গোশতের হাড় বেঁধেছে গলায়? চিকিৎসা নেই চুয়াডাঙ্গায়!

 

শিশুসন্তানের নাকে ঢোকা কাঁচের গুঁটি অপসারণে দিনভর হয়রান পিতা-মাতা  

স্টাফ রিপোর্টার: গোশতের হাড় বেঁধেছে গলায়? খেলতে গিয়ে শিশু গিলেছে ধাতব টাকা? নাকে ঢুকেছে কাচেঁর গুঁটি? চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার মতো যন্ত্রপাতি নেই। এই সুযোগে হাসপাতালের অদূরবর্তী বেলগাছির আবু বক্কর সিদ্দিক খুলে বসেছেন ব্যবসা। তিনি আর এক ক্লিনিক মালিক ডাক্তার সেজে গতকাল শনিবার ৪ বছরের শিশু বাবলুর নাক থেকে কাঁচের গুঁটি বের করতে গিয়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে পড়েছেন।

শিশুর নাকে ঢুকেছে কাছের গুঁটি। অথচ ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে শিশুর নাক থেকে ভাঙা কাঁচের টুকরো বের করা হয়েছে বলে জানিয়ে দাবিকৃত টাকা আদায়ে উঠে পড়ে লাগেন তারা। দীর্ঘ সময় ধরে চলে বোঝাপড়া। অবশ্য শেষ পর্যন্ত ক্লিনিক মালিক রশিদুল হাসান লিপনের দাবিকৃত ১৬শ টাকা পরিশোধ করেই শিশুকে ক্লিনিক থেকে বাড়ি নিতে পেরেছেন তার পিতা-মাতা। বাড়ি ফেরার সময়ও তারা নিশ্চিত নন খেলতে গিয়ে তাদের সন্তানের নাকের মধ্যে ঢুকে আটকে যাওয়া কাচের গুঁটি (মারবেল) আদৌও বের হয়েছে কি না।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার বড় গাংনীর শহিদুল ইসলামের শিশুসন্তান বাবলু খেলতে গিয়ে গতপরশু শুক্রবার নাকের মধ্যে কাঁচের গুঁটি ঢুকিয়ে কান্না জুড়ে দেয়। রাতভর বাড়িতেই নানাভাবে তা বের করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন পরিবারের সদস্যরা। সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, নাক বা নলির মধ্য থেকে কিছু বের করার মতো যন্ত্র হাসপাতালে নেই। ফলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে হবে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগেরই কেউ কেউ বলেন, বেলগাছির আবু বক্কর সিদ্দিকের কাছে যাও। ওর কাছে যন্ত্রপাতি আছে। হাসপাতালের সামনেই একটি ওষুধের দোকানে বসে থাকে। সেখানে নেয়ার পর আবু বক্কর সিদ্দিক দেড় হাজার টাকা দাবি করেন। তাকে বিশ্বাস না পেয়ে ডা. শাহাদত হোসেনের নিকট নেয়া হয় শিশুকে। তিনি চিকিৎসা দেন। সে চিকিৎসার ওপরও ভরসা পাননি শিশু বাবলুর পিতা-মাতা। কয়েকজনের পরামর্শে শিশুসন্তানকে নেন মদিনা ক্লিনিকে। ক্লিনিক মালিক রামিদুল হাসান লিপন ১৬শ টাকার বিনিময়ে অপারেশন করে কাছের গুঁটি তথা মারবেলটি বের করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এ প্রতিশ্রুতিতে ভরসা পেয়ে শিশু বাবলুকে ক্লিনিকে নেয়া হয়। সন্ধ্যায় ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়।

শিশু বাবলুর মা ময়না খাতুন ও পিতা শহিদুল ইসলাম অভিন্ন ভাষায় অভিযোগ করে বলেন, অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে আবু বক্কর সিদ্দিককে ডাকা হয়। ক্লিনিক মালিক লিপন ও সিদ্দিকসহ দুজন সেবিকা অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে একটি কাচের টুকরো দিয়ে বলেন, এটাই নাকের মধ্যে ঢুকেছিলো। বের করে দিয়েছি। নাকের ঢুকলো কাঁচের গুঁটি, বের করা হলো বোতল ভাঙা কাঁচের টুকরো। এটা আবার কেমন কথা?

নাকের ভেতর থেকে সত্যিই কাঁচের গুঁটি বের করা হয়েছে নাকি নাটক করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে? এ প্রশ্নের সুষ্ঠু জবাব না পেয়ে শিশুর পিতা-মাতা ক্লিনিক মালিককে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। অপরদিকে ক্লিনিক মালিকও নাছড়বান্দা। তিনি শিশুকে ক্লিনিক থেকে বের করতে দেন না। খবর পেয়ে সাংবাদিকসহ স্থানীয় অনেকেই ক্লিনিকে ছুটে যান। ক্লিনিক মালিক নিজে ও আবু বক্কর সিদ্দিক অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে শিশুর নাকের ভেতর থেকে কাঁচের টুকরো বের করেছেন বলে স্বীকার করে বলেন, নাকের ভেতরে যেটা পাওয়া গেছে সেটাই দেখানো হয়েছে। অথচ চুক্তি মোতাবেক টাকা দেয়া হচ্ছে না। রোগী ক্লিনিক থেকে নিতে দেবো কেন? এ নিয়ে দু পক্ষের দীর্ঘক্ষণ চলে বতসা। শেষ পর্যন্ত শিশুর পিতা পকেট থেকে টাকা বের করে দিয়ে শিশুসন্তানকে কোলে তুলে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, সেই সকালে এসেছি। রাত হয়ে গেলো। জানি না, ছেলের সুচিকিৎসা দিতে পারলাম কি না।