স্টাফ রিপোর্টার: চিকিৎসাশিক্ষার নামে সারাদেশে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে শতাধিক ভুঁইফোঁড়শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চিকিৎসাশাস্ত্রের সব বিষয়ে সনদদেয়ার ঘোষণা দিয়ে এসবপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ভর্তির আকর্ষণীয়বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। গত ১৩ আগস্টএইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোগণমাধ্যমেসহ পোস্টার ও ব্যানার ছাপিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞাপন প্রচারকরছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপনে নিজেদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি)অধিভুক্ত বলে দাবি করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঢাবি প্রশাসনেরসতর্কবার্তা পাঠানো এবং কয়েকটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরও সেগুলো থেমেনেই। প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কামিয়ে নিচ্ছে কোটিকোটি টাকা। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাবিপ্রশাসন এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এদেরবিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় সেগুলো চিকিৎসা শিক্ষার নামে বাণিজ্যচালিয়ে যেতে পারছে বলে অভিজ্ঞজনরা মনে করছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সব মিলিয়ে সারাদেশে ঢাবি অধিভুক্তচিকিৎসা শিক্ষার প্রতিষ্ঠান আছে মাত্র ৭৪টি। এর বাইরে আছে শতাধিকপ্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, অধিভুক্তির বাইরে থাকাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অধিভুক্ত বলে দাবি করা অন্যায়, অনৈতিক ও বেআইনি। এরকমপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। অধিভুক্ত না হয়েও তা দাবিকরে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ায় ইতোমধ্যে প্রশাসন দুটি চিকিৎসাশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছেবিশ্ববিদ্যালয়ের কালো তালিকায়। শিগগিরই এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।
অন্যদিকে ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের সনদনিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়ছেন বিপাকে। চারবছর মেয়াদের বিভিন্ন কোর্সে পড়াশোনা করতে প্রতিষ্ঠানভেদে একজন শিক্ষার্থীরলাগে ৮ থেকে ২০ লাখ টাকা। এতো টাকা খরচ করে অজর্ন করা সনদেতাদের সরকারি ওমানসম্মত বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি হচ্ছে না। এমনকি সনদগ্রহণশেষে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী অনেকে বিএমডিসিরকাছ থেকে নিবন্ধন পাচ্ছেন না। ফলে তারাচিকিৎসা প্র্যাকটিসকরতেপারছেন না। শিক্ষাজীবন শেষ করেও অনেকে পুরোপুরি বেকার থাকছেন। অনেকক্ষেত্রে ঢাবির অধিভুক্ত কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সনদনিয়েও বিএমডিসিরকাছ থেকে নিবন্ধন পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাবিরঅধিভুক্ত নর্দার্ন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ১৯ জন শিক্ষার্থীএমবিবিএস শেষ করেও শিক্ষানবিস চিকিৎসক হিসেবে বিএমডিসির নিবন্ধন পাননি।নিবন্ধনের দাবিতে গত ৭ জুন ওই শিক্ষার্থীরা ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেমানববন্ধনও করেন।
বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডা. জাহেদুল হক বসুনিয়া বৃহস্পতিবার ওই১৯ জন শিক্ষার্থীর নিবন্ধন প্রসঙ্গে বলেন, তাদের এখনো নিবন্ধন দেয়া হয়নি।নর্দার্ন মেডিকেল কলেজ এখনো বিএমডিসির শর্ত পূরণ করেনি বলেই শিক্ষার্থীরাচিকিৎসা প্র্যাকটিস করার নিবন্ধন পাচ্ছেন না।স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করারশর্তে যায়যায়দিনকে বলেন, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস)স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। এতে চালু আছে চার বছরমেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স (ডিএমএফ)। এক বছরের ইন্টার্নশিপও আছে। এদের সনদেসরকারি হাসপাতালে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পাওয়াযায়। আর ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিলে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরুরনিবন্ধনের কথা চিন্তাই করা যায় না।
ঢাবির কলেজ পরিদর্শক ড. বিমল কান্তি গুহ জানান, ঢাবির অধিভুক্ত না হয়েও তাদাবি করায় বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব থাইরয়েড অ্যান্ড ইমেজিং রিসার্চ (বিটমির) এবং বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স (বিমস) নামে দুটিপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রশাসন। বিটমির বিরুদ্ধে ঢাবিপ্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাকার কলাবাগান থানায় মামলা করা হয় গত ১৬ আগস্ট।অনিয়মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ঢাবির আইবিএ বিভাগেরশিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরীর বিরুদ্ধেও গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। এ বিষয়েগোলাম মোহাম্মদ চৌধুরীর বক্তব্য জানতে বৃহস্পতিবার বিকালে কয়েকবার ফোনকরেও তার মুঠোফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এর আগে ২০১২ সালের ২১ মার্চ ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় বিমসের বিরুদ্ধে মামলাকরে ঢাবি প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা কামরুল হাসান ওইমামলার বাদী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক আবদুর বাসেদ বিমসের মালিক বলে জানা গেছে।
ড. বিমল কান্তি গুহ আরো জানান, ঢাবি প্রশাসনের কালো তালিকায় রয়েছে নর্দার্নমেডিকেল কলেজ। বিএমডিসির শর্ত পূরণ না করলে এ বছর প্রতিষ্ঠানটিকে কারণদর্শানোর নোটিশ দেয়া হতে পারে। শর্ত পূরণ না করায় ঢাকার মিরপুরের মার্কসইন্সটিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজিনামের প্রতিষ্ঠানটি এর আগে বন্ধ করে দেয়াহয়েছে বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, ঢাবির উপাদানকল্পভুক্ত মেডিকেল কলেজ ও চিকিৎসা শিক্ষারপ্রতিষ্ঠান আছে ৭৪টি। এসব প্রতিষ্ঠানের বাইরে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে কোনোপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি না হতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেবিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন করতেবিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায়বিজ্ঞাপনও দেয়া হয়েছে। ঢাবির উপাদানকল্প সরকারি মেডিকেল কলেজ ৯টি আরবেসরকারি মেডিকেল কলেজ আছে ৩৪টি। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলো হলো_ ঢাকা, স্যারসলিমুল্লাহ, ডেন্টাল ইউনিট (স্যার সলিমুল্লাহ), ময়মনসিংহ, ডেন্টাল ইউনিট, (ময়মনসিংহ), শের-ই-বাংলা, ডেন্টাল ইউনিট (শের-ই-বাংলা), ফরিদপুর শহীদসোহরাওয়ার্দী, ডেন্টাল ইউনিট (শহীদ সোহরাওয়ার্দী), শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শেখ সায়েরা খাতুন এবং গাজীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বেসরকারি মেডিকেলকলেজগুলোর মধ্যে আছে_ বাংলাদেশ মেডিকেল, মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন অ্যান্ডহসপিটাল, জহুরুল ইসলাম মেডিকেল, জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স, কমিউনিটি বেজড, শহীদ মনসুর আলী, ঢাকা ন্যাশনাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট, ডেন্টাল ইউনিট (হলি ফ্যামিলি), কুমুদিনী উইমেন্স, ডেন্টাল ইউনিট, (কুমুদিনী উইমেন্স), ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল (নার্সিং ইউনিট, ইন্টারন্যাশনাল), হেলথ টেকনোলজিইউনিট (ইন্টারন্যাশনাল), ইব্রাহিম মেডিকেল, তায়রুননেছা মেমোরিয়ালমেডিক্যাল, নার্সিং ইউনিট (তায়রুননেছা), সাহাবউদ্দিন মেডিকেল, ইস্ট-ওয়েস্টমেডিকেল, এনাম মেডিকেল, ইবনে সিনা মেডিকেল, নর্দার্ন ইন্টারন্যাশনালমেডিকেল, নাইটিংগেল মেডিকেল, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল, ডেলটা মেডিকেল, ডেন্টাল ইউনিট (ডেলটা), ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল, ডেন্টাল ইউনিট (ঢাকাকমিউনিটি), আদ-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল, নার্সিংইউনিট (আনোয়ার খান), ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল, গ্রীন লাইফ মেডিকেল, ডেন্টাল ইউনিট (গ্রীন লাইফ), নার্সিং ইউনিট (গ্রীন লাইফ), এমএইচ শমরিতামেডিকেল, ডেন্টাল ইউনিট (শমরিতা), পপুলার মেডিকেল, মুন্নু মেডিকেল, ডা.সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল, মার্কস মেডিকেল, ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনালমেডিকেল, সিটি মেডিকেল, আশিয়ান মেডিকেল এবং আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজহাসপাতাল।
ঢাবির উপাদানকল্পভুক্ত সরকারি এবং বেসরকারি ডেন্টাল কলেজগুলো হলো_ ঢাকাডেন্টাল, পাইওনিয়ার ডেন্টাল, সিটি ডেন্টাল, ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল, সাপ্পোরোডেন্টাল, বাংলাদেশ ডেন্টাল, মার্কস ডেন্টাল, আপডেট ডেন্টাল এবং সাফেনাউইমেন্স আর মেন্ডি ডেন্টাল কলেজ। সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং কলেজের মধ্যেআছে-কলেজ অব নার্সিং, ঢাকা নার্সিং, ময়মনসিংহ নার্সিং, বরিশাল নার্সিং, কুমুদিনী নার্সিং, স্কয়ার নার্সিং, ইউনাইটেড নার্সিং, ইস্ট-ওয়েস্ট নার্সিং, বারডেম নার্সিং এবং সিআরপি নার্সিং কলেজ।
ঢাবির উপাদানকল্পভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক, ইউনানী এবংআয়ুবের্দিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে-সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল, সরকারিইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল এবং বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ। এছাড়া মেডিকেল ইন্সটিটিউটগুলোর মধ্যে আছে-জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ওপুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, শিশু স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, ইন্সটিটিউটঅব হেলথ টেকনোলজি, জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, হেলথ প্রফেশনস ইন্সটিটিউট, ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজি, স্টেট কলেজ অব হেলথ সায়েন্সেস এবং সাইকইন্সটিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজি।