শান্তির বার্তা রেখে কৈলাসে ফিরলেন জগৎমাতা দুর্গা

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন

 

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উত্সব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুক্রবার শেষ হলেও প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে গতকাল শনিবার। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ ও কল্যাণ এবং সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে নিরন্তর শান্তি ও সম্প্রীতির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে শারদীয় উত্সবের দেবী বিসর্জনের দিনটিও ছিলো ব্যাপক আনন্দ ও উত্সবমুখর। দেবীরূপী মা দুর্গা মৃন্ময়ীরূপে মণ্ডপে মণ্ডপে পূজাগ্রহণ শেষে দোলায় চড়ে ফিরে গেলেন কৈলাসে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে। মর্ত্যলোকে ৫ দিনের অবস্থানে রেখে গেলেন অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভতার চেতনা এবং সব সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য নিরন্তর শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা।

2_156444

মঙ্গলবার বোধনে অরুণ আলোর অঞ্জলি নিয়ে আনন্দময়ী মা উমাদেবী নৌকায় চড়ে মর্ত্যলোকে আসেন। ফিরে গেলেন দোলায় উঠে। বিদায় বেলায় আনন্দ-আমেজের মধ্যেও দেবীর কান্নায় ভেঙে পড়েন ভক্তরা। ঢাকঢোল আর উলু ধ্বনিতে মঙ্গলবার থেকে আনন্দের যে বর্ণিল ছটা ছড়িয়ে পড়েছিলো, শনিবার সেখানে বেজে ওঠে বিষাদের সুর। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে কাঁসার ঘণ্টা বাজিয়ে, দুর্গা মায় কি জয়; মহামায়া কি জয়- ধ্বনিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে জগৎমাতাকে বিদায় দেন হাজার হাজার ভক্ত। এর মধ্যদিয়ে শনিবার শেষ হলো বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, দেশের অন্যান্য স্থানের মতো গতকাল আলমডাঙ্গায়ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচে বড় উৎসব দুর্গোৎসব। প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে গতকাল হিন্দু যুবসমাজ। বরাবরের মতো আলমডাঙ্গা শহরের ১১টি দুর্গামণ্ডপের প্রতিমা গতকাল বিকেলে বিসর্জনের জন্য আলমডাঙ্গা কুমার নদের তীরে উপস্থিত করা হয়। এ সময় শেষবারের মত মা দুর্গার প্রতিমাগুলো ঘিরে নৃত্যের তালে তালে ভক্তরা হোলি খেলায় মেতে ওঠেন। সূর্য অস্তমিত হওয়ার প্রদোষকালে কুমারের নিটল জলে প্রতিমাগুলো বিসর্জন দেয়া হয়। শেষে বিসর্জনের বেদনা নিয়ে সকলে ঘরে ফেরেন।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। বিকেলে মেহেরপুর শহরসহ জেলার ৩ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মোট ৩১টি পূজামণ্ডপ নদ-নদীর পানিতে বিসর্জন দেয়া হয়। বিকেলে মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন সড়কে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতিমা নিয়ে রং মেখে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ও আতশবাজি ফুটিয়ে সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে ভৈরব নদে বিসর্জন দেয়।

সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ এলাকায় সকল স্থানে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। সকলের বুকে ছিলো তাই বিসর্জনের বেদনা। এবার সরোজগঞ্জ এলাকায় ৯টি পূজামণ্ডপ তৈরি হয়।

পদ্মবিলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পদ্মবিলা ইউনিয়নের খেজুরা গ্রামের হালদারপাড়ার শারদীয় দুর্গাপূজা গতকাল শনিবার বিসর্জন দেয়া হয় নবগঙ্গা নদীতে। এ সময় এলাকার সকল ধর্মের অনুসারীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ও জেলা সদরের ধুতুরহাট ঝিলখালীর শারদীয় দুর্গাপূজা পদ্মবিলের পানিতে বির্জন দেয়া হয়।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর উপজেলায় এবার ১৩টি পূজামণ্ডপে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়। গতকাল বিজয় দশমীতে প্রতিটি পূজামণ্ডপে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তদের ছিলো উপচে পড়া ভিড়। দুপুরে হতেই ট্রাকযোগে দেবী দুর্গাকে নিয়ে বিভিন্ন প্রদক্ষিণ শেষে নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়।

আটকবর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার সকল মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার শারদীয় দুর্গাপুজার সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান শেষে পঞ্জিকা অনুযায়ী বিজয় দশমীর আনুষ্ঠানিক কার্যে ভক্তরা অশ্রুসজল চোখে প্রতিমার বিসর্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মুজিবনগরে সবকটি প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার ৮টি মন্দিরের প্রতিমা শান্তিপূর্ণভাবে ভৈরব নদীতে বিসর্জন দেয়া হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জের ৫টি দুর্গাপূজা বিসর্জনরে মধ্যদিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা উৎসব। প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে গতকাল শনিবার সকাল থেকে মুন্সিগঞ্জ পশুহাটের মাথাভাঙ্গা নদীর পাশে বসে হরেক রকমের মিষ্টি ও খেলনা এবং পরিবারের আসবাবপত্রের দোকান। সকল বয়সের ও শ্রেণির মানুষের ভিড় ছিলো চোখেপড়ার মতো। দুপুরে খুদিয়াখালী, বেতবাড়িয়া, পুটিমারী, গড়গড়ী ও মুন্সিগঞ্জের প্রতিমাগুলো মুন্সিগঞ্জ পশুহাট বাজারের ওপর সারি বদ্ধ করে রাখা হয়। ঢোলের তালে তালে নৃত্য ও আরতি আর সাউন্ড বক্সের গানের তালে তালে কেউই থেকে থাকেনি। সন্ধায় মাথাভাঙ্গা নদীতে একে একে প্রতিমা বির্সজনের মধ্যেদিয়ে শেষ হয় দুর্গা পূজা উৎসব।