চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সহোদর ভাই হরিপ্রসাদের অভিযোগ

 

ঢাকার ব্যবসায়ী রাজকুমার ভারতে মুদ্রা পাচারও সম্পদ মজুদকারী

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকার গুলশান-১’র বাসিন্দা ঢাকা কেমিক্যাল অ্যান্ড মিনারেল প্রোডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যবসায়ী রাজকুমারের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতি,ভারতে মুদ্রা পাচার ও অবৈধ সম্পদ তৈরি এবং দুদেশের নাগরিকত্বসহ বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। রাজকুমারের ভাই হরিপ্রসাদ জালান গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উপস্থাপন করেন।

হরিপ্রসাদ জালান ওরফে মঙ্গল (৫৭) লিখিত বক্তব্যে জানান,তার বাবা চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী স্বর্গীয় মহাবীর প্রসাদ ও মা স্বর্গীয় গীতা দেবী। তাদের কাপড়ের দোকান বাংলাদেশ বস্ত্রালয় ও দৌলাতদিয়াড়ে দমকলের পাশে অবস্থিত ‘স’মিল পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৬ সালে ঢাকা কেমিক্যাল অ্যান্ড মিনারেল প্রোডাক্টস লিমিটেড নামে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়। যার অফিসের ঠিকানা ৪২/৪৩ পুরানা পল্টন, ঢাকা এবং কারখানা ইউনিট-১ স্টেশন রোড ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ এবং ইউনিট-২ ফ্যাক্টরি রোড শ্যামপুর কদমতলী শিল্প এলাকা ঢাকা। এর পরবর্তী সময়ে ঢাকার হাতিরপুল,মিটফোর্ড ও চকবাজার এবং চট্রগ্রাম ও সিলেটসহ পাঁচটি দোকান প্রতিষ্ঠা করা হয়। হরিপ্রসাদরা মোট পাঁচ ভাই ও পাঁচ বোন।হরিপ্রসাদ মেজ।

মহাবীর প্রসাদকে চিকিৎসা করাতে ১৯৮৬ সালে হরিপ্রসাদ ও স্ত্রী তারা দেবী এবং মা গীতা দেবী ভারতের কোলকাতায় যান। কোলকাতায় বড় ভাই রাজকুমারের স্ত্রী অঞ্জলী দেবী ওরফে অঞ্জলী জালানের নামে কেনা কোলকাতার ৬৭ পার্ক স্ট্রিট,অপ্সরা অ্যাপার্টমেন্টের পাঁচতলায় ডি-৫ নম্বরের ফ্লাটে ওঠেন। ১৯৮৭ সালের ১১ মার্চ বাবা মহাবীর প্রসাদ পরলোকগমন করেন। বাবার মৃত্যুর পর একপ্রকার জোর করেই বড়ভাই রাজকুমার হরিপ্রসাদ এবং তার স্ত্রী ও মাসহ ভারতে বসবাস করতে বলেন। সেখান থেকে কোলকাতায় আমার ভাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রাসায়নিক পণ্য সরবরাহ করতাম। ইতোমধ্যে আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। পার্কস্ট্রিটের ওই ফ্লাটে বসবাস করার এক পর্যায়ে ১৯৯৫ সালে বড় ভাই তাদেরকে ফ্লাট থেকে নামিয়ে দেন। ওই সময় কোলকাতার সল্টলেকে ভাড়ায় বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে কোলকাতা ভিআইপি রোডে একটি ফ্লাট কেনেন। বর্তমানে সেই ফ্লাটে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন।

বাবা মহাবীরের অর্থে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্রগ্রাম ও সিলেটে দুটি কারখানা ও পাঁচটি দোকান প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮৬ সালে ঢাকায় কোম্পানি প্রতিষ্ঠার সময় আমরা চার ভাই রাজকুমার, হরিপ্রসাদ,স্বজন কুমার ও ভরত কুমার এবং রাজকুমারের স্ত্রী অঞ্জলী দেবী ও আমার স্ত্রী তাঁরা দেবী পরিচালক (বোর্ড অব ডাইরেক্টর) ছিলেন। কিন্তু,১৯৮৮ সালে বড় ভাই রাজকুমার হরিপ্রসাদের ও স্ত্রী তাঁরা দেবীর স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কোম্পানির সকল স্বত্ব বা মালিকানা অন্য চার পরিচালকের নামে লিখে নেন। ১৯৮৯ সালে ২৮ নভেম্বর কোলকাতা থেকে ঢাকায় আসার পর বিষয়টি অবগত হন। স্বাক্ষর জালিয়াতির প্রতিবাদ ও সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার ঘটনায় এক পর্যায়ে বড় ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ১৯৯৫ সালে বড় ভাই হরিপ্রসাদকে স্ত্রী-সন্তানসহ ফ্লাট থেকে নামিয়ে দেন। মা গীতা দেবীর মধ্যস্থতায় বড় ভাই রাজকুমার ক্যানারা ব্যাংক হেয়ার স্ট্রীট শাখাতে তাঁর মেয়ে সোনিয়া জালানের হিসাব নং (৮০৬২) থেকে ছয় কোটি ৯৮ লাখ টাকা (তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১২) এবং একই ব্যাংকের এনএস রোড শাখাতে বড় ভাবী অঞ্জলী জালানের হিসাব থেকে ১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার (তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১২) দুটি চেক দেন। অথচ,ওই ব্যাংকে গিয়ে কোনো চেকে উল্লেখিত পরিমাণ টাকা পাওয়া যায়নি। দুটি চেকই ডিজঅনার হয়।

২০১৩ সালের ১৯ মার্চ চেক ডিজঅনারের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মালদা চিফ জুডিসিয়াল আদালতে বড় ভাই ও বড় ভাবীর নামে দুটি মামলা করি। মামলা নং ১৪৬ ও ১৪৭ তারিখ ১৯-০৩-১৩। এই মামলায় আসামিরা কয়েকদফা সমন ইস্যুর পরও আদালতে হাজির না হওয়ায় এক পর্যায়ে চলতি বছরের ১৯ মার্চ আদালতের বিচারক চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রী ডি বিশ্বাস বড় ভাই রাজকুমার ও তার স্ত্রী অঞ্জলী জালানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

বাংলাদেশ সরকার ভারত ও পাকিস্তানের সাথে এখনও দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন না দিলেও রাজ কুমার ও স্ত্রী অঞ্জলী এবং তিন ছেলে-মেয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিক। তারা বাংলাদেশে আগরওয়াল, কুমার ও দেবী এবং ভারতে জালান পদবি ব্যবহার করেন। তাদের বাংলাদেশে ঠিকানা বাসা নং ৩০,ফ্লাট নং -৩-এস,রোড নং ১১৮, গুলশান -১, ঢাকা এবং ভোটার নং রাজকুমার (২৬১১০৬৪৮৩৫২১),অঞ্জলী দেবী (২৬১১০৬৪৮৩৫২২),মেয়ে সোনিয়া আগরওয়ালা (২৬১১০৬৪৮৩৫২৩),দু ছেলে জিতেন্দ্র কুমার (২৬১১০৬৪৮৩৫২৪) ও রাজেন্দ্র কুমার (২৬১১০৬০০০২২৪)। ভারতে ঠিকানা বাড়ি নং ৬৭,ফ্লাট নং ডি-৫,পার্কস্ট্রিট-কোলকাতা। ভারতে ভোটার নং রাজকুমার জালান (ডিডব্লিউকে ১৩৫৩২০০),অঞ্জলী জালান (ডিডব্লিউকে ১৩৫৩২১৮), মেয়ে সোনিয়া জালান (ডিডব্লিউকে ২০০২৪৬৭),দু ছেলে জিতেন্দ্র কুমার জালান (ডিডব্লিউকে ২০০২৪৭৫)ও রাজেন্দ্র কুমার জালান (ডিডব্লিউকে ২০০২৪৮৩)। এছাড়া ভারতে রাজকুমারের রেশনকার্ড নং বিবি ৭৮৯৫৪৬ এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স নং ডব্লিউ বি ২৫-০০১০৪৫।

অঞ্জলী জালানের নামে কোলকাতার পার্কস্ট্রিটের ফ্লাট ছাড়াও সল্টলেকে আরো একটি চারতলা ভবন কিনেছেন। যার ঠিকানা সিকে-১৮৫, সেক্টর -২, সল্টলেক, কোলকাতা। অঞ্জলী জালানের নামে ২০০০ সাল থেকে ত্রিনয়নী এক্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড (১ আর এন মুখার্জী রোড, মার্টিন বার্ন হাউজ ষষ্ঠ তলা, কক্ষ নং ৬৪ ও ১৬, কোলকাতা)। কোলকাতা বড় বাজারে বাঙ্গড় বিল্ডিঙে আরো একটি অফিস আছে। কোম্পানির নামে একটি হোন্ডা সিআরবি জিপ গাড়ি আছে। এছাড়া রাজকুমার কোলকাতায় তার শ্যালক গণেশ মুন্দ্রাহ’র সাথে যৌথভাবে হাউজিং ব্যবসা করছেন। ভারত থেকে স্ত্রীর কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশের জন্য পণ্য কিনছেন রাজকুমার। অর্থাৎ নিজেই বিক্রি করছেন এবং নিজেই কিনছেন। অতি সম্প্রতি রাজকুমার গোটা পরিবার আমেরিকায় নাগরিকত্ব পেতে তৎপরতা শুরু করেছেন।

রাজকুমার দম্পতি ২০০৮ সালের ২৪ এপ্রিল কোলকাতার পাঁচতারকা হোটেল তাজ বেঙ্গলে মেয়ে সোনিয়া জালানের বিয়ে দেন। মেয়ের স্বামী কৃষ্ণ কুমার সারাফ,আলিপুর কোলকাতার ব্যবসায়ী। ওই বিয়েতে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা খরচ করেন। এছাড়া,২০১২ সালের ২৬ জুন কোলকাতার পাঁচতারকা হোটেল হায়াত এজেন্সিতে ছেলে জিতেন্দ্রর বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বিয়েতেও প্রায় ১৫ কোটি টাকা খরচ করেন। দুটি বিয়ের আশীর্বাদ হয়েছে কোলকাতার নামি-দামি হোটেলে। রাজকুমারের মোবাইল ফোন নং (ভারতে ৯৮৩০২৫৯০৩২ এবং বাংলাদেশে ০১৮১৯২২২৯৭৭)। টেলিফোন নং (ঢাকার বাসা ০২-৯৮৬৩০৩৪, ০২-৮৮৬০০৭০ এবং কোলকাতার বাসা নং ২২২৯৫৯০৭, ৩২৯৯৬১৯৯)।