ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম উপলক্ষে মতবিনিময়সভায় নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী

 

২০১৫ সালে ভোটারদেরকে স্মার্টকার্ড দেয়া হবে : সংবিধান অনুযায়ীই অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা, দামুড়হুদা, মেহেরপুর ও গাংনী ছবিসহ ভোটারতালিকা হালনাগদ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী। তিনি চুয়াডাঙ্গায় বলেছেন, ২০১৫ সালে ভোটারদেরকে জাতীয় পরিচয় পত্রের পরিবর্তে স্মার্টকার্ড দেয়া হবে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১০টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময়সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমিশনার এ কথা বলেন।

জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মজিবুর রহমান, জেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মল্লিক সাঈদ মাহবুব ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, ‘চলমান ভোটার তালিকা নিয়ে কারো কোনো সুপারিশ থাকলে তা সানন্দে গ্রহণ করা হবে। সবাই মিলে সহযোগিতা করলে নির্ভুল ভোটার তালিকা পাওয়া সম্ভব। স্থানীয় মেয়র, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা জনগণকে সচেতন করে নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করতে সহযোগিতা করবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র তখনই পাওয়া যাবে যদি সে ভোটার হয়। ২০০৮ সালে ওয়েব ক্যাম্পের মাধ্যমে সারাদেশে ৮ কোটি ভোটারের ছবি তোলার কাজ করা হয়। এ কারণে ছবি কিছুটা অস্পষ্ট হয়। তবে এবার সারাদেশে ৪৫ লাখ ভোটারের রেজিস্ট্রেশন শেষে ডিজিটাল ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তোলা হচ্ছে। এবারের ছবি স্পষ্ট হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের মেয়াদ নির্ধারণ করা আছে ১৫ বছর। তার আগেই বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় অত্যাধুনিক স্মার্টকার্ড তৈরি করে আগামী বছরেই ভোটারদের হাতে দেয়া হবে। হালনাগাদ ভোটার তালিকা চলমান প্রক্রিয়া। প্রতি বছর ২ জানুয়ারি হালনাগাদ ভোটার তালিকার কার্যক্রম শুরু হয়।’

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে এখন যেসব ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) আছে সেগুলো কার্যকর, দু-একটি ঘটনা বা খবর যা পাওয়া যায় তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা, ওইগুলোকে কারিগরি ত্রুটি বলা যায়। তবে জাতীয় নির্বাচন ইভিএম পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কোনো সুযোগ আপাতত নেই। কারণ এটি নির্বাচন কমিশনের আইনের বাইরে।

জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন সভার শুরুতেই চুয়াডাঙ্গা জেলার হালনাগাদ ভোটার তালিকার কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলায় হালনাগাদ ভোটার তালিকার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বর্তমানে দামুড়হুদা উপজেলায় কার্যক্রম চলছে। দামুড়হুদা উপজেলা শেষ হলে জীবননগর উপজেলার হালনাগাদ ভোটার তালিকার কার্যক্রম শুরু হবে। একজন ব্যক্তিও যেন ভোটার তালিকা থেকে বাদ না পড়ে। যারা মারা গেছেন তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। কর্তনের সুযোগ আছে।’

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান, সাবেক অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, জেলা তথ্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান, তিতুদহ ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন ও কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। এ সময় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কেএম মামুনউজ্জামান, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাফিজ ও আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আনিছুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিউল্লাহ, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক হযরত, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী নিশিত রঞ্জন পাল, ইউপি চেয়ারম্যানগণ ও সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় শেষে নির্বাচন কমিশনার চুয়াডাঙ্গার ভিমরুল্লায় ১ কোটি ৩১ লাখ ৬ হাজার টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত জেলা সার্ভারস্টেশন উদ্বোধন করেন। এরপর বেলা ১২টায় দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুরে ভোটার হালনাগাদ কর্মসূচি কর্মকাণ্ড ঘুরে ঘুরে দেখেন। এ সময় দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু দাউদসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে তিনি উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নে পরিচালিত ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মল্লিক সাঈদ মাহবুব, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আনিছুর রহমান, দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু দাউদ, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এমএজি মোস্তফা ফেরদৌস, জুড়ানপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী বলেছেন, সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। আইনে বিষয়টি স্পষ্ট রয়েছে। এর বাইরে ইসির কিছুই করার নেই। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নবনির্মিত মেহেরপুর জেলা সার্ভার স্টেশন উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথাগুলো বলেন।

গতকাল দুপুর ২টার দিকে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে নির্মিত সার্ভার স্টেশনের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন ইসি জাবেদ আলী। এক কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ করেছে মেহেরপুর গণপূর্ত অধিদপ্তর।

সরকারি সফরের অংশ হিসেবে তিনি দুপুর ১টার দিকে মেহেরপুর সার্কিট হাউজে পৌঁছুলে জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। এ সময় জেলা পুলিশের একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছে, মেহেরপুর গাংনী উপজেলা সার্ভারস্টেশন (নির্বাচন অফিস) পরিদর্শন করেছেন নিবার্চন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে তিনি গাংনী সার্ভার স্টেশনে পৌঁছুলে গাংনী উপজেলা নিবার্হী অফিসার আবুল আমিন, পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী, উপজেলা নিবার্চন অফিসার সরোয়ার হোসেন ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল আলম তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলাম, তেঁতুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস, মটমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, কাথুলী ইউপি চেয়ারম্যান কাবুল হোসেন, কাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলম হোসাইন প্রমুখ। ভোটা তালিকা হালনাগাদ বিষয়ে তিনি সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় করেন।