মাত্র ১৫ দিনেই ধান গাছে শীষ : ফলন না হওয়ার আশঙ্কা

কৃষি বিভাগের দেয়া ভর্তকির বীজ ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ ঝিনাইদহের হতদরিদ্র কৃষকরা

 

ঝিনাইদহ অফিস: দরিদ্র কৃষকদের ভর্তুকির মাধ্যমে দেয়া কৃষি বিভাগের বীজ ব্যবহার করে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ঝিনাইদহের কৃষকরা। নেরিকা জাতের ওই বীজ ব্যবহারে কৃষকদের ক্ষেতের ধান গাছে মাত্র ১৫ দিনেই শীষ এসে গেছে। এই শীষ থেকে ধান পাওয়া যাবে না, অল্প দিনেই চিটা হয়ে গাছ নষ্ট হয়ে যাবে। কৃষকদের আশঙ্কা আমন মরসুমে দেশীয় জাত ব্যবহার করে তারা বিঘা প্রতি ২০ মণ ধান পেতেন, আর এখন পাবেন মাত্র ২ মণ।

কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, সরকার তাদের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে বিনামূল্যে ধান বীজ দিয়েছিলো। কিন্তু কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এমন জাত তাদের মাঝে সরবরাহ করে যা চাষ করে তারা সচ্ছলতার পরিবর্তে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেক কৃষক বিনামূল্যে বীজ পেয়ে জমি বর্গা নিয়ে ধার-দেনা করে চাষ করেছেন। তারা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে গেলেন। এখন তাদের দেনা পরিশোধ করতে হিমসিম খেতে হবে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মরসুমে হতদরিদ্র কৃষকদের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে সরকার বিনামূল্যে ধান বীজ সরবরাহ করে। ঝিনাইদহ জেলায় ১৬৯০ জন কৃষককে মাঝে ১০ কেজি হারে ১৬ হাজার ৯শ কেজি ধানের বীজ সরবরাহ করা হয়। কৃষি বিভাগ নেরিকা জাতের বীজ দেয় কৃষকদের হাতে। একইভাবে ২২৭ জন কৃষকের মাঝে ৫ কেজি হারে ১ হাজার ১৩৫ কেজি দেশীয় উফসী জাতের বীজ দেয়া হয়। নেরিকা জাত চাষ করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অধিকাংশ কৃষকের ক্ষেতে ধান গাছে অসময়ে শীষ এসে গেছে। অল্পদিনেই এগুলো চিটা তৈরি হয়ে যাবে।

সরেজমিনে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ফরিয়াদকাটি গ্রামে দেখা যায়, কৃষকের ক্ষেতে ধান গাছে শীষ এসে গেছে। কৃষকরা জানান, এই গ্রামের ৫ জন কৃষক ভর্তুকির বীজ পেয়েছিলেন। তাদের একজন আজগার আলী জানান, মাঠে চাষযোগ্য কোনো জমি নেই তার। লিজ নিয়ে জমি চাষ করেন। গরিব চাষি হওয়ায় তাকে ধান বীজ দেয়া হয়েছিলো। ১০ কেজি বীজ পেয়ে তিনি ৩৩ শতক জমি চাষ করেন। ১৫ হাজার টাকায় ওই জমি লিজ নিয়েছেন। চাষ করতে তার খরচ হয়েছে আরো ৫ হাজার টাকা। হিসাব অনুযায়ী আমন মরসুমের এই ধান চাষ তার খরচ হয়েছে ১২/১৩ হাজার টাকা। ওই জমিতে ধান পাবেন ২ থেকে ৩ মণ। তিনি জানান, এ ৩৩ শতক জমিতে তার ধান পাওয়ার কথা কমপক্ষে ২০ মণ।

কৃষক আজগার আলী আরো জানান, বীজ পাওয়ার পর তিনি গত ১ আগস্ট বীজতলায় বীজ ছেটান। এর ২২ দিন পর অর্থাৎ ২২ আগস্ট চারা উঠিয়ে জমিতে রোপণ করেন। আর রোপণের ১৫/১৬ দিন অর্থার্ৎ চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ৬ তারিখের মধ্যে ধান গাছে শীষ এসে গেছে। ফলে এই শীষ থেকে চাল তৈরি হবে না। তিনি জানান, কৃষি বিভাগের লোকজন তাদের জানিয়েছেন, এ নেরিকা জাতের জীবনকাল ৩ মাস। তারা সেই সময় হিসাব করে চাষ করছেন। তারপরও অসময়ে ধানের গাছে শীষ এসে গেছে। ওই এলাকার আরেক কৃষক আক্কাচ আলীও এক বিঘায় এই ধান চাষ করেন। তার জমিতেও একই অবস্থা বলে জানান। পার্শ্ববর্তী মঙ্গলপোতা গ্রামের ৫ কৃষক এই ধানের বীজ পেয়েছেন। তাদেরও একই অবস্থা বলে জানান কৃষকরা।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খালকুলা গ্রামেও বেশ কয়েকজন কৃষক এই বীজ ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আব্দুল মান্নান, রেজাউল ইসলাম, আক্কাচ আলী, হুমায়ন কবির এক বিঘা করে চাষ করেন। তাদের সকলের ধান গাছেই শীষ এসে গেছে বলে জানান। জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও একই অবস্থা বলে কৃষি বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে।

কৃষি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন তারা কৃষকদের কোনো পরামর্শ দিতে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। কারণ যারা ভর্তুকির বীজ পেয়েছেন তারা সবাই দরিদ্র কৃষক। এই ফলন নষ্ট হওয়ায় তারা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাদের আর্থিকভাবে লাভবানের পরিবর্তে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হলেন।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগের উপপরিচালক হযরত আলী বলেন, বিষয়টি তারা জেনেছেন। কয়েকটি ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। তিনি দাবি করেন, জাতটি আমাদের অঞ্চলে নতুন। যে কারণে কৃষকরা ঠিকমতো চাষ করতে না পারায় এটা হতে পারে। তাছাড়া বীজের কোনো সমস্যা আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, বীজের কোনো সমস্যা আছে বলে মনে হয় না।