ক্ষতির প্রবণতাগুলো আগুনের ফুলকির মতোই

 

আত্মহত্যা প্রবণতা ভয়াবহ আকারে ছড়াচ্ছে। রহস্যজনক অপমৃত্যুও বেমালুম ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। একের পর এক রহস্যজনক মৃত্যুর রহস্য রহস্যের আড়ালেই থেকে গেলে সমাজে যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে তা দায়িত্বশীল কেউ বোধ করি অস্বীকার করবেন না। সত্য অস্বীকার করে সমস্যার সমাধান আশা করা অবান্তর।

একজন অসুস্থ মানুষ। অন্যের সহযোগিতা নিয়ে যাকে চলতে হয়। মধ্যরাতে তিনি বিষ পান করেছেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানালেও কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, বিষ পেলেন কোথায়? কে দিলো বিষ? এসব প্রশ্ন তুললেও শেষ পর্যন্ত তারা আইনের পথে হাঁটেননি। লাশ হাসপাতাল থেকে তড়িঘড়ি করে সরিয়ে নেয়া হয়। যে সমাজে ছুঁতোনাতায় নানাভাবে আত্মহত্যার প্রবণতা পেয়ে বসে, সেই সমাজে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা আর কতোটাই বা দায়িত্বশীল হবেন? প্রশ্নটি পুলিশের অপ্রতুলতা পরখে কেউ কেউ উত্থাপন করলেও তা যে সমাজের ভবিষ্যতের জন্য কল্যাণকর নয় তা বলাই বাহুল্য। অপ্রতুলতাই বা আর কতোদিন?

স্বেচ্ছামৃত্যুর সুযোগ আমাদের দেশে প্রচলিত আইনে নেই। প্রতিদিন চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার একাধিক নারী-পুরুষ আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। কেউ কেউ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন, অনেকেরই আর বাড়ি ফেরা হচ্ছে না। ক’জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে? শুধু চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে নয়, সম্প্রতি দেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সিও মাত্রারিক্ত ঘুমের পিল সেবনে আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালান। দেশ জুড়ে পত্রপত্রিকায় ফলাও করে তা প্রকাশও হয়। যেহেতু স্বেচ্ছামৃত্যুর সুযোগ নেই, সেহেতু আত্মহত্যায় অপচেষ্টা চালানো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ এবং যথাযথ তদন্তের প্রসঙ্গটি অমূলক নয়। যদিও কেউ কেউ বলতেই পারেন মরার ওপর খাড়ার ঘা!

অবশ্যই স্বেচ্ছামৃত্যু বা আত্মহননের আড়ালে কিছু না কিছু নিহিত থাকে। সকলেই পেটের যন্ত্রণা বা মস্তিষ্ক বিকৃত রোগে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার আশা না পেয়ে নিরাশায় এ মায়াবি জগত ছাড়তে অস্থির হন না। কোনো কোনো আত্মহত্যার আড়ালে অবশ্যই সুক্ষ্ম প্ররোচণা থাকে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় আত্মহত্যা সংক্রান্ত প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনের একটিতে সে চিত্রই ফুটে উঠেছে। এক নারী তার স্বামী ও শ্বশুরের নির্যাতনের শিকার হয়ে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ। এ অভিযোগেরও কি তদন্ত হওয়া উচিত নয়? আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালানো সকলের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হলে সমস্যার শেকড় মিলবে।

যে হারে আত্মহত্যা প্রবণতা ছড়াচ্ছে তা রোধ করতে না পারলে সমাজের কোনো পরিবারই নিরাপদ থাকতে পারবে না। আত্মহত্যাসহ সমাজের ক্ষতির প্রবণতাগুলো আগুনের ফুলকির মতোই। উড়ে এসে চালে পড়ে। পুড়িয়ে দেয় শান্তির নীড়। সে কারণেই হোক সমস্যার শেকড় উৎপাটনে প্রয়োজন বাস্তবমুখি পদক্ষেপ।