শিশু সন্তানদের সামনেই মাকে হত্যা করলো বাবা

স্টাফ রিপোর্টার: যে পিতার বুক সন্তানের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল, সেই পিতাই হয়ে উঠলো ভয়ঙ্কর খুনি। সন্তানসহ স্ত্রীকে খুন করেছে এক মানুষরূপী নরপশু। গ্রেফতারের পর অবশ্য ঘাতক খুনের কথা পুলিশের কাছে স্বীকাও করেছে।

জানা গেছে, ছোট মেয়েটির বয়স মাত্র ১৪ দিন, এখনও তার নাম রাখা হয়নি। আর বড় ছেলে অরিমের বয়স চার বছর। মায়ের স্নেহ ও মমতা থেকে এই ছোট্ট শিশু দুটিকে চিরতরে বঞ্চিত করলো তাদের পাষণ্ড বাবা। সন্তানদের সামনেই তিনি হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছেন স্ত্রীকে।

রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর পূবাইল এলাকায় গত শনিবার রাতে এই নৃশংস ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ গতকাল রবিবার বিকালে শিশু দুটির বাবা সাজ্জাদুল ইসলাম রাসেলকে গ্রেফতার করেছে। যিনি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন। নিহত গৃহবধূর নাম সুরভি আক্তার (২৬)। যাত্রাবাড়ী থানার এসআই মো. শাহজাহান জানান, পূবাইল এলাকার ৩২৯/১/এ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে বাচ্চাদের অব্যাহত কান্নার শব্দ শুনে পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা গিয়ে দেখেন বাইরে থেকে বাসাটি তালাবন্ধ। ফ্ল্যাটের আশপাশের বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতরে ঢুকেই সবাই হতবাক হয়ে যান। দেখেন খাটের উপর চিত্ হয়ে শুয়ে আছেন একজন নারী। তার একদিকে চার বছরের একটি শিশু কাঁদছে আর অন্যদিকে ১৪ দিনের আরেকটি শিশু কাঁদছে। ওই নারীর মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছে। পুলিশ ওই নারীকে তুলতে গিয়ে দেখেন তিনি আসলে মারা গেছেন।

এসআই শাহজাহান সকালে জানান, ‘আমরা ধারণা করছি, শনিবার রাতের কোন এক সময় সুরভিকে তার স্বামী ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে হত্যার পর বাসার বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়। সুরভির লাশটি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সুরভি আক্তারের ভাই শামসুজ্জামান বাদী হয়ে এই ঘটনায় মামলা করেছেন।’

এদিকে রাতে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান,  বিকালে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। তার দাবি, পারিবারিক কলহের জের ধরে তিনি তার স্ত্রীকে হত্যা করেছেন। নিহত সুরভির বড় ভাই শামসুজ্জামান জানান, রাসেল আকাবা টিম্বার নামে একটি কাঠ বিক্রির দোকানের মালিক। এরপরও বিভিন্ন সময় টাকা-পয়সা চাইতো সে। সে মাদকসেবী জানতে পেরে তাকে টাকা-পয়সা দেয়া বন্ধ করে দেই। এর জের ধরেই তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি অবনি শংকর কর বলেন, যে ভবনটি থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ওই বাড়িটির অন্য চারটি ফ্ল্যাটে রাসেলের চার ভাই পরিবার নিয়ে থাকেন। রাসেল যে হাতুড়ি দিয়ে তার স্ত্রীকে হত্যা করেছেন সেই হাতুড়িটিও উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে, রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে রিয়াজ উদ্দিন (৮) নামে এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। রিয়াজ স্থানীয় একটি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিল। উত্তরায় হযরত আলী (৫৭) ও শ্যামলীতে ইউনূস (৩৮) নামে দুই ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। এছাড়া ফকিরাপুলের একটি বাসা থেকে সাবিনা আক্তার (১৮) নামে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ছাদ থেকে পড়ে নিহত রিয়াজের নানা সুরুজ্জামান জানান, গতকাল দুপুর পৌনে ১টার দিকে মেরাদিয়া ভূইয়াপাড়া তাদের ২৩৪/১/২ নম্বর বাড়ির ছাদে ঘুড়ি উড়াতে যায় রিয়াজ। কিছুক্ষণ পরে ছাদ থেকে কিছু একটা পড়ার শব্দ শুনে নিচে ছুটে গিয়ে দেখেন রিয়াজ পড়ে আছে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বনশ্রী এলাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিত্সার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শেরেবাংলা নগর থানার এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, গতকাল বিকেল ৪টার দিকে শ্যামলী এপেক্স গ্যালারির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আর্শিবাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী ইউনূসের মৃত্যু হয়। এতে ওই মোটরসাইকেলের পিছনে থাকা আট বছরের এক শিশু আহত হয়েছে। শিশুটিকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ আটক হয়নি। এছাড়া গত শনিবার রাত ১১টার দিকে উত্তরা রাজলক্ষী কমপ্লেক্সের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসের ধাক্কায় হযরত আলী আহত হয়। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিত্সক রাত ১টা ৪০ মিনিটে মৃত  ঘোষণা করেন।

অপরদিকে গতকাল বিকেলে ফকিরাপুলের গরম পানি গলির ২৫১/এ নম্বর বাসা থেকে সাবিনার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সাবিনা ওই এলাকার বাসা-বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদিতে।