অসময়ের তরমুজ চাষ হচ্ছে ঝিনাইদহে

 

অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষক :ক্রেতারা পাচ্ছেন বাড়তি পুষ্টি

শাহনেওয়াজ খান সুমন: তরমুজ, একটি মরসুমি ফল। সাধারণত ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল মাসে বাজারে এই ফল পাওয়া যায়। এখন জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসেও তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। আর এই তরমুজের চাষ হচ্ছে ঝিনাইদহের গান্না-পাইকপাড়া এলাকায়। এবার প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে এই অসময়ে তরমুজ চাষ হয়েছে।

কৃষকরা বলছেন, গত মরসুমে আলা উদ্দিন নামের এক কৃষক মাত্র ১ বিঘা জমিতে এই চাষ করেন। থাই তরমুজ বলে পরিচিত এই তরমুজ চাষে ওই কৃষকের ফলনও ভালো হয়েছিলো, আবার বিক্রি করে ভালো টাকাও পেয়েছিলেন। তাই দেখে এবার ওই এলাকার অর্ধশত কৃষক তরমুজের চাষ করেছিলেন। তাদেরও ফলন ভালো হয়েছে। অসময়ের তরমুজ হওয়ায় তারা মূল্যও পেয়েছেন ভালো। সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিলো গত রমজান মাসে। এখনও ওই এলাকার কৃষকের ক্ষেতের টালে ঝুলছে তরমুজ।

সরেজমিনে গান্না-পাইকপাড়া গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায় ক্ষেতের পর ক্ষেত তরমুজের চাষ। মরসুমে চাষ হওয়া তরমুজ মাটিতে হয়, আর অসময়ের এই তরমুজ চাষ হয় টালে। কৃষকরা টাল দিয়ে এই চাষ করেছেন। বেশির ভাগ কৃষকের তরমুজ বিক্রি হয়ে গেছে। এখনও যাদের ক্ষেতে তরমুজ রয়েছে তারা ১/২ সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি শেষ করবেন বলে জানিয়েছেন।

কথা হয় পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, দু বিঘা জমিতে এই তরমুজের চাষ করেছেন। জুন মাসের শেষ সময়ের দিকে তিনি এই তরমুজের বীজ বপন করেন। এখন তার টালে তরমুজ ঝুলে আছে। অল্পদিনের মধ্যে বিক্রি করবেন। তিনি জানান, ৫০ গ্রাম বীজে এক বিঘা চাষ করা যায়। তিনি ১৩ হাজার টাকা দিয়ে ১শ গ্রাম বীজ ক্রয় করেছিলেন। এই বীজ থেকে তার দু বিঘা জমিতে ২৭শ গাছ হয়েছে। গাছে তরমুজ আছে প্রায় ৩ হাজার। তিনি জানান, বীজ ক্রয়ের পাশাপাশি অন্যান্য খরচ মিলিয়ে তার প্রায় ৬৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। আর গাছে তরমুজ বিক্রি করে তিনি পাবেন দেড় লক্ষাধিক টাকা। মাত্র দু মাসের এই চাষে তিনি খরচের দ্বিগুন পয়সা পাবেন বলে আশা করছেন।

একই গ্রামের আরেক কৃষক আতিয়ার রহমান জানান, তিনি ৪০ শতক জমি চাষ করেছিলেন। ২৮ হাজার টাকা ব্যয় করেছেন। আর তরমুজ বিক্রি করে পেয়েছেন ৭০ হাজার টাকা। তিনি জানান, রমজান মাস সামনে নিয়ে কৃষকরা এই তরমুজের চাষ করে থাকেন। বীজ বপনের সময় থেকে মাত্র দু মাসে তরমুজ উঠে যায়। তিনি জানান, একটি গাছে ৪/৫ তরমুজ আসতে পারে। যা রেখে দিলে তরমুজের আকার ছোট হয়ে যায়। যে কারণে তারা দুটি করে রেখে বাকিগুলো ভেঙে দেন। এভাবে তারা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।

গান্না-পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক আলা উদ্দিন। তিনিই এই এলাকায় প্রথম থাই তরমুজের চাষ শুরু করেন। ২০১৩ সালে মাত্র এক বিঘা জমিতে চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলে দেন। এবার তার দেখে ৩০/৩৫ জন কৃষক প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। আলা উদ্দিন জানান, তার শশুরবাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে। ওই গ্রামে এই চাষ হতে দেখেছেন। এই দেখে নিজ এলাকায় চাষটি নিয়ে আসেন। মাত্র এক বছরেই এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বাড়ছে চাষের পরিমান। তিনি আশা করছেন আগামী বছর আরো কয়েকগুন বেশি জমিতে চাষ হবে।

এ ব্যাপারে ওই এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা খলিলুর রহমানের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, এটা একটা লাভজনক চাষ। মাত্র ২ মাসের ব্যবধানে এতো লাভজনক ফসল আর নেই। তাই কৃষকরা এই চাষের প্রতি ঝুঁকে যাচ্ছে। এটা বেলে-দোয়াশ মাটিতে ভালো চাষ হচ্ছে। তিনি আরো জানান, তরমুজটি অসময়ে বাজারে পাওয়া যাওয়ায় কৃষকের পাশাপাশি ক্রেতারাও উপকৃত হচ্ছেন।

কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার এস.এম রাকিবুল হাসান জানান, তরমুজ আমাদের শরীরের পানির ঘাটতি পুরণ করে। এছাড়া প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-ই রয়েছে তরমুজে। সেই সাথে রয়েছে প্রচুর খনিজ দ্রব্য। যা মানুষের শরীরের ব্যাপক উপকারে আসে। তরমুজের মরসুমে মানুষ এগুলো পেয়ে থাকেন। সেটা অসময়ে পেলে বাড়তি পাওয়া বলা যায়।