লিবিয়ায় যুদ্ধের আগুনের ফুলকিতে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা জাফরপুরের একটি পরিবার

 

 

অভাব ঘুচালেও চরম অনিশ্চয়তায় প্রবাসী আনোয়ার

মাহমুদ কামরান: লিবিয়ায় যুদ্ধ আগুনের ফুলকিতে চুয়াডাঙ্গা জাফরপুরের সবে গুছিয়ে ওঠা একটি পরিবার লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। কয়েকদিন ধরে কেবলই কান্না। এই বুঝি খবর এলো সেখানে থাকা একমাত্র ছেলে আনোয়ার আর নেই। এ শঙ্কায় লিবিয়া প্রবাসী একমাত্র ছেলে আনোয়ারের মা রওশন আরা ও পিতা রজব আলীসহ বোনের কাটছে অনিশ্চয়তার প্রহর।

আনোয়ার হোসেন লিবিয়ায় পাড়ি জমান আজ থেকে ৪ বছর ৮ মাস আগে। প্রথমেই আদম ব্যাপারির বানোয়াট তথ্যে আনোয়ারকে পড়তে হয় সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে। টুরিস্ট ভিসায় লিবিয়ায় পাড়ি জমানোর পর তিন মাসের মাথায় সেখানে তাকে অবৈধ অভিবাসী হতে হয়। লুকিয়ে আড়ালে আবডালে কাজ করে কোনো রকম বেঁচে থাকার এক পর্যায়ে দেখা হয় কুমিল্লা এলাকার অপর এক প্রবাসীর। সে একটি কাজ জুটিয়ে দিলেও বেতনের ৪ ভাগের এক ভাগ দিতে হয় তাকে। এরপরও ভালোই ছিলেন আনোয়ার হোসেন। সম্প্রতি জঙ্গিদের সাথে সরকারি বাহিনীর যুদ্ধে লিবিয়াজুড়েই অস্থির। পুড়ছে বারুদের আগুনে। এ আগুনে আনোয়ার হারিয়েছেন চাকরি। এখন? খেয়ে না খেয়েই কাটছে তার দিন-রাত। বাড়িতে মোবাইলফোনেও কল করে মায়ের দোয়া চাওয়ার মতো অর্থও নেই তার কাছে। ফিরবে কীভাবে? ফিরতে না পারলে এভাবে বাঁচবেই বা আর কতোদিন? এসব প্রশ্নের জবাব নেই। বাংলাদেশ সরকার কী তার মতো অসংখ্য হতভাগ্য প্রবাসীকে দেশে ফেরানোর বিশেষ উদ্যোগ নেবে? জবাব নেই আনোয়ার হোসেনের পিতা-মাতার কাছে। আনোয়ারও জানে না, ভাগ্যে তার কী অপেক্ষা করছে।

আনোয়ার যখন বিদেশে পাড়ি জমান, তখন তার পিতার ওয়েল্ডিঙের দোকানে বসে ওয়েল্ডিঙের কাজটি শিখে নেন। লিবিয়ায় যাওয়ার জন্য যে দালাল ধরে, তাকে দিতে হয় ৪ লাখ টাকা। এ টাকা গোছাতে মাঠের ১৩ কাঠা আর বাড়ির ভিটের কিছু জমি বিক্রি করতে হয়। কিছু জমি বন্দক রেখে ঋণ নিতে হয় ব্যাংক থেকে। কিছু জমি বর্গাও দিতে হয় আনোয়ারের পিতাকে। ছেলে লিবিয়ার কারখানায় কাজ করবে। টাকা পাঠাবে। অভাব ঘুচবে। একদিন দেশে ফিরবে। ধুমধামের সাথে বিয়ে হবে। ছেলের পাঠানো টাকায় ঋণ শোধ হয়েছে। অভাব ঘুচেছে। চকচকে একটি বাড়িও তৈরি করা হয়েছে। এখন বিয়েরই প্রস্তুতি চলছিলো তার। কিন্তু বিধি বাম। লিবিয়ায় যুদ্ধ। সেই যুদ্ধের আগুনের তাপে প্রবাসী আনোয়ারকে তো কর্মহারা করেছেই, তার জীবনও পড়েছে অনিশ্চয়তার মাঝে। আর তার পিতা-মাতাসহ পরিজন? যুদ্ধের আগুনেই যেনো পুড়ে পুড়ে হচ্ছে খাক। কেঁদে কেঁদে শুকিয়ে আসছে অশ্রু।