এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণবিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে এরপর উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রতিযোগিতায়লিপ্ত হতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেএবার কোন পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে ভর্তি পরীক্ষা?শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরভোগান্তি কমাতে এবং অর্থ সাশ্রয়ে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছভিত্তিকভর্তি পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। গত বছর ৭ জুলাই শিক্ষামন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের বৈঠকে বেশকয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে সায় দিয়েছিলো।বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভিত্তিকভর্তির বিষয়টি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো,এ ব্যাপারেমন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেয়ার আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ইতোমধ্যেই ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে ফেলেছে। এমনকি অনেকবিশ্ববিদ্যালয় নাকি ভর্তি পরীক্ষার ফরমও বিতরণ করেছে। ফলে গুচ্ছভিত্তিকভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ নেয়ার পথ আর খোলা রইল না। প্রশ্নহলো,সরকারের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে পৃথক পৃথকভাবেভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করলো?এতে ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়েশিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। তাই এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে অবিলম্বে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসা প্রয়োজন।এটা ঠিক, গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা গেলে শিক্ষার্থীদের আর একবিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না। আলাদা ফরমকেনা এবং সময়, শ্রম ও বাড়তি অর্থ প্রদান থেকে রেহাই পাবেন তারা। তবে এসবসুবিধার পাশাপাশি এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন- কোনো শিক্ষার্থী যে কোনোকারণে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় খারাপ করতে পারেন। সেক্ষেত্রেতার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো পরীক্ষা দিয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাথাকে। গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষায় খারাপ করলে তার সেই সুযোগ সীমিত হয়ে পড়বে।তাছাড়া সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা কঠিনও বটে।উল্লেখ্য,গত বছর যশোর এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কর্তৃপক্ষ গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত তাবাস্তবায়ন করতে পারেনি। কাজেই এক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা ও জটিলতাগুলো আগেশনাক্ত করা দরকার। তারপর তা প্রতিকারের উদ্যোগ নিতে হবে। অভিযোগ আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই চান না গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিরবাস্তবায়ন। কারণ পৃথক পৃথক ভর্তি কার্যক্রমের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরাআর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকেন। এ অবস্থায় অধিকাংশ শিক্ষকের সম্মতি এবংবিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃঢ় অবস্থান ছাড়া এপদ্ধতির বাস্তবায়ন অধরা থেকে যাবে বলেই মনে হয়।দেশে মানসম্মতশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই সীমিত। স্বভাবতই সবাই চায় পছন্দেরপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে। ফলে প্রতিবছরই দেখা যায়, গুটিকয় পাবলিকবিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের ভিড় লেগে আছে।দেশে বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কিছু উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় তীব্র আসনসংকট হয়তো দেখা দেবে না। যারা পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না, তারা মানহীন বেসরকারি আর বিদেশি নামধারী বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত শাখাগুলোয়গিয়ে ভিড় করবে। এর প্রভাব পড়বে দেশের সার্বিক উচ্চশিক্ষার মানের ওপর। তাই এপরিস্থিতির অবসান হওয়া জরুরি। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান নিশ্চিত করাগেলে শিক্ষার্থীদের ভর্তিযুদ্ধও অনেকটা কমে আসবে। সরকার উচ্চশিক্ষার মাননিশ্চিত করার পাশাপাশি ভর্তি প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার আওতায় আনবে, এটাই প্রত্যাশা।