চিকিৎসক না হয়েও চিকিৎসা দেয়ায় ঘটেছে বিপত্তি : ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: ভুল চিকিৎসায় রোগী মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে আলমডাঙ্গার ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টারের বিরুদ্ধে। বণ্ডবিলের দরিদ্র কৃষক বুদো আকস্মিক বুকে ব্যথা নিয়ে গতকাল শনিবার সকালে ওই ক্লিনিকে ভর্তি হলে অপচিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুর রহমান চৌধুরী ডাক্তার না হয়েও চিকিৎসা করতে গিয়ে ওই বিপত্তি ঘটান। এ ঘটনায় পুলিশ ক্লিনিকের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে গ্রেফতার করেছে।

জানাগেছে, আলমডাঙ্গার পৌর এলাকার বণ্ডবিল গ্রামের মৃত শুকুর আলী জোয়ার্দ্দারের ছেলে বুদো (৪৫) দরিদ্র কৃষক। গতকাল সকালে উঠে তিনি পাট ধুতে বের হন নিকটবর্তী গাঙে। সকাল ৯টার দিকে তিনি বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করলে বাড়ি ফিরে আসেন। তাকে দ্রুত আলমডাঙ্গা শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে একতা ক্লিনিকে নেয়া হলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ভর্তি নেয়নি।ওই সময় ক্লিনিকে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না।পরে নিকটবর্তী হাজি মোড়ে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ উঠেছে,ওই সময় ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টারেও কোনোচিকিৎসক ছিলেন না। তা সত্ত্বেও বুকে ব্যথা রোগীকে ভর্তি করে ওয়ার্ডবয়কে সাথে নিয়ে ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুর রহনান চৌধুরী নিজেই চিকিৎসক বনে যান। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পরপর ২টি ইনজেকশন পুশ করেন মুমূর্ষু রোগীর শরীরে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইনজেকশন দেয়ার সাথে সাথেই তার মৃত্যু ঘটে। এ সময় মৃতের স্বজনরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ক্লিনিকের কয়েকটি টুল ভাঙচুর ও ঘেরাও করে। ঘটনাটি জানতে পেরে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্লিনিক মালিক সাইদুর রহমান ও ভুল চিকিৎসার নায়ক ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুর রহমান চৌধুরীকে গ্রেফতার করে। সাইদুর রহমান উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে। আমিনুর রহমান চৌধুরী আলমডাঙ্গা শহরের আলিফ উদ্দীন রোডের মৃত ফিরোজ চৌধুরীর ছেলে।

গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুর রহমান চৌধুরী জানান, রোগীকে ২টি ইনজেকশন দেয়া হয়। ন্যালবোফিন২ মি. গ্রাম ও সারজেন ৪০ মি. গ্রাম। তিনি কী আদৌ কোনোচিকিৎসক যে এমন রোগীকে চিকিৎসা দিতে গেলেন?এ প্রশ্নের জবাবে তিনি নিজের দোষ ক্লিনিকের ওয়ার্ডবয় এনামুলের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা করেন। জানান তিনি ইনিজেকশন দেননি,দিয়েছে এনামুল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই সময় একটা স্যালাইনও পুশ করা হয়েছিলো। আটক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজের দোষ এবার চিকিৎসকের ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা করেন। বলেন, তিনিচিকিৎসক সালামের পরামর্শ নিয়ে ওই চিকিৎসা দেন। এ ব্যাপারে চিকিৎসক সালামের সাথে কথা বললে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাকে শুধু তাড়াতাড়ি ক্লিনিকে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিলো। চিকিৎসা কিংবা কোনোওষুধ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। ফোন পাওয়ার পর তিনি তৈরি হয়ে ক্লিনিকে পৌঁছে দেখেন রোগী মারা গেছে। ন্যালবোফিন ও সারজেন ইনজেকশনের কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে কি-না? তা জিজ্ঞেস করলে আলমডাঙ্গার একাধিক অভিজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, তীব্র ব্যথার রোগীকে ন্যালবোফিন দেয়া যেতে পারে। কিন্তু হার্টের রোগীর ক্ষেত্রে নিষেধ। হার্টের রোগীকে এ ইনজেকশন দিলে পরিণতি এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

৪ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে বুদো ছিলেন তৃতীয়। স্ত্রী ছাড়াও তার রয়েছে ৩ মেয়ে। ছোট মেয়ে শিউলি এখনও অবিবাহিত।দরিদ্র কৃষক বুদোর অকাল মৃত্যুতে শোকে ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী,কন্যাসহ স্বজনরা। শোকে মুহ্যমান অশীতিপর বৃদ্ধ মা।

গতকাল শনিবার রাতে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা করা হয়নি। এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) নাজমুল হুদা বলেন, মামলার জন্য রাতে বারবার তাগাদা দিয়েও বুদোর স্ত্রী আসেননি। বুদোর ভাই বলেছেন, গ্রামের নেতাদের অনুমতি না নিয়ে তিনি মামলা করবেন না। গ্রামে মীমাংসার চেষ্টা চলছে।