সুস্থ সংস্কৃতির বীজ বপনের সময় বয়ে যাচ্ছে দ্রুত

 

সংযুক্তজাল বা ইন্টারনেট গোটা বিশ্বকে একটি গ্রামে রূপান্তর করেছে। আর আকাশ সংস্কৃতি? পৃথিবীটাকেই বানিয়েছে একটি শহর। তথ্যপ্রযুক্তি তথা যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আর টেলিভিশন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শোবার ঘরে ঢুকে পড়া বিশ্ব সংস্কৃতি দখলে নিতে না পারার বোঝা প্রজন্মের ঘাড়েই পড়ছে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর শিক্ষা বোর্ডের ফল বিপর্যয় তারই পূর্বাভাস? চুয়াডাঙ্গার একটি সহযোগী শিক্ষাদান কেন্দ্রের পরিচালক এরকমই মন্তব্য করে বলেছেন, ইন্টারনেট, মোবাইলফোন আর টেলিভিশনের ধারাবাহিক নাটকগুলো শুধু সময় নয়, শিক্ষার্থীদের উৎকর্ষতাও কেড়ে নিচ্ছে।

এবারের ঈদুল ফিতরে পাখি জামা নিয়ে সারাদেশেই হলুস্থুল কাণ্ড ঘটেছে। উঠতি বয়সী নারীদের প্রথম পছন্দের তালিকার শীর্ষে ছিলো এই জামা। কীভাবে পছন্দের তালিকায় উঠে এলো? আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে পাখি চরিত্রে অভিনয় শিল্পীর সাথেই শুধু পরিচিত হয়নি, তার মাধ্যমে উপস্থাপন করা পোশাক পেয়েছে বিশেষত্ব। যা মতলববাজ ব্যবসায়ীদের সুক্ষ্ম পরিকল্পনারই অংশ। গড়ে নেয়া সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যবসায়ীরা যথাযথভাবেই কাজে লাগিয়েছে। খেসারত হিসেবে বহু কিশোরী, স্কুলছাত্রীর প্রাণ ঝরেছে। চুয়াডাঙ্গার দু প্রান্তের দু কিশোরী ঈদে পছন্দের পাখি জামা না পেয়ে আত্মহত্যা করে। সারাদেশে এরকম আত্মাহুতির সংখ্যা ডজন পার। পোশাকের ক্ষেত্রেই যখন এই অবস্থা, তখন লেখাপড়ার সময় কীভাবে কাড়ছে ওই সব ভিনদেশি সংস্কৃতি? কেন? আমরা আমাদের সংস্কৃতি ওদের মতো করে উপস্থাপনে ব্যর্থ হচ্ছি। আমাদের চ্যানেলগুলো ওরা না দেখলেও আমরা ওদের চ্যানেলগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছি। এটা যে অদূরদর্শিতারই অংশ- তা বোধ করি অস্বীকার করা যায় না।

ইন্টারনেট? অসংখ্য নুডি ওয়েবসাইট রয়েছে। ভিজিটের সুযোগ রোধ করা দুরস্ত, লাইভ চ্যাটিঙের বিজ্ঞাপন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সামনে এমনিতেই ভেসে ওঠে। ওগুলোর দিকেও কর্তাদের দৃষ্টি নেই। অবশ্য দৃষ্টি নেই নাকি অদক্ষতা তথা দৃষ্টিহীনতা তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ বিদ্যমান। অভিভাবকদের অনেকেই অসহায়ের মতো দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে বাধ্য হচ্ছেন, কী করবো আমরা? ছেলে-মেয়েদের ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে বিরত রাখবো নাকি অবাধ করে দিয়ে বিপথগামী হওয়ায় উৎসাহিত করবো? তথ্য প্রযুক্তির বৈপ্লবিক পরিবর্তনের যুগে বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে আমাদের সরকারও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা বাস্তবায়নের পথে। অথচ ইন্টারনেটে বাজে ওয়েবসাইটগুলো দেশে ভিজিটের নূন্যতম উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এর কুফল প্রজন্মের ওপরই পড়ছে। যদি বলা যায়, এসবেরই চরম মূল্য দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের? খুব বেশি ভুল হবে কি? অবশ্যই না। এ কারণেই এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফল বিপর্যয়কে শিক্ষানুরাগী মহল ইন্টারনেটকেও দায়ী করতে ছাড়ছে না।

ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করতে বাধ্য করা মানে মাথাব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলার মতোই। তথ্য প্রযুক্তি পরিহার নয়, বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে তা ব্যবহারে উৎসাহিতই হবে উপযোগী সিদ্ধান্ত। আর আকাশ সংস্কৃতি? পরিহারের অর্থ পুরোনো দিনে ফিরে যাওয়া তথা পিছিয়ে পড়া। অপসংস্কৃতি রুখতে দেশীয় সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নেই। ভিনদেশি চ্যানেলগুলোর মধ্যে ভালো মন্দের গুণ-বিচারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জাতির ভবিষ্যতকে সুপথে রাখতে বা নিতে সহায়ক হবে। বিনোদন মাধ্যমই পারে প্রজন্মের উৎকর্ষতা অক্ষুণ্ণ রাখতে। ধর্মাবতা, সুস্থ ধারার সংস্কৃতির বীজ বপনের সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে।