আজ বেলা ১২টার মধ্যে সকল শীক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ । আগামী ৮সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষনা
ইবি প্রতিনিধি:ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সাথে ছাত্রলীগের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশের ৮ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ছাত্রলীগের ৫ জন। ছাত্রলীগও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আজ সোমবার থেকেলাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ইবি ছাত্রলীগের যুগ্মআহ্বায়ক আবুজার গিফারী গাফফার এ তথ্য জানান।
গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হলেন-শাহীনুর রহমান, রানু ,অনিক, পলাশ ও বিপ্লব। গুলিবিদ্ধদের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল তরিকুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, আমিরুল ইসলাম, জুয়েল, তুহিন ভিক্টর, আনিছুর রহমান, দ্বীপ কুমার আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রলীগ প্রক্টর অফিসসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। রোববার ক্যাম্পাসে শিবিরের মিছিলের প্রতিবাদে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ভাঙচুর এবং উপাচার্য ও উপউপাচার্যের গাড়িতে ভাঙচুরের চেষ্টা চালালে পুলিশ এতে বাধা দিলে ছাত্রলীগ পুলিশের ওপর হামলা করে। ছাত্রলীগের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ আজ সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্রধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশসূত্রে জানা যায়, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করে ছাত্রশিবির। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাধা দিলে শিবির নেতাদের সাথে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের কথা কাটাকাটি হয়। প্রক্টর ড. মাহবুবর রহমান তাদেরকে মিছিল করার অনুমতি না দিয়ে শিবিরের ব্যানার কেরে নেন। পরে শিবির ব্যানার ছাড়ায় মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক প্রদক্ষিণ শেষে অনুষদ ভবনের এসে শেষ হয়। শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে ছাত্রলীগ তাদের দলীয় টেন্টে অবস্থান করছিলো। এসময় ছাত্রলীগের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মিছিল শেষ হলে তারা দলীয় টেন্ট থেকে শিবিরের মিছিলের প্রতিবাদে পাল্টা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এসে পৌঁছুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বাসে ভাঙচুর চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তারা প্রশাসন ভবনের সামনে এসে সেখানে একটি দ্বিতল বাসসহ আরও তিনটি বাসে আরেক দফা ভাঙচুর চালায়। এসময় তারা কয়েকজন শিবির কর্মীকে ধাওয়া দেয়। মিছিল শেষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অনুষদ ভবনে অবস্থিত প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের কার্যালয় ভাঙচুর করে এবং ডায়না চত্বরের পাশে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার এবং উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমানের গাড়িতে ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। উপাচার্য ও উপউপাচার্য টিএসসিসিতে একটি অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ওই সড়ক দিয়ে প্রশাসন ভবনের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় উপাচার্যের গাড়ি দ্রুত গতিতে স্থান ত্যাগ করলেও উপউপাচার্যের গাড়ি পেছনে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগ উপাচার্য ও উপউপাচার্যের গাড়ি লক্ষ্য হামলার চেষ্টা চালালে পুলিশ এতে বাধা দিলে ছাত্রলীগ নেতারা পুলিশের সাথে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এসময় ছাত্রলীগের যুগ্মআহ্বায়ক আবুজর গিফারি গাফফার, সজিবুল ইসলাম সজিব ও ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজুকে পুলিশ সদস্যদের সাথে হাতাহাতিতে করতে দেখা গেছে। এসময় ছাত্রলীগের হামলায় পুলিশের ৫ সদস্য আহত হন। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরে ছাত্রলীগ নেতারা ডায়না চত্বর থেকে চলে এসে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থানরত আরেক পুলিশ সদস্যকে মারধর করেন এবং পুলিশের দিকে তেড়ে আসেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ সদস্যরা ছাত্রলীগকে লক্ষ্য করে অন্তত ১৫ রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করে। এসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রশাসন ভবনের ভেতরে আশ্রয় নেন এবং তাদের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহন হন। এসময় পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় পুলিশ প্রশাসন ভবনের ভেতরে অবস্থানরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করেছেন বলে কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। পুলিশের গুলিতে ধনী নামের পরিবহন অফিসের এক কর্মচারী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্যদিকে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাকিম সরকার ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেছে ছাত্রলীগ। পরে দুপুর সোয়া ২টার দিকে মিছিল শেষে তারা ক্যাম্পাস থেকে বাস চলাচলে বাধা দেয়। এছাড়া ছাত্রলীগের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ আজ সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামীম হোসেন খান এ ধর্মঘটের ডাক দেন।
হামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামীম হোসেন খান বলেন, ‘শিবিরের মিছিলের প্রতিবাদে আমরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করলে পুলিশ এক পর্যায়ে আমাদের বাধা দেয়। এসময় আমাদের কিছু নেতাকর্মী তাদের সাথে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লে পুলিশ অতর্কিতভাবে আমাদের দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এতে ছাত্রলীগের ৫ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে তিনি জানান।’ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আসাদুল্লাহ বলেন, ‘গাজা একটি মানবিক ইস্যু। এ ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে শিবিরের নেতাকর্মীরা তাতে যোগ দেয়। সংঘর্ষ বা ভাঙচুরের সাথে শিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর শরিফুল হক বলেন, ‘পুলিশ ছাত্রলীগের ওপর গুলি চালায়নি। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রো-ভিসির গাড়িতে হামলার চেষ্টা করেছে এবং পুলিশের ওপর বিনা কারণে চড়াও হয়েছে পুলিশ তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছে মাত্র।’ প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগ কেন পুলিশের ওপর চড়াও হলো তা বুঝতে পারছি না। এখন ক্যাম্পাস পরিস্থিতি শান্ত আছে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত) উপাচার্যের বাসভবনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বৈঠক চলছিলো। বৈঠকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার, উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ইবি ছাত্রলীগের যুগ্মআহ্বায়ক আবুজার গিফারী গাফফার জানান, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছিলাম। কিন্তু আমাদের ওপর পুলিশেরগুলিতে ছাত্রলীগের ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এ ঘটনা কেন ঘটেছে, প্রশাসনেরকাছে এর জবাব চাই।তিনি বলেন, এ ঘটনার তদন্ত ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হবে।