ঝিনাইদহ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দুর্নীতির আখড়া

 

 

দলিল লেখক সমিতির নামে মাসে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে ১০ লাখ টাকা

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এখন দুর্নীতির আখড়া। যে যখন দখল নিতে পারে সেই বিনা পারিশ্রমিকে মাসে গুনতে পারে অন্তত দশ লাখ টাকার নগদ ক্যাশ। দলিল লেখক সমিতির নামে সিন্ডিকেট গঠন করে এই টাকা আদায় করা হয় জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দখল নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। অফিস এলাকায় দেশীয় অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলেছে চাঁদাবাজরা। অনেকে অভিযোগ করেছেন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এলাকার ক্লাব ঘরে গতকাল মঙ্গলবার বিপুল পরিমাণ রামদা ও লাঠিসোঁটা পেয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্ধার করেনি। মঙ্গলবার সকালে বিক্ষুব্ধ জনতা দলিল লেখক সমিতির নামে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ জানান। প্রায় দু’শ মানুষ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এলাকায় চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মিছিল করেন। ইতোমধ্যে দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেনকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে টাকা তোলার দায়িত্ব থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। নতুন করে খাজুরা গ্রামের আক্তারকে সভাপতি ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভাদড়া মোকিমপুর গ্রামের আলমকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এই কমিটি করতে সাধারণ দলিল লেখকদের নুন্যতম মতামত নেয়া হয় না। অনকেটা সাধারণ লেখকদের অগ্রাহ্য করে পেশীশক্তি ও দলীয় প্রভাবে নেতৃত্ব বদল হয়। আগের সম্পাদক মোশাররফের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা পকেটস্থ করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিয়মিত ঘাটে ঘাটে বখরাও দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু বিভেদের রাজনীতি মোশাররফকে নেতৃত্ব থেকে ছিটকে দিয়েছে। তাকে মারধর করে দখলে নেয়া হয় দলিল লেখক সমিতি। আরেকটা গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে লেখক সমিতি। এ জন্য নতুন করে কমিটিও সাজানো হয়েছে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, দলিল লেখক সমিতি স্থানীয় মসজিদের রশিদ নিয়ে বসে থাকে। সেই রশিদে মোট পনের টাকা বসিয়ে কৃষকের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। আর মসজিদের রশিদ দেখালে অফিসও বুঝে নেয় কৃষক সব মিটিয়ে এসেছে। অফিসের যাবতীয় খরচও মেটায় সমিতি। প্রতি সপ্তায় এই টাকা ভাগ হয়। মাসে চার দিন টাকা ভাগাভাগি করে নেয়া হয়। হেবা দলিলে মাত্র এক হাজার টাকা খরচ হলেও সমিতি নেয় সাড়ে ১৭ হাজার টাকা। এমনিভাবে প্রতি মাসে কৃষকের রক্ত চুষে লাল হচ্ছে এক শ্রেণির মানুষ।

সূত্র জানায়, সপ্তায় ৩ লাখ টাকা ক্যাশ হয়। এর মধ্যে অর্ধেক চলে যায় দখলে থাকা ব্যক্তিদের পকেটে। যারা সব সময় পাহারা দেয় সমিতি। এই জন্যই সবার শকুনি দৃষ্টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের প্রতি। সারা জেলায় এমন করে বছরের পর বছর কৃষকের রক্ত চুষে খাওয়া হচ্ছে। তাদের আর্তনাদ পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কানে পৌঁছায় না। জেলার ছয় উপজেলার দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকরা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। বাড়ি, গাড়ি ও মাঠে জমি কিনে গ্রামবাসিকে রীতিমত তাক লাগিয়ে দেয়েছে। টিনের বাড়ি থেকে হয়েছে আলিশান দোতালা বাড়ি। গ্রামের মানুষ তাদের এই আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার রহস্য পায় না। সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের মতিন নামে এক কৃষক মঙ্গলবার অভিযোগ করেন, শুনেছি ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সৎ এবং সাধারণ মানুষের বন্ধু। আমরা এই চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট ধ্বংসের জন্য জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

ঝিনাইদহ সাব রেজিস্ট্রি অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কৃষকরা জমি কেনা-বেচা করতে এলে তাদের সরকারের ফি আর দলিল লেখকদের পারিশ্রমিক ছাড়া আর কোনো খরচ নেই। কিন্তু দেখা যায় শতক প্রতি দলিল লেখক সমিতি জোরপূর্বক পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ করেন। এটা অন্যায় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি এই রক্তচোষা সিন্ডিকেট ভেঙে সাধারণ কৃষকদের মুক্ত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।ঝিনাইদহ সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার আবুল বাশারের কাছে জানতে চাইলে এসব বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।