চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টি : বজ্রপাতে একই পরিবারের ৪ জনসহ আহত ৯

 

সারাদেশে তিনদিনের প্রায় একটানা বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি

 

স্টাফ রিপোর্টার: শ্রাবনের বিদায় বেলায় বর্ষা ফিরেছে আপন ছন্দে। কখনো হালকা, কখনো ভারি বৃষ্টিপাতে চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বর্ষার মেঘও এবার বজ্রগর্ভ। একের পর এক বজ্রপাতে গতকালও চুয়াডাঙ্গায় কমপক্ষে ৯ জন আহত হয়েছেন। মারা গেছে একটি গরু।

গতকাল বিকেল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। দেশের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে ২২৮ মিলিমিটার। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতকাল চুয়াডাঙ্গায় ৩২ দশমিক ৮ ও সর্বনিম্ন ফেনিতে ২৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আবহওয়া অধিদফতর পূর্বাভাসে জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উত্তরাংশ হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটির বর্ধিতাংশ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র প্রবল অবস্থায় রয়েছে। ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়াগায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আলমডাঙ্গার বেলগাছি পূর্বপাড়ায় বজ্রপাতে একই পরিবারের ৪জন আহত হয়েছে। আহতরা হলেন- মৃত আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী সকিনা খাতুন (৫৫), আব্দুল আলির স্ত্রী নার্গিস বেগম (২৮), তারই ছেলে মানিক (১০) ও মেয়ে মুক্তা খাতুন (১৪) বজ্রপাতে আহত আহত অবস্থায় স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।আলমডাঙ্গা বেলগাছী পোয়ামারী পূর্বপাড়ার আলিমের স্ত্রী নার্গিস(২৫) আহত হন। গতকাল বিকেলে নার্গিস বাড়িতে গৃহকর্ম সেরে উঠোন ঝাড়ুদেয়ার সময় পাশে বজ্রপাত হলে তিনি আহত হন। পরিবারের লোকজন তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে সে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে। অপরদিকে উপজেলার নাগদা গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাক জোয়ার্দ্দারের ছেলে ফারুক জোয়ার্দ্দারের অর্ধ লাখ টাকার একটি গরু বজ্রপাতে মারা গেছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হায়দারপুরের মধুর স্ত্রী আলেয়া খাতুন বজ্রপাতে আহত হয়েছেন। পৃথক বজ্রপাতে তালতলার মসলেম আলীর স্ত্রী আয়েশা খাতুন আহত হলে তাকেও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া আলমডাঙ্গার মাদরহুদার ইসলাম উদ্দীনের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বজ্রপাতে আহত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।       

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর গতকাল শুক্রবার শ্রাবণের শেষ দিনে জীবননগরে অঝোর-ধারায় বৃষ্টি নেমেছে। বিকেল থেকে নামা বৃষ্টি এক নাগাড়ে গভীর রাত অবধি অব্যাহত ছিলো। শ্রাবণের শেষ দিনের এ ভারী বর্ষণের ফলে জীবননগর পৌরসভার নিম্মাঞ্চলসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সেইসাথে ডুবে গেছে ফসলসহ সবজির ক্ষেত। এর ফলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে সবজি চাষিরা।

সারাদেশেগত তিনদিনের প্রায় একটানা বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিপেয়ে বহু গ্রাম-জনপদ প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার ৩২সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। সুনামগঞ্জের সুরমা নদী এবং সিলেটেরসারিঘাটে গোয়াইন নদীর পানিও গতকাল সন্ধ্যায় বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিতহচ্ছিলো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও তথ্য কেন্দ্রের নির্বাহীপ্রকৌশলী আমিরুল হোসেন গতরাতে জানান, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনারপানি সতর্ক অবস্থার কাছাকাছি রয়েছে। আগামী ৫ দিন পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র এবং এসব নদ-নদীর শাখা-প্রশাখায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।