কীটনাশকের ৩০ ভাগই ভেজাল :বাড়ছে ফসলের উত্পাদন ব্যয়

স্টাফ রিপোর্টার: ফসলের পোকা ও রোগ দমনে বাজারে দেশে বিভিন্ন কোম্পানির যেসব কীটনাশকপাওয়া যায় তার ৩০ ভাগই ভেজাল। ভেজাল কীটনাশক কৃষকের কোন উপকারে আসে না।বাংলাদেশকৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর সমপ্রতি এক গবেষণায় এ তথ্য তুলে ধরেবলা হয়, বাজারের ৩০ শতাংশ কীটনাশকে কার্যকরী উপাদান নেই। শুধু নেই বললে ভুলহবে, স্যাম্পলগুলোতে এই হার ৫০ শতাংশের বেশি। এছাড়া এমনও কীটনাশক পাওয়াগেছে যার মধ্যে কার্যকরী উপাদানের কোন বালাই নেই।

বিএআরসি পরিচালকড. মনিরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, বাজারে প্রাপ্ত কীটনাশকের নমুনাপরীক্ষায় ৩০ শতাংশের মধ্যেই কার্যকরী উপাদান পাওয়া গেছে নির্ধারিত মাত্রারচেয়ে কম। ক্ষেত্র বিশেষ এই হার নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ৫০ শতাংশেরও কম।গবেষণার ফলে স্পষ্ট যে, কীটনাশক ব্যবহারকারী বিপুল সংখ্যক কৃষক নিত্যইপ্রতারিত হচ্ছেন।ড. মনিরুল ইসলাম জানান, আমরা তিন বছর ধরে দেশেরবাজারে বিদ্যমান কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, বালাইনাশকের ওপর এ গবেষণা চালিয়েছি।বিভিন্ন গ্রুপের ৬টি কোম্পানির ৩২টি নমুনা নিয়ে কাজ করেছি।

তথ্যঅনুযায়ী, উত্পাদন পর্যায়ে ফলের ক্ষেত্রে অনুমোদিত মাত্রার ১০ থেকে ১৫ গুণএবং সবজির ক্ষেত্রে অনুমোদিত মাত্রার ১০ গুণ বেশি মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারকরেন কৃষকরা। আমে সাধারণত ১৪টি গ্রুপের বালাইনাশক ব্যবহার হয়। এছাড়া সবজিরক্ষেত্রেও বিভিন্ন গ্রুপের কীটনাশক ব্যবহার হয়।কীটনাশক বিক্রিথেকে বেশি আয়ের জন্য তরল কীটনাশকের সাথে পানি বা অন্য কোনো সহজলভ্য তরলমিশিয়ে পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। এ কারণে কার্যকরী মাত্রা কমে যায়। কৃষকরানির্দিষ্ট পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করে ফল না পেয়ে একই ফসলে আবারো কীটনাশকব্যবহার করেন। এভাবে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এ কারণেআর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। ফলে বাড়ছে আর্থিক ব্যয় আর কমছে ফসলউত্পাদন।পিরোজপুরের ভিটাবাড়িয়ার সবজি চাষি শাহজাহান ও রহমান বলেন, আগে কীটনাশক ভালো কাজ করতো। কিন্তু এখন আগের মতো কাজ করে না। এ কারণে বেশিমাত্রায় কীটনাশক দেই।

তথ্য অনুযায়ী, দেশে কীটনাশক আমদানিরঅনুমোদন দিয়ে থাকে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের কোয়ারেন্টাইন বিভাগ।কীটনাশকে সঠিকমাত্রায় কার্যকরী উপাদান আছে কি-না তা পরীক্ষা করার দায়িত্ব এবিভাগের। এ কারণে এ বিভাগের অধীনে ল্যাবরেটরিও রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষেমাঠ থেকে এ বিভাগ খুব কমই কীটনাশকের নমুনা এনে এর মাত্রা পরীক্ষা করে। তারাকোম্পানি কর্তৃক সরবরাহ করা কীটনাশকের নমুনা পরীক্ষা করে। ফলে কীটনাশকেভেজাল প্রমাণিত হয় না।তবে এ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটিউপজেলাতে আমাদের কর্মকর্তা আছেন। ব্যবসায়ীরা নীতিমালা মেনে বিক্রি করছেকিনা, তা তারা পর্যবেক্ষণ করেন। পরীক্ষার পরে যদি ভেজালের প্রমাণ পাওয়া যায়তাহলে তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেয়া হয়। কিন্তু বিভাগীয় কর্মকর্তাদেরএই বক্তব্যের সাথে বাস্তবের মিল পাওয়া যায় না। বাজারে ভেজাল কীটনাশকেরছড়াছড়ি। পেস্টিসাইড রেগুলেশন অফিসার মুহাম্মদ শাহ আলম বলেন, আমি এখানে নতুনএসেছি। বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।

কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষি প্রধান বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে দেশেবিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল ফসলের চাষ হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল চাষেরপাশাপাশি এর থেকে চাহিদানুযায়ী ফলন পেতে এবং রোগ বালাই দমনের জন্য ব্যবহারহচ্ছে অতিমাত্রায় অপরিকল্পিত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। দেশে বছরে প্রায় ৩৮হাজার টন কীটনাশক ব্যবহৃত হয়।