চুয়াডাঙ্গার কিশোরী কার্পাসডাঙ্গার চুলব্যবসায়ীর মর্মান্তিক মৃত্যু

সাপে কাটা রোগী নিয়ে কবিরাজের ঝাঁড়ফুঁক টানাহেচড়া :বিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি

 

মুস্তাফিজুর রহমান কচি/শরিফ রতন: আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও সাপে কাটা রোগীকে নিয়ে ঝাঁড়ফুঁক গান বাজনা ও টানা-হেঁচড়ার শিকার হয়ে অকাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন কার্পাসডাঙ্গার চুলব্যবসায়ী নুর ইসলাম(৪০)।তার মৃত্যুর জন্য এলাকার সচেতনমহল এক মহিলা কবিরাজের দীর্ঘ সময় ধরে ঝাঁড়ফুঁক নাটককেই দায়ী করেছেন। এদিকে চুয়াডাঙ্গার সুমিরদিয়া কলোনিপাড়ার ১২ বছরের হামিদা খাতুনের সর্প দংশনে মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, সর্প দংশনের শিকার রোগীকে বাঁধন দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে না নিয়ে ওঁঝার ঝাঁড়ফুঁকের ওপর নির্ভর করতে থাকেন রোগীর লোকজন। ঝাঁড়ফুঁক নাটকের ১০ ঘণ্টা পর রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। তখন তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় রোগীর পরিবারের লোকজন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। ভর্তির সময়ই চিকিৎসক বলেন, খুব দেরি হয়ে গেছে। এরপরও সুচিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার সর্বাত্মক চেস্টার প্রতিশ্রুতি মেলে। তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

ঘটনার বিবরণীতে জানা গেছে, দামড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গার কলোনিপাড়ার মৃত ইমান আলীর ছেলে চুলব্যবসায়ী নুর ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ঝিনাইদহের গোয়ালপাড়ায় বসবাস করে আসছেন। গত শনিবার সকালে কার্পাসডাঙ্গার বাড়ি থেকে ঝিনাইদহে যান।সেখানে তিনি তার ভাড়া বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। তাকে বিষধর সাপে বুকের বাম পাশে কামড় দেয়।এতে তিনি চিৎকার দিলে তার নিকটজনেরা দ্রুত ঝিনাইদহ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে সাপের কামড়ের প্রতিষেধক না থাকায় তাকে ফেরত দেয়া হয়। নুর ইসলামের নিকটজনেরা কোনো উপায় না পেয়ে ঝিনাইদহের গোয়ালপাড়া বাজারের ঘোড়ামাড়ার মৃত মকবুল মোল্লার ছেলে কবিরাজ আলী কদরের স্ত্রীর নিকট নেয়া হয় গভীররাতে। শুরু হয় ঝাঁড়ফুঁক মন্ত্রতন্ত্র। রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে মুমূর্ষু অবস্থায় রোগীকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। এসময় চিকিৎসক বলেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে। তবুও দেয়া হয় চিকিৎসা। অবশেষে গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুর ইসলাম। গতকাল বিকেলে কার্পাসডাঙ্গা কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন হয়। তার অকাল মৃত্যুতে এলাকায় গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা সুমিরদিয়া কলোনিপাড়ার হামিদুল ইসলামের মেয়ে হামিদা খাতুন গতপরশু রাতে নিজেদের বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলো। মধ্যরাতে চিৎকার দিয়ে ওঠে। নাকের পাশে আঁচড়ানোর মতো দাগ দেখে নানা সন্দেহ দানা বাধে। রাতেই তাকে হাসপাতালে না নিয়ে সকালে নেয়া হয়। সকাল ৮টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। তখনও সাপে দংশনের বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি। পর্যবেক্ষণের এক পর্যায়ে এন্টিস্নেক ভেনম দেয়া হলেও বেলা ২টার দিকে কিশোরীর মৃত্যু হয়।

হাসপাতালে রোগী নেয়ার পরও কেন মারা গেলো কিশোরী। এ প্রশ্নের জবাবে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল হোসেন বলেন, সকালে রোগী হাসপাতালে নেয়া হলেও সাপে দংশনের বিষয়টি জানানো হয়নি। একেতো হাসপাতালে নিতে বিলম্ব, তারপর চিকিৎসার স্বার্থেই পর্যবেক্ষণে সময়ক্ষেপণ। এ কারণেই শেষ পর্যন্ত কিশোরীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়নি বলে আমাদের প্রাথমিক ধারণা।