ঢাকায় বাংলাদেশ-জাপান শীর্ষ বৈঠক : সহযোগিতার নতুন যুগ শুরু হলো বলে মন্তব্য জাপানি প্রধানমন্ত্রীর

 

 

নিরাপত্তা পরিষদে জাপানের সমর্থনে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহার

স্টাফ রিপোর্টার: জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদে জাপানের সমর্থনেপ্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৬-২০১৭ মেয়াদে এশীয়প্রশান্ত মহাসাগরীয় গ্রুপ থেকে বাংলাদেশ ও জাপান নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ীসদস্য পদে প্রার্থী ছিলো। জাপানের সফররত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অনুরোধেপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণাদেন। প্রধানমন্ত্রীর এ উদারতায় গভীর কৃতজ্ঞতা জানান জাপানি প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গতকাল শনিবার বিকেলে প্রায় এক ঘণ্টা দ্বিপাক্ষিকবৈঠক শেষে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাকরার এ ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ঢাকা ও টোকিও সম্পর্ক আরোসমন্বিত ও বলিষ্ঠ অংশীদায়িত্ব পর্যায়ে উন্নীত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ২০১৪ সালটি আমাদেরসম্পর্কের ক্ষেত্রে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ বছরে আমরা দু প্রধানমন্ত্রীএকে অপরের দেশ সফর করি। আমরা সহযোগিতা আর অংশীদারিত্বের নতুন যুগে প্রবেশকরলাম।

জাপান আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে তার বক্তব্যে বলেন, আমাদেরউন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জাপানের অব্যাহত জোরদার সমর্থন রয়েছে। সে জন্যইনিরাপত্তা পরিষদের নির্বাচনে আমরা জাপানকে সমর্থন দেবো। বাংলাদেশও নির্বাচনথেকে সরে দাঁড়াবে। এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর ঐক্যের স্বার্থেই এইসিদ্ধান্ত।স্বাধীনতার পর ১৯৭৯-৮০ ও ১৯৯৯-২০০০ মেয়াদে বাংলাদেশনিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদে বিজয়ী হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবলেন, কয়েক বছর আগে আবার আমরা প্রার্থিতা ঘোষণা করি। জাপানও একই গ্রুপ থেকেপ্রার্থী হয়। জাপান সরকার ও সেদেশের জনগণ আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধেঅকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। ৪৩ বছরে জাপান ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিকসহায়তা দিয়েছে। আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে আরও ছয় বিলিয়ন ডলার দেবে।

তিনি বলেন, আশাকরি জাপানের প্রতিশ্রুতি কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণের মধ্যেইসীমাবদ্ধ থাকবে না। গত মে মাসে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সকল ক্ষেত্রকেসম্প্রসারণ ও সুদৃঢ় করতে আমরা সমন্বিত অংশীদারিত্ব কর্মসূচি উদ্বোধন করেছি।অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনের জন্য সহায়তা দিতে জাপান বে অব বেঙ্গলইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট-বিগ বি কর্মসূচি উদ্বোধন করেছে। শেখ হাসিনাবলেন, জাপানের নির্মাণ শিল্প, স্বাস্থ্য ও নার্সিং খাতে আমরা সহযোগিতারপ্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা ও শান্তি স্থাপন কার্যক্রমেজাপান সবসময়ই সহযোগিতা দিয়ে আসছে। ঢাকায় একটি শান্তিরক্ষা কেন্দ্র গড়েতুলতে জাপান কারিগরি সহায়তা দেবে।

আমি অভিভূত:জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতায়আমি অভিভূত। আমি ও জাপানের জনগণ এই সিদ্ধান্তের অত্যন্ত প্রশংসা করি। এইসিদ্ধান্ত দুদেশের বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনকরবে। জাপান বাংলাদেশকে আগামী দিনে সহায়তা দিয়ে যাবে। আগামীতে পরমাণুশক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারেও বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে জাপান।জাপানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ৪-৫ বছরে ৬ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেয়া হবে। ইতোমধ্যে মে মাসে এক দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছে।দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে দু প্রধানমন্ত্রী প্রায় আধ ঘণ্টা একান্ত বৈঠক করেন। পরে দু প্রধানমন্ত্রী যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষর করেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানি প্রধানমন্ত্রীকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরদুটি অ্যালবাম উপহার দেন। শিগগিরই জাপানকে দুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার উপহারহিসেবে পাঠাবে বাংলাদেশ।

জাপানি প্রধানমন্ত্রী দু দেশের স্মারকমুদ্রা সম্বলিত স্মারক উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। মুদ্রারএকদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি রয়েছে।দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীনসরুল হামিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

লালগালিচা সংবর্ধনা: জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও তার স্ত্রী আকি আবে দুপুরে ঢাকা এসেপৌঁছুলে তাদের লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী, তারস্ত্রী ও তাদের সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিশেষ বিমানটি বেলা ১২টা ৫০ মিনিটেহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ভিভিআইপি টারমাকেপৌঁছুলে শিনজো আবে ও তার স্ত্রী আকি আবেকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা। এ সময় দু শিশু তাদের ফুলের তোড়া উপহার দেয়।