জব্দকৃত ধান নিয়ে ছলচাতুরি : অবশেষে নেয়া হলো থানায়

ফলোআপ:রাজাহাট থেকে কুষ্টিয়া খাজানগরের পথে ধানভর্তি ট্রাক ছিনতাই

 

আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি:চুয়াডাঙ্গা জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া থেকে ছিনতাইকৃত পুলিশের জব্দ তালিকাভুক্ত ধান আটক করা হয়েছে। পাউয়ারট্রিলারযোগে চোরাই পথে জীবননগরের উদ্দেশে নেয়ার পথে স্থানীয় জনতা মিস্ত্রিপাড়ামোড়ে ওই ধান আটক করে। গতকাল সোমবার বেলা ১০টার দিকে আন্দুলবাড়িয়া গ্রামের আবু তালেবের ছেলে পাউয়ার ট্রিলারচালক সবুজ সদর রাস্তা দিয়ে না গিয়ে গলিপথ দিয়ে বের হওয়ায় স্থানীয় জনতার মাঝে সন্দেহও কৌতূহল সৃষ্টি হয়। অবশেষে জনতার হাতে আটক ৩৬ বস্তা ধানসহ পাউয়ার ট্রিলারটি জীবননগর থানার এএসআই আশরাফ থানা হেফাজতে নেন।

আন্দুলবাড়িয়া বাজারের হাটমালিক এসএম আশরাফুজ্জামান টিপু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আতিয়ার রহমান জানান,ট্রাকে ধান ছিলো ২৩০ বস্তা ধান। পুলিশের জব্দ তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে ১৭৫ বস্তা। পুলিশের লুকোচুরি খেলায় স্থানীয় জনতার সন্দেহ দেখা দেয়। জনতা গোডাউনের সামনে রাতভর পাহারা বসায়। ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে গোডাউনটি সিলগালা না করে ব্যক্তিগত জিম্মায় দেয়ায় তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। জনতা রহস্যের জট উদঘাটনে নামে। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার রশীদুল হাসানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন,তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার এ সম্পর্কে কোনো অসত উদ্দেশ্য ছিলো কি-না তা খাতিয়ে দেখা হবে।

এদিকে গতকাল সোমবার দৈনিক মাথাভাঙ্গায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হলে সকালে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে ৫টি পাউয়ার ট্রিলারযোগে তড়িঘড়ি করে ধান থানায় নেয়া হচ্ছিলো। এর মধ্যে একটি পাউয়ার ট্রিলার সদর রাস্তা দিয়ে না গিয়ে গলিপথ দিয়ে যাওয়ার সময় জনতাআটক করে। পরে আরো ৪টি ধান বোঝাই পাউয়ার ট্রিলার ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। আটক ও নাটক নিয়ে এ সময় পুলিশ ও জনতা বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। অবশেষে জনতার উপস্থিতিতে গণনা করাকালে ৫টি পাউয়ার ট্রিলারে ১৭৮ বস্তা ধান পাওয়া যায়। বাকি ৫২ বস্তা ধান কোথায়? জনতার এমন জোরালো প্রশ্নের মুখে পুলিশ ধান উদ্ধারে তটস্থ হয়ে পড়ে।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই আশরাফ মাথাভাঙ্গার এ প্রতিবেদককে ফোনে জানান,গোডাউন থেকে আরও ৩৯ বস্তা ধান উদ্ধার করা হয়েছে। লেবার সর্দ্দারের দেয়া ভাষ্যমতে ২৩০ বস্তা ধানের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ২১৭ বস্তা ধান উদ্ধার করা হলেও বাকি ১৩ বস্তা ধানের কোনো হদিস মিলছেনা। জনতা দাবি করেছে,সকালে গোডাউন থেকে আলমসাধু গাড়িযোগে ৮ বস্তা ধান সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পুলিশ ১৩ বস্তা ধানের রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করেছে। জিম্মাদার বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক শেখ মহিদুল ইসলাম মধুর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,গত রোববার বিকেলে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ১৭৫ বস্তা ধান উপস্থিত জনতার সামনে আমার হেফাজতে দেন। গতকাল সকালে গোডাউন খুলে ১৭৫ বস্তার স্থলে ২১৭ বস্তা ধান বুঝে দেয়া হয়। আমানতের খেয়ানত হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন,পথিমধ্যে কী ঘটেছে তার দায়ভার কি আমার?পুলিশ বলেছে,চুয়াডাঙ্গার বেগমপুর ইউনিয়নের নেহালপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম আন্তঃছিনতাইকারী দলের হোতা। তারা ভুষিমাল ব্যবসার আড়ালে নির্জন স্থানে গোডাউন ভাড়ায় নিয়ে চোরাচালানি মালামালসহ ছিনতাইকৃত মালামালের কারবার করে আসছে। প্রাথমিক পুলিশি তদন্তে এ রকমই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ছিনতাইকারীদলের হোতা নেহালপুরের রবিউল ও জাহাঙ্গীরকে আটক করার জাল বিস্তার করেছে পুলিশ। মহল্লাবাসী বলেছে, তারা ইতঃপূর্বে কয়েকটি সন্দেহজনক ট্রাক থেকে তড়িঘড়ি করে গোডাউনটিতে মালামাল নামাতে দেখেছেন। পুলিশ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ছিনতাইকারী দলের কোনো সদস্যকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

প্রসঙ্গত, রাজশাহীর পুটিয়া থানার কাঁঠাঁলবাড়িয়া গ্রামের মাসুদুর রহমানের ছেলে ট্রাকমালিক মাকসুদ হোসেন জানান,তার ট্রাকটি গত শনিবার রাতে ফরিদপুরের টেকেরহাট নামক স্থান থেকে ২৩০ বস্তা ধান বোঝাই করে কুষ্টিয়ার খাঁজানগর যাচ্ছিলো। পথিমধ্যে ট্রাকটি ছিনতাই হয়ে যায়। গত রোববার বিকেলে জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া-অনন্তপুর সড়ক থেকে স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় জীবননগর থানা পুলিশ ট্রাক ও ধান উদ্ধার করে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গায় সংবাদটির একাংশে ভুষিমালব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন সবুজের মামা দলিল লেখক রুহুল আমিন সন্টুর উদ্ধৃতি দিয়ে চুয়াডাঙ্গার ছয়ঘরিয়া গ্রামের ভুষিমালব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম গোডাউনটি ভাড়ায় নিয়ে ব্যবসা করছেন বলে উল্লেখ করা হয়। প্রকৃত ভুষিমাল ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের নেহালপুর গ্রামে। পুলিশি তদন্তে এ তথ্য রেরিয়ে এসেছে। জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ূন কবীরের সাথে রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,ট্রাক মালিক মাকসুদ হোসেন বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ট্রাক ড্রাইভার মতিয়ার রহমানের সন্ধান মিলেছে। তিনি অসুস্থ অবস্থায় গোপালগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।