আলমডাঙ্গার দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন দুটি ইউপি কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত

 

পাঠদান ব্যহতসহ শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মুখে!

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার খাদিমপুর ও নান্দবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটিতে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিদ্যালয় দুটির শিক্ষা প্রসারে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। খাদিমপুর ইউপি ও গাংনী ইউপির কার্যালয় দুটি বিদ্যালয় অভ্যন্তরে থাকায় লেখাপড়ার স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

খাদিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিগত ২০১১ সাল থেকে খাদিমপুর ইউপি কার্যালয় ও নান্দবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৬ সাল থেকে গাংনী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

খাদিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো শ্রেণিকক্ষ না থাকায় পাঁচশতাধিক শিক্ষার্থীকে পালাক্রমে বটগাছের নিচে ও নান্দবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সাতশ শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষের অভাবে মেঝেতে বসে কোনোক্রমে পাঠদান চালিয়ে নিতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার পাঠদান ব্যাহতসহ অন্যান্য কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে। এলাকাবাসী অবিলম্বে বিদ্যালয় দুটি থেকে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম সরিয়ে অন্যত্র নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গার খাদিমপুর ইউনিয়ন পরিষদটি বিভক্ত হয়ে ২০১১ সালে চিৎলা ইউনিয়ন গঠন করা হয়। এর আগে খাদিমপুর ইউপির কার্যালয় হিসেবে গোকুলখালীতে ইউনিয়ন ভবন ব্যবহৃত হতো। ওই ভবনটি চিৎলা ইউনিয়ন এলাকায় হওয়ায় তা চিৎলা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে খাদিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ কোনো স্থান না পেয়ে খাদিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে বিদ্যালয়টির পুরাতন ভবনের চারটি শ্রেণিকক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণার পর আর কোনো শ্রেণিকক্ষ না থাকায় বর্তমানে বিদ্যালয় চত্বরে বটগাছের নিচে রোদে পুড়ে কোনো রকমে ক্লাস করছে। তবে একটু বৃষ্টি হলেই ক্লাস বন্ধ করে ছুটি দিতে বাধ্য হন শিক্ষকরা। এভাবে বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান ক্রমেই অবনতির দিকে চলে যাচ্ছে।

এদিকে আলমডাঙ্গার গাংনী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি ১৯৯৬ সালে আসমানখালী বাজারে পুলিশ ফাঁড়িকে ছেড়ে দিলে পার্শ্ববর্তী নান্দবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনটি শ্রেণিকক্ষ দখল করে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম শুরু করে। এখন পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ করা হয়নি। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। প্রয়োজন হয় শ্রেণিকক্ষের। কিন্ত বিদ্যালয়টি থেকে দীর্ঘ ১৮ বছরেও ইউনিয়ন কার্যালয়টি সরানো হয়নি। ১৯৯২ সাল থেকে সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে। শিক্ষার উন্নতির জন্য বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বর্তমান সরকারও ঘোষণা করেছে। অথচ আলমডাঙ্গার এ দুটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় লেখাপড়া দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেই চলেছে বিদ্যালয় দুটিতে।

গাংনী ইউনিয়ন এলাকার বাসিন্দা চুয়াডাঙ্গা জজকোটের্র আইনজীবী মো. হাফিজুর রহমান জানান, গাংনী ইউনিয়ন ভবন দীর্ঘ ১৮ বছরেও নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ না করায় যেমন ইউনিয়নের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি বিদ্যালয়ের লেখাপড়ারও দারুণভাবে বিঘ্ন ঘটছে। বিষয়টি সমাধান হওয়া দরকার। পাশাপাশি গাংনী ও খাদিমপুর ইউপির বিষয়টি আর কাল বিলম্ব না করে এখনই অন্যত্র বাড়িভাড়া কিংবা চেয়ারম্যানদের বাড়িতে ইউনিয়ন কার্যালয় দুটি শিফট হওয়া উচিত।

খাদিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদুল কবীর জানান, বিদ্যালয়ের ৫০৩ জন শিক্ষার্থী বর্তমানে গাছতলায় পড়াশোনা করছে। চারজন শিক্ষক একই সাথে পড়াশোনা করাচ্ছেন। ইউনিয়ন ভবন ২০১২ সাল থেকে বিদ্যালয় ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ফলে শিক্ষার কার্যক্রম ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।

গাংনী ইউপির নান্দবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হাশেম জানান, বিদ্যালয়টিতে ৭৪১ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। বিদ্যালয়ের তিনটি রুম দীর্ঘদিন ধরে গাংনী ইউপির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।

আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গাংনী ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুর ইসলাম জানান, নান্দবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এতে পড়াশোনার বিঘ্ন ঘটছে। বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকও জানেন। তবে বিকল্প ব্যবস্থা করার সময় হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাদিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজালাল বিশ্বাস ব্যানা জানান, বিদ্যালয়ের নতুন ভবন ছেড়ে দিয়ে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দিন মালামালগুলো বিদ্যালযের পরিত্যক্ত ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

গাংনী ইউপি চেয়ারম্যান মো. রেজাউর রহমান জানান, ইউনিয়ন পরিষদের নতুন ভবন তৈরির কোনো উদ্যোগ দেখছি না। তবে ইউপির পুরাতন ভবন পুলিশ ছেড়ে দিলে ইউপি কার্যালয় স্থানান্তর করা হবে।

আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা খাদিমপুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিনা আকতার বানু জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানোর পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে অবগত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোক্তার হোসেন সরকার জানান, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি অত্যন্ত জরাজীর্ণ। এ ভবনে শ্রেণিপাঠের কাজ পরিচালনা করা যায় না। শিশুরা যাতে ওই ভবন ব্যবহার না করে সেদিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিদ্যালয়ের নতুন একটি ভবনে ইউপি অফিস চলছে। বিদ্যালয়ে ইউপি অফিসটি প্রত্যাহার করে শিশুদের লেখাপড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য বলা হয়েছে। বিষয়টি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকেও অবগত করা হয়েছে।

আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হেলাল উদ্দিন গত ৪ সেপ্টেম্বর খাদিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যান। বিদ্যালয় ভবনটি দখলমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিক্ষক-অভিভাবক ফোরামের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোত্তালিব জানান, বিদ্যালয় দুটির অভ্যন্তরে ইউপি কার্যালয় কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আশা করবো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরত্বের সাথে বিবেচনা করে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মল্লিক সাঈদ মাহবুব জানান, এ বিষয়ে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।