চুয়াডাঙ্গা কোর্টকাস্টডির রড কেটে পালানো শাহীন পোড়াদহ থেকে পাকড়াও

 

 

হাজতখানার রডকাটা ব্লেড দেয় ভাবি : সাহস জোগায় হাজতি বড় ভাই

আলম আশরাফ: ছোট বেলা থেকে পালানোয় পটু হাজতি শাহীন চুয়াডাঙ্গার আদালত হাজতখানার বায়ুনিষ্কাশন জানালার গরাদ একদিনে কাটেনি। তাকে পালানার জন্য তার এক ভাবি ঝিনাইদহ পাগলাকানার শারমিন আক্তার ব্লেডটি সরবরাহ করে। ব্লেডটি কোর্ট কাস্টডির টয়লেটের ভেনটিলেটারের রডটি কাটে কয়েক দফায়। যেদিনই তাকে কোটে নেয়া হয়েছে সেদিনই সে টয়লেটে ঢুকে টুক টুক করে কেটেছে রড।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পোড়াদহ থেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর শাহীন এ তথ্য দিয়ে বলেছে, কোর্র্টের হাজত খানা থেকে পালিয়ে সোজা স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরে পোড়াদহে পৌঁছাই। আইলচারার মামা রবিউলের কাছেই ছিলো। মামার অটো চালিয়ে ভালোই কাটছিলো দিন। শেষ পর্যন্ত পালিয়ে থাকা হলো না তার। তাকে আজ বুধবার আদালতে সোপর্দ করা হবে। রিমান্ডেরও আবেদন জানাবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার এসআই খলিলুর রহমান।

শাহীনকে ধরতে যতোটা না মামলার তদন্তকারীর তাগিদ ছিলো, তার চেয়ে ঢের বেশি তাগিদ নিয়েই তাকে আটক করেছে সাময়িক চাকরিচ্যুত পুলিশের ৪ সদস্য। শাহীন পালানোর কারণেই এদেরকে সাময়িক চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরি বাঁচানোর তাগিদ তাদের চোখের ঘুম হারাম করে দেয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল পোড়াদহ বাসস্ট্যান্ড থেকে তাকে আটক করা হয়। আটকে অগ্রণী ভূমিকা রাখা সাময়িক চাকরিচ্যুত এটিএসআই ইছাহক আলী, কনস্টেবল আজিজুল ও তৌহিদ। অপর কনস্টেবল শাহীনও কোর্টহাজত পালানো শাহীনকে ধরতে কম হয়রান হননি।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা গোবরগাড়ার মৃত জালাল উদ্দীনের ছেলে শাহীন পিতাহারা হয় শিশুকালে। তার মা ছায়েরা খাতুন ডিঙ্গেদহে নতুন সংসার পাতেন। শাহীনের আশ্রয় হয় তার ফুফু চোরকোলের জবেদা খাতুনের বাড়ি। বয়স যখন ৬/৭ বছর হয় তখন তাকে দেয়া হয় মেহেরপুর এতিমখানায়। কয়েক বছরে কয়েক দফা সে পালায়। এতিমখানা থেকেই পালানোই পটু শাহীন পথে পথে ঘুরে বিপথগামী হয়ে পড়ে। সর্বশেষ গত বছরের ১৬ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের এতিমখানাপাড়ার রেজাউল হকের বাড়িতে চুরি করতে ঢুকে ধরা পড়ে। তার বিরুদ্ধে চুরি ও হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় সে জেলহাজতে ছিলো। গত ১ জুলাই চুয়াডাঙ্গা আদালতের হাজতখানার টয়লেটের বায়ুনিষ্কাশনের (ভেনটিলেটার) রড কেটে পালিয়ে যায়। কোট কাস্টডিতে কর্মরত এটিএসআই ইছাহক আলীসহ ৩ কনস্টেবলকে সাময়িক চাকরিচ্যুত করা হয়। অবশেষে এক মাস ১২ দিনের মাথায় গতকাল সে ধরা পড়লো কুষ্টিয়ার পোড়াদহ থেকে।

শাহীনকে গতকালই চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নেয়া হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে পালানোর এবং পালানোর কাজে সহযোগীর নাম বলেছে। সে বলেছে, বেশ কিছুদিন আগে এক ভাবি ঝিনাইদহ পাগলাকানাইর শারমিন আক্তার জেলহাজতে রড কাটার ব্লেড দেয়। এটা নিয়ে জেলহাজতের এক বড় ভাইয়ের সাথে আলোচনা করা হয়। তার সাহসে কোর্ট হাজতখানার টয়লেটের ভেনটিলেটারের রড কাটি। শাহীনের বয়স ২০ বছর হলেও গায়েগতরে রুগ্ন হওয়ার কারণে একটি রড কেটেই তার পালানো সহজ হয়। তার সাহস জোগানো হাজতি বড় ভাই অবশ্য পালাতে পারেনি। সেও পালাতে চেয়েছিলো বলে শাহীন গতকাল পুলিশকে জানিয়েছে। বলেছে, হাজতের রড কেটে পালানোর পর সোজা গিয়েছিলাম চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে। ট্রেনে উঠে পোড়াদহে যাই। সেখান থেকে আইলচারার মামা রবিউলের বাড়িতে উঠি। তিনি অটো রিকশা চালাতে দেন। অটো রিকশা চালাচ্ছিলাম। পালিয়ে থাকা হলো না। ধরে আনলো পুলিশ।

হাজতপালানো শাহীনকে ধরতে সময় লেগেছে ১ মাস ১২ দিন। এতোদিনেও হাজতখানা টয়লেটের ভেনটিলেটারের সেই রডটি পুনর্স্থাপন করা হয়নি। এ কারণে ওই হাজতে আসামি রাখা হচ্ছে না। পাশের মহিলাদের হাজতেই পুরুষ আসামি রাখা হয়। পুরুষদের হাজতখানায় মহিলাদের রেখে বাড়তি নজরদারি করতে হয় কোর্ট পুলিশের সদস্যদের। হাজত পালানো শাহীন তো ধরা পড়লো, সাময়িক চাকরিচ্যুত সদসের এখন কি চাকরি ফিরবে? বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেবেন পুলিশ সুপার। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এরকমই মন্তব্য করে বলেছেন, কর্তব্য অবহেলার দায় এড়ানো বেশ কঠিন।