আ.লীগ-জামায়াতকে হারিয়ে বিএনপির প্রার্থী মিন্টু শাহ’র জয়লাভ

 

দামুড়হুদা হাউলী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহ সম্পন্ন

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল : উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যদিয়ে দামুড়হুদার হাউলী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীকে হারিয়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী শাহ মিন্টু জয়লাভ করেছেন। ইউনিয়নের ৯ ভোটকেন্দ্রে মোট ৮৩টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হয়। মোট ২৬ হাজার ৬৬২ জন ভোটারের মধ্যে ১৯ হাজার ৭৭২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এরমধ্যে বাতিল হয়েছে ২৬৩ ভোট। মোট ভোটের ৭৪ শতাংশ ভোটার ভোট প্রদান করেছেন। গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে রিটার্নিং অফিসার আবু দাউদ বেসরকারিভাবে চশমা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোহাম্মদ আলী শাহ মিন্টুকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান ও দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান প্রতিটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ ছাড়াও নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ৪জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামাল হোসেন হাউলী ইউনিয়ন পরিষদ ও দুধপাতিলা ভোট কেন্দ্র,সহকারী কমিশনার আনোয়ার সাদাত লোকনাথপুর ও গোবিন্দপুর ভোটকেন্দ্রে সহকারী কমিশনার সরকার অসীম কুমার হাউলী ও বাস্তপুর ভোট কেন্দ্রে এবং সহকারী কমিশনার মো. রুহুল আমিন জয়রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইয়ুথ ক্লাব ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সার্বক্ষণিকভাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন।

নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিতপ্রার্থী মোহাম্মদ আলী শাহ মিন্টু চশমা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৮ হাজার ৩০ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত তালা প্রতীক নিয়ে আবু সাঈদ খোকন পেয়েছেন ৫ হাজার ২৯৯ ভোট ওজামায়াত সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মাইক প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৭৩ ভোট। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী অপর ৪ প্রার্থী ওহিদুজ্জামান আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৭৩৩ ভোট, জাহিদ হাসান দোয়াত-কলম প্রতীকে পেয়েছেন ৫৪৯ ভোট, কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিশান তরফদার পেয়েছেন ৪২২ ভোট এবং নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের টেলিফোন প্রতীকে পড়েছে ৩ ভোট। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিধি অনুযায়ী কাস্টিং ভোটের ৮ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ৪ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

নির্বাচনে মোট ৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে শহিদুল ইসলাম প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন এবং পরবর্তীতে প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও তার নির্বাচনী প্রতীক থেকে যায়। শেষমেশ মোট ৬ জন প্রার্থী এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

রিটার্নিং অফিসার দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু দাউদ জানান, ইউনিয়নের মোট ৯টি কেন্দ্রেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে জয়রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোট সংখ্যা ২ হাজার ১২৪। এরমধ্যে নির্বাচিত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী শাহ মিন্টু পেয়েছেন ৬০৭ ভোট, আবু সাঈদ খোকন পেয়েছেন ৪৯০ ভোট, নজরুল ইসলাম পেয়েছেন ৪৮৫ ভোট, নিশান তরফদার পেয়েছেন ৫৬ ভোট, জাহিদ হাসান ৪০ ভোট এবং ওহিদুজ্জামান পেয়েছেন ৭ ভোট। জয়রামপুর ইয়থ ক্লাব কেন্দ্রে মোট ভোট সংখ্যা ৩ হাজার ৮০৯ । এরমধ্যে মিন্টু শাহ পেয়েছেন ৯২৮ ভোট, নজরুল পেয়েছেন ৯০০ ভোট, খোকন পেয়েছেন ৫৪ ভোট, নিশান পেয়েছেন ২৬৭ ভোট, জাহিদ পেয়েছেন ৪৪ ভোট এবং ওহিদুজ্জামান পেয়েছেন ২৮ ভোট। জয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোট সংখ্যা ৩ হাজার ৮৬৭। এরমধ্যে খোকন পেয়েছেন ১ হাজার ৫২০ ভোট, নজরুল পেয়েছেন ৬২৪ ভোট, জাহিদ পেয়েছেন ৩২৮ ভোট, মিন্টু শাহ পেয়েছেন ২২৮ ভোট, নিশান পেয়েছেন ১৪ ভোট, ওহিদুজ্জামান পেয়েছেন ৩ ভোট এবং নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো প্রার্থী সিরাজ মেম্বার পেয়েছেন ৩ ভোট। হাউলী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় (ডুগডুগি বাজার) ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৮৮৭। এরমধ্যে মিন্টু শাহ পেয়েছেন ৭৩৮ ভোট, খোকন পেয়েছেন ৪৩০ ভোট, নজরুল পেয়েছেন ২৪০ ভোট, জাহিদ পেয়েছেন ২৭ ভোট, নিশান পেয়েছেন ১৮ ভোট এবং ওহিদুজ্জামান পেয়েছেন ৫ ভোট। দুধপাতিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৬৬২। এরমধ্যে মিন্টু শাহ পেয়েছেন ৮৭২ ভোট, খোকন পেয়েছেন ৫৯৬ ভোট, নজরুল পেয়েছেন ৩৮১ ভোট, জাহিদ পেয়েছেন ৫৬ ভোট, নিশান পেয়েছেন ১৬ ভোট এবং ওহিদুজ্জামান পেয়েছেন ১৪ ভোট। লোকনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৯০৪। এরমধ্যে মিন্টু শাহ পেয়েছেন ১ হাজার ৫৫২ ভোট, নজরুল পেয়েছেন ৪৬৮ ভোট, খোকন পেয়েছেন ১১০ ভোট, জাহিদ পেয়েছেন ৮ ভোট, ওহিদুজ্জামান পেয়েছেন ৭ ভোট এবং নিশান পেয়েছেন ৩ ভোট। গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ২৯০। এরমধ্যে মিন্টু শাহ পেয়েছেন ১ হাজার ৪৩ ভোট, ওহিদুজ্জামান পেয়েছেন ৫৯৯ ভোট, খোকন পেয়েছেন ৫৫২ ভোট, নজরুল পেয়েছেন ৩৭৫ ভোট, জাহিদ পেয়েছেন ১৫ ভোট এবং নিশান পেয়েছেন ৭ ভোট। বাস্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ৪২৯। এরমধ্যে মিন্টু শাহ পেয়েছেন ১ হাজার ৪৫৯ ভোট, খোকন পেয়েছেন ৮১৭ ভোট, নজরুল পেয়েছেন ৬২৯ ভোট, ওহিদুজ্জামান ৫১ ভোট, জাহিদ পেয়েছেন ২৫ ভোট এবং নিশান পেয়েছেন ৯ ভোট। হাউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৬৯০। এরমধ্যে মিন্টু শাহ পেয়েছেন ৬০৩ ভোট, নজরুল পেয়েছেন ৩৭১ ভোট, খোকন পেয়েছেন ২৩৭ ভোট, নিশান পেয়েছেন ৩২ ভোট, ওহিদুজ্জামান পেয়েছেন ১৯ ভোট এবং জাহিদ পেয়েছেন ৬ ভোট। তিনি আরো জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিধি অনুযায়ী কাস্টিং ভোটের ৮ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ৪ প্রার্থী যথাক্রমে সিরাজুল ইসলাম, নিশান তরফদার, জাহিদ হাসান ও ওহিদুজ্জামানের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি সিকদার মশিউর রহমান জানান, ইউনিয়নের ৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে পুরাতন বাস্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুধপাতিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জয়রামপুর ইয়থ ক্লাব ওই ৪টি ঝুকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রসহ ৯টি ভোটকেন্দ্রেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি বিজিবি ও ৱ্যাবের একটি টিম সার্বক্ষণিকভাবে টহলে ছিলো।