ছাত্রদলের নয়া কমিটি শেষ মুহূর্তে বাতিল

 

স্টাফ রিপোর্টার: ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ‘সুপার ফাইভে’র নাম প্রায় চূড়ান্ত। তালিকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার টেবিলে। একটু পর তিনি কমিটিতে সই করবেন। সই করতে গিয়েও করলেন না তিনি। হাতে কলম তুলে নিয়েও রেখে দিলেন। শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে গেলো ছাত্রদলের নয়া কমিটি ঘোষণা।

গত বুধবার রাতে খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদল কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে কমিটি সই থেকে বিরত থাকেন তিনি। এর আগে রাতের পর রাত ছাত্রদলের বর্তমান এবং সাবেক নেতাদের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মতবিনিময়, আলাপ-আলোচনা, রুদ্ধদ্বার বৈঠক, সলাপরামর্শ করেছেন খালেদা জিয়া এই কমিটি প্রণয়নের জন্য। সবাই ভেবেছিলো বিবাহিত-অছাত্রমুক্ত একটি কমিটি হবে। কিন্তু সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহসভাপতি, সিনিয়র যুগ্মসম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে যাদের রাখা হয়েছিলো তাদের ব্যাপারে ব্যাপক আপত্তি ওঠে নেতাকর্মীদের মধ্যে থেকে।

কমিটি ঘোষণার কথা শুনে নেতাকর্মীরা দুপুরের পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থেকে গুলশান কার্যালয়ের আশেপাশে জড়ো হন। রাতে শুরু হয় প্রায় এক হাজার ছাত্রদল কর্মীর বিক্ষোভ। রাত ৯টায় খালেদা জিয়ার গাড়ি কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে সাধারণ নেতা-কর্মীরা তার গাড়ি ঘেরাও করে রাখে। তারা শ্লোগান দিতে থাকেন বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের বিরুদ্ধে।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, পৃথক সিন্ডিকেট খালেদা জিয়াকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নতুন কমিটি বের করে আনার চেষ্টা করেছে। খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করেন বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করবেন। বেগম জিয়া দোতলায় তার কক্ষে গিয়ে বসলে তার সাথে এই বিষয়ে কথা বলেন তার একজন উপদেষ্টা এবং দু ব্যক্তিগত কর্মকর্তা। কমিটিতে চূড়ান্ত হওয়া পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ তারা তুলে ধরেন বেগম জিয়ার সামনে। তারা পরামর্শ দেন কমিটি ঘোষণা না করে আরো সময় নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে। পরে বেগম খালেদা জিয়া কয়েকজন ছাত্র নেতাকে ডাকেন। ছাত্র নেতারা তাদের অভিযোগের কথা জানান। কমিটি হওয়ার আগে ক্ষোভ প্রকাশের জন্য ছাত্র নেতাদের ধমকান খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়াকে তারা বলেছেন, প্রস্তাবিত নয়া কমিটিতে স্থান লাভকারী পাঁচ জনের একেক জনের বিরুদ্ধে একেক অভিযোগ। প্রস্তাবিত সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ অতীতে আন্দোলন-সংগ্রামে তার কোনো ভূমিকা ছিলো না। তার পরিবারের সাথে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ও দুর্নীতিপরায়ন। সাংগঠনিক সম্পাদক, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক বিবাহিত।

বেগম জিয়ার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, আপাতত কমিটি ঘোষণা হচ্ছে না। এই ব্যাপারে নতুন করে চিন্তাভাবনা চলছে। বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপ এবং সংগঠনের মধ্যে বিদ্রোহের আশঙ্কায় ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তার আবর্তে পড়েছে। সরাসরি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না করে ছাত্রদলের সিনিয়র নেতাদের সুপার ফাইভে রেখে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের সমন্বয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে খালেদা জিয়ার কাছে সুপারিশ করেন দলের নেতারা।