মেহেরপুরে গুঁটি ইউরিয়া ব্যবহারে রোপা আউশ ধানের বাম্পার ফলন

 

 

মাজেদুল হক মানিক: বোরো ধান আবাদে ব্যাপক সফলতার পর এবার রোপা আউশ ধানক্ষেতে গুঁটি ইউরিয়া প্রয়োগে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছেন মেহেরপুরের কৃষকরা। গত কয়েক বছরের মধ্যে চলতি মরসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। রোপা আউশ চাষিসূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে রোপা আউশ ধানের আবাদ বাড়ছে। পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে গুঁটি ইউরিয়া সার ব্যবহার।

গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের ধানচাষি রেজাউল ইসলাম জানান, চলতি মরসুমে রোপা আউশে তিনি গুঁটি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করেন। এক বিঘা জমিতে ধান আবাদে অন্তত ৫০ কেজি প্রচলিত গুঁড়ো ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়। তার পরিবর্তে গুঁটি ইউরিয়া সার মাত্র ১৮ কেজি প্রয়োগেই তার ধান আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। এতে ইউরিয়া সারের খরচ কমেছে অর্ধেকের বেশি। অন্যদিকে বাম্পার ফলনে অধিক লাভ হচ্ছে।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার মাজেদুল ইসলাম জানান, ক্ষেতে গুঁড়ো ইউরিয়া সার প্রয়োগ করলে তার বেশিরভাগ বাতাস ও পানির সাথে মিশে যায়, ফলে ফসলের তেমন কোনো কাজে আসে না। তাই বারবার ইউরিয়া ব্যবহার করতে হয়। এতে ফসলের বাড়ন্ত বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু গুঁটি ইউরিয়া সার মাটির নিচে পুঁতে দেয়ায় মরসুমজুড়েই ধান গাছ চাহিদা মতো পর্যাপ্ত খাদ্যের যোগান পায়। এ কারণে ভালো ফলন হয়।

ইউএসআইডি’র অর্থায়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ইন্টারন্যাশনাল ফার্টিলাইজার ডেভলপমেন্ট সেন্টার (আইএফডিসি) মাধ্যমে এক্সিলারেটিং এগ্রিকালচার প্রোডাক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট (আপি) প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সাল থেকে মেহেরপুর জেলাসহ দেশের ১২২টি উপজেলায় গুঁটি ইউরিয়া ব্যবহার সম্প্রসারণের কার্যক্রম শুরু হয়।

আপি-আইএফডিসি গাংনী উপজেলা মনিটরিং অফিসার মিজানুর রহমান জানান, গুঁটি ইউরিয়া ও এন.পি.কে গুঁটি ব্যবহারে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে মাঠ দিবস, প্রদর্শনীপ্লট ও প্রশিক্ষণ এবং উদ্বুদ্ধকরণ সভাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গুঁটির ভালো দিক বুঝতে পেরে অনেক চাষি এখন এটি ব্যবহারে এগিয়ে আসছেন। ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি চাষেও গুঁটি ইউরিয়া প্রয়োগ করে কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মরসুমে জেলায় ৮ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে রোপা আউশ ধান আবাদ হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯ হাজার ৩৬৮ হেক্টর। এর মধ্যে গুঁটি ইউরিয়া ব্যবহার হয়েছে ১ হাজার ৮৭১ হেক্টরে। গত বছর জেলায় রোপা আউশ ধান আবাদ হয়েছিলো ৫ হাজার ৯৬৫ হেক্টর। গত বছরের চেয়ে আবাদ সম্প্রসারণের পাশাপাশ গুঁটি ইউরিয়া সার ব্যবহার বৃদ্ধি ও বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবানের পাশাপাশি দেশের খাদ্য উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

চলতি আউশ মরসুমে ব্রি ধান ৪৮ ও বিআর ২৬ জাতের ধানের পাশাপাশি হাইব্রিড ধান আবাদ হয়েছে। বিঘায় ফলন প্রায় ২০-২৬ মণ পর্যন্ত। অন্য মরসুমের চেয়ে আউশ মরসুমের ধানচাষে উল্লেখ্যযোগ্য খরচ নেই। তাই এবারে ধান আবাদে কাঙ্ক্ষিত লাভের মুখ দেখছেন জেলার চাষিরা।

গত বেরো মরসুমে জেলার ২১ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমির মধ্যে ৫৪ ভাগ জমিতে গুঁটি ইউরিয়া প্রয়োগ হয়। এতে সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার সাশ্রয় হয়েছিলো।