মহাসিন আলী: মেহেরপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কবি জারি, সারি আর পালাগান। এ প্রজন্মের সন্তানদের রুচির পরিবর্তনে তারা পশ্চিমা আকাশ সাংস্কৃতির প্রতি ঝুঁকে পড়ায় হারিয়ে যাচ্ছে এসব গান। প্রবীণরা আজও খুঁজে ফেরে এক সময়ের জনপ্রিয় কবি, জারি, সারি আর পালাগান।
একসময় মেহেরপুরের বিভিন্ন জনপদে আসর বসতো কবি জারি, সারি আর পালাগানের। শত ব্যস্ততার মাঝেও মানুষকে আনন্দ দিতে আয়োজন করা হতো এসব গ্রামীণ গানের। গ্রামের চার রাস্তার মোড়, খেলার মাঠ, বটবৃক্ষের নিচসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আয়োজন করা হতো এসব গ্রামীণ গানের আসর। হারমোনিয়াম আর ঢোল-ঢাগর গলায় ঝুলিয়ে করা হতো এসব গান। কবিয়ালদের থাকত না তেমন সাজ। জমকালো কোনো আয়োজনও নয়। প্রচার-প্রচারণাও কম। চার কোণায় চারটি খুঁটির মাথায় টিন তুলে দিয়ে তার নিচে করা হতো এসব গানের আসর। জনেজনে খবর পেতে পেতে আসরের চারপাশ শ্রোতার ভিড়ে তিলঠাঁই জয়গা থাকতো না। এরই মাঝে উপস্থিত শ্রোতারা উপভোগ করতো মা-মাটি আর মানুষের গান। আর অর্জন করতো জ্ঞান।
কিন্তু বর্তমান আকাশ সংস্কৃতি আর আধুনিক বিনোদনের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে এসব জনপ্রিয় গান। পশ্চিমা আকাশ সাংস্কৃতি এ প্রজন্মের শিশু-কিশোর ও যুবক-যুবতীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় এসব গানের আসর আর বসেনা। এক সময় মেহেরপুর জেলার ও বাইরের জেলা থেকে কবিয়ালরা আসতো। প্রতিযোগিতা হতো বিভিন্ন দলের মধ্যে। প্রশ্নবানে জর্জিত করতো একে অপরকে। উপস্থিত সব বয়সের মানুষ জ্ঞানগর্ভ এসব গান উপভোগ করতো।
সম্প্রতি মেহেরপুর শহরের বামনপড়ার একটি আম বাগানে বসেছিলো ঐতিহ্যবাহী কবি গানের আসর। বাংলা সাংস্কৃতির ধারক ও বাহক মেহেরপুর শহরের ঘাটপাড়ার বাসিন্দা তরিকুল মণ্ডলের উদ্যোগে বামনপাড়া সবুজ সংঘের পক্ষ থেকে দরুদ মণ্ডল, তুফান, মনিরুল, ইসলাম খাঁ প্রমুখ ব্যক্তি এ কবি গানের আয়োজন করেন। আমন্ত্রণ পেয়ে কুষ্টিয়া জেলার খলিশাকুণ্ডি গ্রামের কবিয়াল আনারুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা জেলার কবিয়াল লতিব সরকার ও স্থানীয় কবিয়ালরা সেখানে উপস্থিত হন এবং কবি গান পরিবেশন করেন। অনেক দিন পরে দিনব্যাপি এ ধরনের আয়োজনে দর্শকরাও খুশি হন।
মেহেরপুরে কবি গানের ধারক ও বাহক তরিকুল মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, দেশ থেকে সুস্থ্য বিনোদন উঠে গেছে। বর্তমানে বিদেশি বাদ্যযন্ত্রের কান ফাঁটানো শব্দে সুরের নামে অসুর আর গানের নামে চলে কলহল। এতে না আছে মাটির টান; না পারে হৃদয় ছুঁতে। আছে অনেকখানি বেহায়া পানা। বেশি বেশি কবি জারি, সারি আর পালা গানের আসর বসিয়ে সুস্থ বিনোদন ফিরিয়ে আনতে আমাদের মতো প্রবীণদের নতুনভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।