আজ ও রোববার জামায়াতের হরতাল

স্টাফ রিপোর্টার: সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতি ও আগামী রোববার সারাদেশে হরতাল ডেকেছে জামায়াত। একইসাথে আগামীকাল শুক্রবার সাঈদীর জন্য দোয়া এবং পরদিন শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। আপিল বিভাগের রায় ঘোষণার দু ঘণ্টা পর গতকাল বুধবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান এ কর্মসূচির ঘোষণা করেন। প্রথম দফায় বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা এবং দ্বিতীয় দফায় রোববার ভোর ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা সারাদেশে হরতাল পালিত হবে। ঘোষিত কর্মসূচি গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে পালন করার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল আপিল বিভাগের রায়ের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন, দেলু শিকদার নামের কুখ্যাত রাজাকারের অপকর্মের দায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ওপর চাপানো হয়। বিচার প্রক্রিয়ার প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়। সরকারের সাজানো মিথ্যা মামলায় আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালতেও তিনি ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়ে চরম জুলুমের শিকার হলেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদী রিভিউ আবেদন করবেন জানিয়ে বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করা হয়, সাঈদী সেখানে ন্যায় বিচার পাবেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সাঈদী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়। সরকার এ মামলায় তাকে ফাঁসানোর জন্য বেলজিয়াম থেকে পাঠানো জনৈক জিয়াউদ্দীনের পাঠানো চার্জ ফ্রেমিং অর্ডারের ওপর ভিত্তি করে চার্জ গঠন করে। ধানচোর, কলাচোর, ট্রলার চোর, যৌতুক আইনে দণ্ডপ্রাপ্ত ও বিভিন্নভাবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের সাক্ষী হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করে সরকার। ১৬ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির না করে তাদের জবানবন্দিকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। স্কাইপে কেলেঙ্কারির পর সংশ্লিষ্ট বিচারক পদত্যাগ করলেও তার রেকর্ড করা জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে ট্রাইব্যুনালে রায় প্রদান করা হয়। ১৯৭২ সালে ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগমের দায়ের করা মামলা ও চার্জশিটের সার্টিফাইড কপি আদালতে জমা দেয়ার পরও তা আমলে নেয়া হয়নি বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বিবৃতিতে তারা বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে ন্যায়বিচার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ রায় বহাল থাকলে জেলের ভিতরেই তাকে ইন্তেকাল করতে হবে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

উল্লেখ্য, জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে হত্যা, ধর্ষণ, লুট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদীর আপিল শুনানির পর গতকাল বুধবার আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। গত বছর ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সারাদেশে সহিংস বিক্ষোভে নামেন জামায়াতকর্মীরা। তাদের তাণ্ডবে প্রথম তিনদিনেই নিহত হন পুলিশসহ অন্তত ৭০ জন মানুষ। গাড়ি, বাড়ি এমনকি বিদ্যুতকেন্দ্রও পুড়িয়ে দেয়া হয়।