সাড়ে ৭টায় আলগামনে চড়ে মুজিবনগরের উদ্দেশে রওনা দিই। বেলা সাড়ে ১০টায় মুজিবনগর পৌঁছি। একটি দিনের জন্য বিনোদনের জন্য এখানে এসে ভিন্ন ধরনের আমেজ পাচ্ছি আমরা।

কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানান, বিনোদনের জন্য সন্তানদের নিয়ে এখানে ঘুরেতে এসেছি। সন্তানদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সেক্টরভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে পারছি। তাই খুব ভালো লাগছে।

কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থেকে আসা কলেজশিক্ষার্থী সুমন জানান, ২০টি মোটরসাইকেল নিয়ে প্রায় ৫০ জন বন্ধু মুজিবনগরে বেড়াতে এসেছি। এখানে পর্যাপ্ত টয়লেট, পানির ব্যবস্থা, বসার যায়গা থাকা দরকার। টয়লেটে ঠিকমতো পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। শিশুদের বিনোদনের জন্য কিছু খেলনার ব্যবস্থা রাখা জরুরি। তিনি আরো মনে করেন, মুজিবনগরের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করা দরকার।

ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রাম থেকে কুষ্টিয়ায় ঈদ করতে এসেছেন মামুন হোসেন। তিনি স্ত্রীকে সাথে নিয়ে বিনোদনের জন্য মুজিবনগরে এসেছেন। তিনি জানালেন, এখানে এসে বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রীসভা গঠন ও শপথের স্থান এবং মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরভিত্তিক মানচিত্র দেখলাম। মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাস জানতে পারলাম। খুব ভালো লাগছে। ঈশ্বরদী থেকে আসা ছোট্ট শিশু শাকিল জানালো, এখানে এসে ঘুরতে ভালো লাগছে। তবে আমাদের খেলাধুলার কোন সরঞ্জাম নেই; খেলতে পারছি না। তাই মন খারাপ লাগছে।

মুজিবনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি মুন্সি ওমর ফারুক প্রিন্স জানান, ঈদ পরবর্তী বিনোদনের জন্য প্রতি ঈদের পর দিন থেকে এক সপ্তাহ মুজিবনগর কমপ্লেক্সে লোক সমাগম হয়ে থাকে। সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে আনন্দ বিনোদন। এ বছর এখানে লোকজনের উপস্থিতি অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। মুজিবনগর কমপেক্সে আনসার হেড মুনসুর আলীর (পিসি) নেতৃত্বে পাহারায় আছেন ৫৮ জন আনসার সদস্য। তিনি জানালেন, এ পর্যন্ত কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এখানে ঘটেনি।