জামায়াত নেতাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা

দামুড়হুদায় অতিদরিদ্রদের ভিজিএফর চাল আত্মসাতের অভিযোগ

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক শরীফুল আলম মিল্টনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করে টাকা আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ করেছেন ইউপি সদস্যরা। এবার তার বিরুদ্ধে অতিদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফ’র চাল আত্মসাতের অপচেষ্টার অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য হাসান আলী। অভিযোগের প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যানের সহযোগী জামায়াত নেতা মোক্তারপুরের আশাদুলকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান ওই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন জামায়াতের আমির প্রভাষক শরীফুল আলম মিল্টন দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম করে আসছেন। তিনি গত ১৫ দিন যাবত ইউনিয়নে না এসে অজ্ঞাত স্থান থেকে সচিবের মাধ্যমে খাতা-কলমের কাজ চালিয়ে আসছেন। গতকাল শুক্রবার ইউনিয়নের ৩, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে অতিদরিদ্রদের মধ্যে ভিজিএফ’র চাল বিতরণের সময় মোক্তারপুর গ্রামের মৃত খেদের আলীর ছেলে ইসলাম একাই ১২টি টোকেন নিয়ে হাজির হয় ইউনিয়ন পরিষদে। ওই ১২টি টোকেনের চাল উত্তোলন করাকালীন সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য হাসান ধরে ফেলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করতেই বেরিয়ে পড়ে থলের বিড়াল। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ওই ১২টি টোকেন মোক্তারপুরের মৃত মওলা ঢালির ছেলে জামায়াত নেতা আশাদুল হক তাকে দেন। ইউপি সদস্য হাসান তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ইউএনওকে অবগত করেন। খবর পেয়ে ইউপি কার্যালয়ে উপস্থিত হন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান। তিনি আসাদুলকে ইউনিয়নে হাজির হওয়ার জন্য মোবাইলফোনে জানালে আশাদুল হাজির হন ইউপি কার্যালয়ে। ওই ১২টি চারের টোকেন কোথায় পেয়েছেন জানতে চাইলে আশাদুল বলেন, চেয়ারম্যান মিল্টন আমাকে দিয়েছেন। ঘটনার বিস্তারিত জানার পর তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অতিদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাতের অপচেষ্টার অপরাধে চেয়ারম্যানের সহযোগী আশাদুলকে ৫ জাহার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। আশাদুল ওই জরিমানার টাকা নগদে পরিশোধ করলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য হাসান বলেন, আমি ওই ওয়ার্ডের নির্বাচিত মেম্বার অথচ চেয়ারম্যান আমাকে কিছু না জানিয়ে দলীয়করণ আর স্বজনপ্রীতির উদ্দেশে ওই ১২টি টোকেন তার দলীয় ভাইয়ের হাতে দিয়েছেন। ইউপি সদস্য আবুল হাশেম, রাশেদুল ইসলাম ও হাসান আলী চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো প্রজেক্টের কাজ করেছেন তার অধিকাংশই বিন্দু পরিমাণ কাজ না করে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। ইউপি সদস্যরা আরো অভিযোগ করেন, হাতিভাঙ্গার পশ্চিমপাড়ার মসজিদের সামনে ৮১ হাজার টাকার ফ্লাট সোলিং, দামুড়হুদা মাথাভাঙ্গা ব্রিজ সংলগ্ন বেড়িবাঁধের রাস্তার ২৯ হাজার টাকা ফ্লাট সোলিংসহ বিভিন্ন মাটির কাজের ব্যাপক অনিয়ম করে টাকা উত্তোলন করেছেন। যা সরেজমিন তদন্ত করলে প্রমাণ মিলবে। ২নং ওয়ার্ড সদস্য বিল্লাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমার ওয়ার্ডে মহিলা মেম্বার সাবিয়া ও পোড়াপাড়ার আব্দুল আলিম মিলে যে তালিকা করেছেন তাতে মৃত ব্যক্তির নাম, ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর নামে লিস্ট করা হয়েছে। এমনকি অস্তিস্ত নেই এমন ব্যক্তিরও নাম দেয়া হয়েছে। ইউপি সদস্যের স্বামী আতিয়ার দীর্ঘদিন ধরে ওই সমস্ত অনিয়মগুলো করে আসছেন।

এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, আমি নিজে ওই নামের লিস্ট চেক করে সত্যতা পেয়েছি। চেয়ারম্যানের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের বিষয়ে যে সমস্ত অভিযোগগুলো করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a comment