সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতেই নীতিমালা

গণমাধ্যমেরসামনে চ্যালেঞ্জশীর্ষক আলোচনাসভায় অধিকাংশ সম্পাদকের অভিমত

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা সংবাদ মাধ্যমনিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হবে বলেই মত এসেছে সম্পাদক পরিষদের আলোচনাসভায়।সদ্যপ্রণীত জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালানিয়ে গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গণমাধ্যমেরসামনে চ্যালেঞ্জশীর্ষক আলোচনাসভায় এ মত প্রকাশ করেন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অধিকাংশ সম্পাদক।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেকসংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামও এ নীতিমালার বিরোধিতা করে তা পর্যালোচনা করতেসরকারকে পরামর্শ দেন।তবে অনুষ্ঠানে কয়েকজন আলোচক অপসাংবাদিকতারোধে সংবাদ মাধ্যমের জন্য নীতিমালার প্রয়োজনীয়তাস্বীকার করেন।সরকার সম্প্রতি জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালাপ্রণয়নের পর থেকে তার সমালোচনা হচ্ছে সাংবাদিকদের মধ্য থেকে। তবে তথ্যমন্ত্রী বলছেন, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ এ নীতিমালার উদ্দেশ্য নয়।আলোচনায় অংশ নিয়ে নীতিমালা প্রণয়নকমিশনের সদস্য অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়াও বলেন, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ নয়, এর বিকাশেরজন্যই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

সভায় সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদকডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম জাতীয়সম্প্রচার নীতিমালাকেসম্পাদকদের নিরস্ত্র করার অভিনবপ্রয়াসহিসেবে উল্লেখ করেন।সরকার বলছে, নীতিমালারবিষয়টি সাংবাদিকদের প্রস্তাব থেকেই আনা হয়েছিলো। এটা সত্য, কিন্তু সাংবাদিকদের দাবিছিলো একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন সেই নীতিমালা তৈরি করবে এবং নীতিমালা তৈরির সময় সকলঅংশীজনদের বিশেষ করে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর মালিকদের মতামতগ্রহণ করবে। সাংবাদিকরা কখনোই আমলাদের দ্বারা নীতিমালা তৈরির পক্ষপাতী ছিলেন না।

আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক সিরাজুলইসলাম চৌধুরী বলেন, এমনিতেই বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের ওপর এই নীতিমালা নিয়ন্ত্রণআরো প্রকট করবে।সরকারের আইন, বিজ্ঞাপনদাতা, মালিকপক্ষ সবদিক দিয়েইগণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত। নতুন এ নীতিমালা হচ্ছে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ। এতে সৃজনশীলচিন্তাশক্তির ওপর আক্রমণ হবে।

অ্যাসোসিয়েশন অব টিভিচ্যানেল ওনার্স’র সাধারণ সম্পাদকচ্যানেল আইয়ের পরিচালক শাইখ সিরাজ বলেন, আমরাএকটি নীতিমালা চেয়েছিলাম। এই চাওয়ার পেছনে কয়েকটি যুক্তিও ছিলো। যেমন চাইলেই যে কেউযেন টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স না পায়।

বর্তমানে যে নীতিমালাকরা হয়েছে, এরকম নীতিমালা আমরা চাইনি। এ নীতিমালায় আমাদের হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতেবলা হয়েছে।ঢাকা ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশেরসভাপতি বৈশাখী টিভির প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল নীতিমালার প্রয়োজনীয়তাতুলে ধরলেও এর সীমাবদ্ধতার কথাও বলেন।তবে অনেকেই না বুঝেএ নীতিমালা নিয়ে সমালোচনা করছেন। এর ইতিবাচক দিকও রয়েছে। একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতেহবে। দেশে উজ্জ্বল সাংবাদিকতা যেমন অগ্রসর হচ্ছে, তেমনি অপসাংবাদিকতাও থেমে নেই। অপসাংবাদিকতাদূর করতেই নীতিমালা প্রয়োজন।

এরপরই তিনি বলেন, তারা সাংবাদিকদের জন্য চারটি বিষয়ে সুরক্ষা চেয়েছিলাম।এগুলো হলো- সাংবাদিকতা পেশায় নতুনদের চাকরির নিরাপত্তা, টিভি চ্যানেলগুলোর বেতন বৈষম্যদূর করা, বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা ও লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্টনিয়ম। এ বিষয়গুলো এ নীতিমালায় নেই।বুলবুলের বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণকরে ঢাকা ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের আরেক অংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, কাদের নিরাপত্তার জন্য এই নীতিমালা করা হয়েছে, তাজনগণ অনেক আগেই বুঝেছে।গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতেই এই নীতিমালা করা হয়েছে।এই নীতিমালা গণমাধ্যমের জন্য এক অশনি সংকেত।অনুষ্ঠানে উপস্থিত নীতিমালা প্রণয়নকমিশনের সদস্য অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় সরকার সম্পূর্ণ আস্থাশীল।নীতিমালা প্রণয়নের অর্থ গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা নয়।গণমাধ্যমকে আরো বিকশিত করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ারজন্যই এই নীতিমালা করা হয়েছে। পাশাপাশি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অপব্যবহার যেন কেউ নাকরে সেই বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিও এই নীতিমালার অন্যতম উদ্দেশ্য।

তবে তার সাথে দ্বিমত জানিয়ে ব্যারিস্টারআমীর বলেন, সরকার একদিকে মতপ্রকাশেরস্বাধীনতার কথা বলছে। অন্যদিকে নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে সংবাদ মাধ্যমকে কঠোর জবাবদিহিতারমধ্যে এনেছে, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করবে।যারা এ নীতিমালা করেছে তারা সত্যিই সরকারের বন্ধুবা শুভাকাঙ্ক্ষী কি-না, তা সরকারকে এখনই খতিয়ে দেখতে হবে।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি সমকাল সম্পাদকগোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বেসরকারি টেলিভিশনএকাত্তরের সিইও মোজাম্মেল বাবু, মাছরাঙা টিভির সিইও ফাহিম মুনয়েম, এটিএন নিউজের হেডঅব নিউজ মুন্নি সাহা, এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ জ ই মামুন।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোরসম্পাদক মতিউর রহমান, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, দৈনিক নিউ এইজ’র সম্পাদক নুরুল কবির প্রমুখ।