ঝিনাইদহে ডক্টরস ক্লিনিকে দম্পত্তি হত্যার ঘটনায় মামলার হয়নি : ৫ লাখ টাকায় মীমাংসার অভিযোগ

 

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ শহরের ডক্টরস ক্লিনিকে স্বামী-স্ত্রী হত্যার ঘটনা প্রভাশালীদের চাপে অর্থের বিনিময়ে মীমাংসার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এখনও থানায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, নিহত দম্পত্তির পরিবার মামলা করতে অস্বীকৃতি জানালে মঙ্গলবার পুলিশ বাদী হয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করবে। এদিকে ঘটনার কারণ জানতে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন।

জানা গেছে, মাগুরা সদর উপজেলার বগুড়া গ্রামের নিঃসন্তান দম্পতি জুয়েল হোসেন ও নাসরিন খাতুন শনিবার সকালে ঝিনাইদহ শহরে স্টেডিয়ামপাড়ার ডক্টরস ক্লিনিকে যান চিকিৎসা নিতে। পরে পরীক্ষার জন্য তাদের একটি কক্ষে পাঠানো হয়। প্রায় দু ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও তাদের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ক্লিনিকের লোকজন দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দুজনের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।

এদিকে প্রভাবশালীদের চাপে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সোমবার সকালে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে মীমাংসা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শহরে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। ঘটনার দু দিন পেরিয়ে গেলেও ঝিনাইদহ সদর থানায় এখনও কোনো মামলা দায়ের করেনি নিহত দম্পত্তির পরিবার। পরিবারের লোকজন জানিয়েছে, তারা কোনো মামলা করবেন না। নিহতের পিতা ঝন্টু চৌধুরী, এখন মামলা করে কোনো বিচার পাওয়া যায় না; উল্টো হয়রানির শিকার হতে হয়। আমরা গরিব মানুষ; মামলা করে জয়ী হতে পারবো না। তবে তিনি টাকা লেনদেনের কথা অস্বীকার করেন। নিহতের এক স্বজন বলেন, জোড়া খুন হইছে। এ ধরনের ঘটনা কোথাও ঘটে না। আমরা এর বিচার চাই, আসামিদের ফাঁসি চাই। এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে ক্লিনিকের মালিক ও ডাক্তার হামিদুন্নেছা পাখির বিচার দাবি করেছেন নিহতের স্বজনরা।

ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাবুদ্দীন আজাদ পিপিএম জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পুলিশ এখনও হাতে পায়নি। এটি পেলে আরও তদন্ত করে দেখা হবে। আত্মীয় স্বজন যদি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সাথে কোনো মীমাংসা করে তাহলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবারও কোনো কথা বলতে রাজি হননি ক্লিনিক মালিক ডা.হামিদুন্নেসা পাখি। পরিবারের লোকজন বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকেই তিনি অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। সোমবার ডক্টরস ক্লিনিক ও নবগঙ্গা প্যাথলজি বন্ধ দেখা গেছে। তবে তার স্বামী কাজী গিয়াস আহমেদ, জানান, এটা একটা দুর্ঘটনা। তিনি মীমাংসার কথা অস্বীকার করেন। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মৃত্যু হয়নি বুঝতে পেরে নিহতের পরিবার মামলা করেনি বলে দাবি করেন তিনি।

ঝিনাইদহের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. একেএম কামাল জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে রোববার ডা. ইমদাদুল হককে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কোনো গাফলতি থাকলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ঝিনাইহের ডক্টরস ক্লিনিকে এর আগেও ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় অনেকের অপমৃত্যু হয়েছে। ক্লিনিকের মালিক ডা.হামিদুন্নেসা পাখি কোনো সরকারি চিকিৎসক নন। নামমাত্র ডাক্তারি পাস করে এসে ২০ বছর ধরে তিনি ক্লিনিক খুলে ব্যবসা করে আসছেন। কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।