ছেলেরসাথে দূরত্ব কমানোর দোয়া নিয়ে হলেন রহস্যময়ী নারী

মাওলানা ফারুকী হত্যা : মাহমুদা খাতুনসহ দুজনের দু দিনের রিমান্ড : জিজ্ঞাসাবাদ শুরু

 

স্টাফ রিপোর্টার:ছেলেরসাথে দূরত্ব কমাতে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীর কাছে দোয়া শিখতে এসেছিলেনরহস্যময়ীনারী মাহমুদা খাতুন (৪৩)। ফারুকী তাকে তিনটি দোয়াও লিখেদিয়েছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাহমুদা খাতুন গোয়েন্দাদের এ তথ্যদিয়েছেন।কিন্তু সেই দোয়া তাকে ছেলের সাথে দূরত্ব না কমিয়েকারাগারে পাঠিয়েছে। মাহমুদা দোয়া নিয়ে নারায়ণগঞ্জ পৌঁছানোর আগেই খুন হনফারুকী। এতেই সন্দেহের সৃষ্টি হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এরপর কললিস্ট ধরেতাকে গ্রেফতার করা হয়।

নুরুল ইসলাম ফারুকীর বাসায় মাহমুদা খাতুনেরআসা এবং চলে যাওয়া নিয়ে ফারুকীর পরিবারের সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ফারুকীরপরিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাহমুদা খাতুনের বিষয় বিস্তারিত তথ্য দেয়।এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে।অপরদিকে এ হত্যার প্রতিবাদে ও আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে ছাত্রসেনা নামের একটি সংগঠন গতকাল সারাদেশে অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করা হয়। হরতাল চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে নূন্যতম প্রভাব ফেলেনি। সব কিছুই ছিলো স্বাভাবিক।
প্রাথমিকজিজ্ঞাসাবাদে মাহমুদা পূর্ব রাজাবাজারের নূরুল ইসলাম ফারুকীর বাসায় আসারকথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্তউপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) আশিকুর রহমান।তিনি জানান, মাহমুদাখাতুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ইসলামিক অনুষ্ঠান থেকে ফারুকীর নম্বরসংগ্রহ করেন। বাসায় আসার আগে ফারুকীকে কয়েকবার ফোন দেন তিনি। বিকেলে তিনিবাসায় আসেন। মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীর সাথে তার দীর্ঘক্ষণ কথাও হয়।

মাহমুদাখাতুনের ছেলের বিয়ের পর তার সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে।  ছেলের সাথেসম্পর্কের উন্নতির জন্য তিনি নূরুল ইসলাম ফারুকীর কাছে দোয়া নিতে এসেছিলেন।নুরুল ইসলাম ফারুকী তার সমস্যার কথা শুনে তাকে একটি কাগজে তিনটি দোয়া লিখেদেন। দোয়া তিনটি তাকে সব সময় পাঠ করতে বলেন তিনি। এতে ছেলের সাথে সম্পর্কউন্নতি হবে বলেও ফারুকী তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন।ডিবি পুলিশকে এসব কথাজানান মাহমুদা খাতুন।

আশিকুর রহমান বলেন, গ্রেফতারকৃত মাহমুদারগ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর থানার তালতলা গ্রামে। তার দুই ভাই রয়েছে। তাদেরনাম আব্দুর গফুর ও আব্দুর রহিম। বিয়ের পাঁচ বছর পর মাহমুদা খাতুনের স্বামীমারা যান। তাদের সংসারে এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তার নাম মনজুর হোসেন।ছেলেকে নিয়ে ১৯৮৩ সালে তিনি ঢাকায় আসেন। ঢাকায় এসে তিনি মিরপুরের কালশিএলাকার একটি পোশাক কারখানায় দীর্ঘদিন কাজ করেন। ছেলেকে মিরপুর পলিটেকনিকইনস্টিটিউটে এবং প্রাইম ইউনির্ভাসিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে লেখাপড়া করান। ছেলেলেখাপড়া শেষে করে নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি (এসিআই সল্ট) কোম্পানিতেচাকরি পান। এই সুবাদে তারা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চলে যান। সেখানে নিজেদেখে শুনে ছেলকে বিয়ে দেন।’

ছেলের বিয়ের পর মাহমুদা খাতুনের সঙ্গেদূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে তার। এর সমাধানের জন্য নুরুল ইসলামের কাছে এসছিলেনতিনি’ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাহমুদা খাতুন এমন তথ্য দিয়েছেন বলে পুলিশেরএই কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি আরো জানান, সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতারকৃত অপর ব্যক্তি শরিফুল ইসলামের (৪০) কাছে পোশাকসেলাই করাতেন মাহমুদা খাতুন। তিনি গত ২০ দিনেও ঢাকা আসেনি আমরা এমন প্রমাণপেয়েছি। তবে আরো তদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে তাদেরসম্পৃক্ততা আছে কি-না।

এদিকে রোববার থেকে ডিবি মামলাটি তদন্তেরদায়িত্ব পেয়েছে। তাই মামলা তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে ডিবির উপপুলিশকমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের এখনওকোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়িক ও ধর্মীয় মাতাদর্শ ছাড়াও আরো কিছু কারণসামনে রেখে মামলাটি তদন্ত করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, যারা এটা করেছে তারা খুব ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করেছে। গোপীবাগের সিক্স মার্ডারের সাথে এই হত্যাকাণ্ডের কোনো মিল নেই।উপপুলিশ কমিশনার বলেন, পরিবারের সঙ্গে আবারো তদন্ত কর্মকর্তা কথা বলবে। তাদের বিভিন্ন অভিযোগ শোনা হবে।এদিকে গ্রেফতারকৃত মাহমুদা খাতুন এবং শরিফুর ইসলামকে দু দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।

উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট রাতে রাজধানীর শেরেবাংলা থানাধীর পূর্ববাজারের নিজবাসায়সুপ্রিমকোর্ট জামে মসজিদের ইমাম ইসলামিক অনুষ্ঠান উপস্থাপক নুরুল ইসলামফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর নিহতের ছেলে ফয়সাল ফারুকীবাদী হয়ে শেরেবাংলা থানায় একটি মামলা দায়েল করেন। মামলাটি বর্তমানে ডিবিতদন্ত করছে।