আলমডাঙ্গা এলাকার একদল উঠতি বয়সী যুবক চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের একটি বেসরকারি ছাত্রাবাস থেকে ছাত্র অপহরণের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছে। ছাত্রাবাস থেকে দিবালোকে ডেকে নিয়ে ছাত্রকে মোটরসাইকেলে উঠতে বাধ্য করা হয়। পার্শ্ববর্তী একটি বাড়ির দোতলায় তোলার সময় ছাত্রের ধস্তাধস্তির দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হলে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন স্থানীয়রা। তারা হাতেনাতে উঠতি বয়সী তিন যুবককে ধরে পুলিশে দেন। আটককৃতদের নিকট থেকে ধারালো অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। অবাক হলেও সত্য যে, উঠতি বয়সী তিন যুবক পুলিশের কাছে যথাযথভাবে তাদের পরিচয় দেয়নি। একজনের বিরুদ্ধে পূর্ব থেকেই সন্ত্রাস সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মামলাও রয়েছে।
শহরের একটি ছাত্রাবাস থেকে দিবালোকে ছাত্র অপহরণের অপচেষ্টার ঘটনাটিকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। আশেপাশে যখন অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, গণহারে মোবাইলফোনে হুমকি ধামকি দিয়ে চাঁদা দাবিসহ নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন রমরমা তখন হাতেনাতে তিনজন আটকের ঘটনা হালকাভাবে দেখা বা নেয়া সন্ত্রাস চক্রের উৎসাহেরই শামিল। আটক তিন যুবকের মধ্যে ইমরান নামের একজন রয়েছে, যার পিতা এক সময় পুলিশ সদস্য ছিলেন। তার বাড়ি থেকে গুলি উদ্ধার করা হয়। ছিনতাইয়ের সাথে সংশ্লিষ্টতারও নজির রয়েছে। তার বিরুদ্ধে পূর্বে উত্থাপিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারলে সে ছাত্রাবাস থেকে ছাত্র অপহরণের মতো সাহস যে পেতো না, তা বলাই বাহুল্য। ধরাপড়ার পরও যদি পুলিশ সদস্যের ছেলে বলে বা অর্থের বিনিময়ে উপযুক্ত আইন প্রয়োগে গড়িমসি করা হয় তা হলে ওই ইমরানই যে এলাকার ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হবে না তা বিশ্বাস করবেন কীভাবে? তা ছাড়া পরিচয় গোপনই শুধু করা নয়, অন্যের পরিচয় ব্যবহার করাও কি গুরুতর অপরাধ নয়? অবশ্যই উঠতি বয়সীদের সুধরে নেয়ার সুযোগ দিতে হয়। দেশে প্রচলিত আইনে সে সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অপরাধের মাত্রা যদি দিন দিন বেড়ে যায়? চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা অপরাধ প্রবণ এলাকা বললে ভুল বলা হয় না। অপরাধ প্রবণ এলাকার ক্ষতিকর প্রবণতা রুখতে আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি সমাজের সচেতন মহলেরও দায় অনেক। অভিভাবকদের দায়িত্ব অপরিসীম। আইন প্রয়োগে গড়িমসি, সচেতনমহলের দায়িত্বহীনতা ও অভিভাবকদের উদাসীনতা সামাজিক শৃঙ্খলা ধুলুণ্ঠিত করে। করছে।
ছাত্রাবাস থেকে ছাত্র অপহরণের অপচেষ্টা সফল হয়নি। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে। অপহরণের পর কী মুক্তিপণ আদায় করা হতো নাকি আরো ভয়ঙ্কর পরিণতি অপেক্ষা করছিলো? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে। উঠতি বয়সী তিন যুবকের সাথে আর কারা জড়িত তাও তদন্তে বের করে আনা দরকার। বহিরাগত তিন যুবক দিবালোকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ছাত্রাবাস থেকে ছাত্র অপহরণ করবে আর তাদের সাথে রাঘববোয়াল থাকবে না তা বিশ্বাস করা যায় না। সুষ্ঠু তদন্তে তাদেরও মুখোশ খুলতে হবে। নিতে হবে আইনের আওতায়। তা ছাড়া পরিচয় আড়াল করে কোনো রকম জামিনে মুক্ত হলেই তো ব্যবহৃত পরিচয়ের যুবক পড়তো বিপাকে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অপরিহার্য।